কক্সবাংলা ডটকম(২৬ জুন) :: সরকার করোনা মোকাবেলার জন্য আগামী সোমবার থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এই লকডাউন হবে কঠোর। পুলিশ, বিজিবি`র পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মোতায়ন করা হতে পারে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কাউকেই ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না।
দেশে যখন অর্থবছরের শেষ চলছে, বিভিন্ন বিল এবং আর্থিক লেনদেন চূড়ান্ত করার শেষ সময় ৩০ জুন, সেই সময় এই লকডাউনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অর্থনীতিতে ধুকতে থাকা বাংলাদেশ এই লকডাউনের ফলে একটা বড় ধরনের আর্থিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। এই লকডাউন এমন একটি সময় দেওয়া হচ্ছে যখন কোরবানি ঈদ।
যেখানে বাংলাদেশে কয়েক লাখ খামারি তাদের সারা বছরের রুটি রোজগারের জন্য কোরবানি`র ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এই সময় তারা কোরবানির পশু বিক্রি করে যে লাভবান হন এটি দিয়ে অনেকে সারা বছর চলেন। এরকম কোরবানি ঈদের আগে লকডাউন এই সমস্ত খামারিদেরকে একটা সংকটে ফেলবে। বিশেষ করে পশু কেনাবেচায় একটা অস্থিরতা তৈরি হবে বলেও কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
এই লকডাউন এমন একটি সময় দেওয়া হয়েছে যখন মানুষের মধ্যে নানা রকম আর্থিক সংকট, টানাপোড়েন এবং বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্নআয়ের মানুষ প্রচন্ড সংকটের মধ্যে রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির পাশাপাশি তাদের আয় কমে যাওয়া তাদেরকে এই সংকটের মধ্যে ফেলেছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে যদি শেষ পর্যন্ত কঠোর লকডাউন দেওয়া হয় তাহলে সেটিও কতটুকু কার্যকর হবে সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া আগাম লকডাউন দেওয়ার ফলে মানুষ এখন যে যেভাবে পারছে তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। গত তিন দিন ধরেই এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সরকারের মধ্য থেকে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, লকডাউন দিতেই হবে, করোনা মোকাবেলার একমাত্র পথ হলো লকডাউন এবং লকডাউন ছাড়া আর কোন সমাধান নেই। কিন্তু গত দেড় বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, লকডাউন দেয়ার চেয়ে বরং স্বাস্থ্যবিধি মানাটাই অধিক কার্যকর। কারণ লকডাউনে ত্রিমুখী ক্ষতি হয়। একদিকে লোকজন ঘরে থাকে তাদের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, অন্যদিকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকট হয় গোটা রাষ্ট্রের। আর এ কারণেই অনেকগুলো দেশ এখন লকডাউন থেকে বেরিয়ে এসে স্বাস্থ্যবিধি এবং গণটিকা কর্মসূচির দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে, করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপ হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। যেভাবে বলা হচ্ছে যে প্রতিটি মানুষ যখন ঘরের বাইরে বেরোবে তখন তাকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। তাকে ২০ মিনিট পর পর সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায়ে রেখে কাজ করতে হবে। এই সময় জনসমাগম হয় এমন বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে, ব্যাপক পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে এবং পরীক্ষার পর যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে আলাদা করতে হবে এবং আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছে তাদেরকে আইসোলেশনে নিতে হবে।
আর তৃতীয় ধাপের কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গণটিকা কর্মসূচি। যেভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করোনা মোকাবেলা করেছে, সেটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ব্যাপকভাবে জনগণের মধ্যে টিকা প্রদান করা হলে করোনা হবে হয়তো কিন্তু সেই করোনা প্রাণঘাতী হবে না এবং সেটি সাধারণ সর্দি জ্বরের মতেই হবে।
আর এই তিনটি ধাপের অনুসরণ করেই একটি দেশে করোনা মোকাবেলা করতে হয়। আর এ কারণেই বিশ্বে অনেকগুলো দেশে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লেও তারা লকডাউনের পথে যাচ্ছে না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরন ব্রাজিল। যেখানে করোনায় যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে, আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে ব্রাজিল অন্যতম। কিন্তু ব্রাজিল লকডাউনের পথে না গিয়ে সামাজিক বিধিনিষেধের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, কম জনসংখ্যা অধ্যুষিত ও উন্নত দেশগুলোই কেবল লকডাউনে যাচ্ছে যেমন অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড ইত্যাদি। তারা জানে যে তাদের কিছু দিন লকডাউন থাকলেও তারা তেমন আর্থিক সমস্যা হবে না। তাছাড়া ওই সমস্ত দেশের মানুষেরা প্রত্যেকেই লকডাউনের সময় তাদের চাহিদা অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। যেটা বাংলাদেশে দেওয়া সম্ভব নয়।
আর এরকম বাস্তবতায় লকডাউন বা শাটডাউন দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে নাকি জনগণ এইসব লকডাউন শাটডাউনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে এবং তারা অমান্য করে রাস্তায় নেমে যাবে সেটি এখন দেখার বিষয়।
Posted ৭:১৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৬ জুন ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta