হেলাল উদ্দিন,টেকনাফ(১৩ জুন) :: টেকনাফ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক টিটু চন্দ্র শীল। অনেক দিন ধরে অসুস্থ, তারপরও নিয়মিত অফিস করেছি। অফিসে থাকলে মনে হয়, নিজের পরিবারকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছি।
কিন্তু দিন দিন ক্লাম্ত অনুভব করছি। আজ সত্যি সত্যিই ক্লান্ত!! কোভিড-১৯ নমুনা দিয়েছিলাম গত ৯ জুন মঙ্গলবার।
কত অনুন্নয়-বিনুন্নয় করেও দ্রুত পরীক্ষা করাতে পারিনি। আজ সত্যি- সত্যিই ফলাফল হলো– ফলাফলে যা হবার তাই হয়েছে। কিন্তু কোনো দুঃখ নেই।
তারপরও বলবো-এই প্যান্ডোমিক সময়ে ফলাফলগুলো দ্রুততার সঙ্গে দিলে ভালো হয়।
হাসপাতালে আরও দুজন চিকিৎসক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। গত চারদিন ধরে একজনের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। তারা দুজনেই বাসায় আসোলেশনে রয়েছেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার ও পাল্স অক্সিমিটার দিয়ে রেখেছি। এরমধ্যে আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক ১০১ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে কাতরাছেন । কি করবো, বুঝতে পারছি না। এতোদিন ফলাফল আসার পূর্বে অফিস করেছি। কিন্তু এখন !
আমি আক্রান্ত হয়েছি খবর পেয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ অবাগ। জেলা কর্মকর্তা বললেন , আমাকে দেখতে আসবেন-তাতেই মনে হলো অর্ধেক অসুখ ভালো হয়ে গেছি।
এভাবে সাহস দেওয়া জন্য আমার পরিবারের (অফিসের) লোকজনের ছুটাছুটি দেখতেই মনে হলো- সত্যিই আমি আমার পরিবার ( অফিস) কে সঠিকভাবে ভালোবাসতে পেরেছি।
তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না । বরং সকলকে বুকে নিয়ে আরও কিছুদিন সেবা করার শক্তি দাও প্রভু! আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য সকলের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
দোয়া করবেন, পূনরায় যেন মানব সেবায় নিয়োজিত হতে পারি।হাসপাতালের নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ পর্যন্ত সর্বমোট ৫ জন ডাক্তার আক্রান্ত হলো। তাদের মধ্যে ৩জন সুস্থ হয়েছে। ২ জন চিকিৎসাধীন আছেন।
কোভিড- ১৯ বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী একটি ভাইরাসের নাম করোনাভাইরাস। যখন বাংলাদেশ মোকাবেলার প্রস্তুতি চলছিল। তখনই টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক টিটু চন্দ্র শীলের নেতৃত্বে দুইটি চিকিৎসক দল গঠন করা হয়েছিল ।
একটি নেতৃত্বে ছিলেন টিটু চন্দ্র শীল ও অপরটি নেতৃত্বে রয়েছেন মেডিকেল কর্মকর্তা চিকিৎসক প্রণয় রুদ্র। পাশাপাশি উপজেলার ৯ জন চিকিৎসক ১৬ জন সেবক-সেবিকার মাধ্যমে টেকনাফ উপজেলার সাড়ে চার লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াই। শুরু থেকেই উপজেলার কোনো অধিবাসীর যাতে করোনা পজিটিভ না হয় সে জন্য দিনরাত কাজ করেছেন। যাকে “অকুতোভয় স্বাস্থ্য শ্রমিক’ হিসেবে উপাধি দেওয়া হয়।
তিনিই আজ করোনা পজিটিভ। এরই মধ্যে তিনি চিন্তিত হয়ে বললেন, আমার বিষয় নিয়ে আমি কোন ধরনের চিন্তাই নেই । তবে একটি চিন্তায় আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। যে উপজেলার সাড়ে ৪ লাখ মানুষ আমার উপর ভরসা করে রয়েছে। আমি কি তাদের পাশে থাকতে পারব। যে ব্যক্তি নিজে আক্রান্ত হওয়ার পরও উপজেলাবাসীর চিন্তায় মগ্ন। তিনি সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
Posted ২:০৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৩ জুন ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta