কক্সবাংলা রিপোর্ট(৩ জুন) :: প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে কক্সবাজার জেলায় প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। জেলায় বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত জন আক্রান্ত হচ্ছেন। গত ১০দিনে শনাক্ত হওয়া ৫০৩ জনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এমনটাই দেখা গেছে। গত ২৪ ঘন্টা সহ ২ এপ্রিল থেকে দুই মাসে কক্সবাজার জেলায় আক্রান্তের দিক দিয়ে ১ হাজারের ঘরে পা দিতে যাচ্ছে প্রাণঘাতি এ ভাইরাসটি।এছাড়া জেলায় করোনাক্রান্ত মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৯ জনে।
এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কক্সবাজার জেলা সহ পুরো দেশকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন- এই তিন জোনে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যেসব এলাকায় করোনার সংক্রমণ বেশি সেসব এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। ওই এলাকার লোকদের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে এবং বাইরে থেকেও রেড জোনে লোকদের প্রবেশ সীমিত করার উদ্যোগ নেবে সরকার।
আর যেসব এলাকায় করোনার সংক্রমণ ‘রেড জোন’র চাইতে কম, সেসব এলাকাকে ‘ইয়েলো জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে আক্রান্তদের ঘরবাড়ি লকডাউন করে সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানো হবে।
অন্যদিকে, যেসব এলাকায় এখনও করোনা রোগী পাওয়া যায়নি, ‘গ্রিন জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় যাতে বাইরের কেউ ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে, ‘রেড-ইয়েলো-গ্রিন’ এর মধ্যে কোন জোনে কক্সবাজারের অবস্থান- তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। দ্রুত এ নিয়ে জরিপ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানালেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান।
তিনি বুধবার (৩ জুন) বিকাল ৫টায় কক্সবাংলা-কে বলেন, প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে তবে দ্রুত শেষ করা হবে। জরিপটি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী এবং জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় করা হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে রিপোর্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
কক্সবাজার ‘রেড-ইয়েলো-গ্রিন’ এর মধ্যে কোন জোনে পড়তে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রেড হওয়ার তো সম্ভাবনাই বেশি। তবে সবজায়গায় রেড জোন হবে না। কারণ- করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-চট্টগ্রাম থেকে এখনও কম আছে কক্সবাজারে। তাই কিছু এলাকা ‘ইয়েলো জোনে’ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল থেকে ৩জুন পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনার হটস্পট সদর উপজেলায় আক্রান্ত এবং মৃত্যূ সবচেয়ে বেশি। এখানে মোট আক্রান্ত‘র সংখ্যা ৪১৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২৩ জন। এছাড়াও দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চকরিয়া উপজেলায় ১৮৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১১২জন। আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে উখিয়া।এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৩৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২৫জন। এর পরে রয়েছে রামুতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৩জন। পেকুয়ায় পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২৬জন,মহেশখালীতে পর্যন্ত আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৩৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৯ জন,টেকনাফে পর্যন্ত আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৪৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৮জন এবং কুতুবদিয়ায় পর্যন্ত আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে,২ জুন পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের আইসোলেশন(নিভৃতবাস) ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন ৩৩৭ জন কভিড-১৯ রোগী এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২১৬ জন। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে অবস্থান করছেন ১ হাজার ১১০ জন এবং ছাড়পত্র পেয়েছেন ২২৯৮ জন। প্রাতষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইনে রয়েছেন ২২০ জন এবং ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৮৩জন। এ পর্যন্ত জেলায় আর মারা গেছেন ১৯ জন কভিড-১৯ রোগী।এর মধ্যে সদরে ১৫ জন,চকরিয়ায় ৩জন এবং রামুতে ১ জন।
কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা.আবু তোহা জানিয়েছেন,এ পর্যন্ত ২৯ রোহিঙ্গা করোনা পজিটিভ হয়েজন।এর মধ্যে মারা গেছেন ১জন। আর রোহিঙ্গা আইসোলেশন ইউনিটে ৩০ জনের অধিক ভর্তি রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (১ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিদিন টেস্ট বাড়ছে, রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এই প্রবণতা রোধ করতে হবে। এর জন্যই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী আমরা একটা প্ল্যান (পরিকল্পনা) তৈরি করে দেবো। প্ল্যানটা এখানে নীতিগতভাবে আলোচনা হয়েছে। প্ল্যানটা সিটি করপোরেশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মিলে বাস্তবায়ন করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ‘জোন’ ভাগ করা হবে। যে জোনে সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হবে, সেই এলাকাটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ থাকবে। বিশেষজ্ঞরা যেভাবে পরামর্শ দেবেন আমরা সেভাবে কাজ করবো। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কোন এলাকা কোন জোনে পড়বে তা নির্ধারণ করবেন বিশেষজ্ঞরা।
Posted ৮:১৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৩ জুন ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta