কক্সবাংলা ডটকম(৯ জুলাই) :: ব্রাজিলে যখন করোনার সংক্রমণ ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, করোনা নিয়ন্ত্রণের কোন পথনির্দেশ পাওয়া যাচ্ছিল না -সে সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন এটাকে কোভিড ব্ল্যাকহোল। কোভিড ব্ল্যাকহোল হয় মূলত একাধিক কারণে। প্রথমত, যখন করোনার সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং সামাজিক সংক্রমণের হটস্পট হয়ে যায় একাধিক, বোঝা যায়না যে কোথা থেকে করোনার এই সামাজিক সংক্রমণ উৎসারিত হচ্ছে। জনগণ যখন স্বাস্থ্যবিধি মানেনা এবং ঘরে থাকে না, ফলে সামাজিক সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। মৃদু উপসর্গ নিয়ে যখন মানুষ প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করে এবং উপসর্গের কথা গোপন রাখে, আক্রান্ত হয়ে অনেকে যখন তথ্য গোপন করে -এরকম একটি পরিস্থিতিকে বলা হয় করোনার ব্ল্যাকহোল।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, করোনার ব্ল্যাকহোল হলে এটি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য থাকে, এটির কোন চূড়ান্ত সীমা থাকে না। মৃত্যুর পরিসংখ্যানও একসময় বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। কারণ সঠিক পরিসংখ্যান দেওয়া সম্ভব হয় না। আক্রান্তের সংখ্যাও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায় এবং সঠিক আক্রান্তের পরিসংখ্যানও পাওয়া যায়না। করোনা ব্ল্যাকহোলে সবচেয়ে বেশি যেটি হয় সেটি হল যে, নীরবে-নিভৃতে মানুষ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে, পুরা দেশে সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, একমাত্র হার্ড ইমিউনিটির মাধ্যমেই এই ব্ল্যাকহোল বা অন্ধকার গহ্বর থেকে মানুষ মুক্তি পায়। এখন যদি বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি দেখা যায় তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, বাংলাদেশে কি করোনা সংক্রমণের ব্রাজিলের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে? যদিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যে আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা তা ব্রাজিলের ধারে কাছেও নেই। বরং ব্রাজিলের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা অনেক ভালো। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, যেভাবে ব্রাজিলে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ঠিক সেভাবে বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না।
পরীক্ষা কম হলেও বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত করোনায় ভয়ঙ্করভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া দেশগুলোর তুলনায় মৃত্যুর হার অনেক কম। এর পিছনে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একাধিক কারণে দেখছেন। তা হলো, বাংলাদেশ তরুণ অধ্যুষিত একটি দেশ। এখানে জনগোষ্ঠীর ৩৫ শতাংশই তরুণ। তরুণরা করোনায় আক্রান্ত হলেও মারা যায় কম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের বেশিরভাগই পঞ্চাশোর্ধ। কাজেই, বয়সটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এজন্য বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বাড়লেও এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ব্রাজিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্য বা ইউরোপের দেশগুলোর মত হয়নি। কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা কম হওয়ার কারণে মানুষ এখন পর্যন্ত করোনা কে উপেক্ষা করছে বলে মনে করেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। তারা মনে করছেন যে, এখন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়েনি জন্য ভবিষ্যতে বাড়বে না এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। বরং আমারা যদি দ্রুত প্রস্তুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে করতে না পারি তাহলে সামনে হয়তো মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যেতেও পারে।
তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এখন করোনার ব্ল্যাকহোল বা অন্ধকার গহ্বর থেকে মুক্তির জন্য সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা মনে করছেন যে, এখন ব্যাপকভাবে করোনা পরীক্ষাই একমাত্র পথ। পরীক্ষা, পরীক্ষা, পরীক্ষা -এটির মাধ্যমে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরকে চিহ্নিত করা, আক্রান্তের সাহচর্যে যারা এসেছেন তাদেরকে আলাদা করে সামাজিক সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে, এখন করোনার সঙ্গে বাঁচার আরেকটি উপায় হলো মাস্ক ব্যবহার করা, মাস্ক ব্যবহার করা এবং মাস্ক ব্যবহার করা। তারা মনে করছেন যে, স্বাস্থ্যবিধি যদি পুরোপুরিভাবে মানানো যায় দেশের জনগণকে এবং জনসমাগমগুলো এড়ানো যায় তাহলেই বাংলাদেশ করোনার অন্ধকার গহ্বরে প্রবেশ করবে না। যদি সেটি না করতে পারি তাহলে বাংলাদেশ অচিরেই করোনার অন্ধকার গহ্বরে বা ব্ল্যাকহোলে প্রবেশ করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনায় একদিনে রেকর্ড ২১২ জনের মৃত্যু
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২১২ জন। দেশে মহামারিকালে একদিনে এত মৃত্যু এই প্রথম দেখলো বাংলাদেশ। এর আগে গত ৭ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ২০১ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। তার পরদিন গতকাল ৮ জুলাই ১৯৯ জনের মৃত্যুর কথা জানালেও আজ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মৃত্যুর সংখ্যা নতুন রেকর্ড করলো।
শুক্রবার (৯ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২১২ জনকে নিয়ে দেশে সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত মৃত্যু ১৬ হাজার পার হলো। সরকারি হিসাব বলছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার চার জনের মৃত্যু হলো।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে ১১ হাজার ৩২৪ জনের সংক্রমণের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এদের নিয়ে দেশে ১৬ মাসের মহামারিকালে রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেলো। দেশে সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেন ১০ লাখ ৫৪৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টার শনাক্ত হওয়া ১১ হাজার ৩২৪ জনকে নিয়ে দেশে টানা চতুর্থ দিনের মতো শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১১ হাজারের ওপরে থাকছে।
এর আগে গতকাল (৮ জুলাই) শনাক্ত ১১ হাজার ৬৫১ জন, যা এখন পর্যন্ত মহামারিকালে একদিনে সর্বোচ্চ। এর আগে ৭ জুলাই ১১ হাজার ১৬২ জন, আর তার আগের ২৪ ঘণ্টায় গত ৬ জুলাই শনাক্ত হয়েছিলেন ১১ হাজার ৫২৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ছয় হাজার ৩৮ জন। তাদের নিয়ে দেশে করোনা থেকে সুস্থ হলেন আট লাখ ৬২ হাজার ৩৮৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ আর এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ১৯ শতাংশ আর মৃত্যুর হার এক দশমিক ৬০ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ৩৯ হাজার ২০৯টি আর পরীক্ষা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৮৬টি। দেশে এখন পর্যন্ত করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬৯ লাখ তিন হাজার ২৬৮টি। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে ৫০ লাখ ৪৯ হাজার ২০৩টি আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬৫টি।
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২১২ জনের মধ্যে পুরুষ ১১৯ জন আর নারী ৯৩ জন। দেশে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে পুরুষ মারা গেলেন ১১ হাজার ২৫৪ জন আর নারী চার হাজার ৭৫০ জন।
এদের মধ্যে ষাটোর্ধ রয়েছেন ৯০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪০ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে সাত জন আর ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে দুই জন।
২১২ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের আছেন ৫৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ২৬ জন, রাজশাহী বিভাগের ২৩ জন, খুলনা বিভাগের ৭৯ জন, বরিশাল বিভাগের পাঁচ জন, সিলেট বিভাগের ছয় জন, রংপুর বিভাগের ১২ জন আর ময়মনসিংহ বিভাগের আট জন।
২১২ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ১৬০ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৩৬ জন আর বাড়িতে ১৬ জন।
Posted ১০:৩৪ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৯ জুলাই ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta