কক্সবাংলা রিপোট :: চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ইয়ি বলেছেন,কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে ফেরত নেওয়া হবে বলে সম্প্রতি মিয়ানমার আবারও চীনকে আশ্বস্ত করেছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের সাথে টেলিফোনে আলাপকালে এ কথা বলেন।
ওয়াং বলেন, চীন রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে রোহিঙ্গাদের যাতে ফেরত নেওয়া যায় সে লক্ষ্যে মিয়ানমার কাজ করবে বলে চীনকে তারা জানিয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনকে মিয়ানমার জানিয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তারা বাংলাদেশের সাথে দ্রুত আলোচনা শুরু করবে। মিয়ানমারের নির্বাচনের পর প্রথমত রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মন্ত্রী পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে ড. মোমেনকে আশ্বস্ত করেন ওয়াং।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ঢাকায় প্রস্তুতিমূলক সিনিয়র কর্মকর্তা পর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক দ্রুত শুরু করার ওপর জোর দেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রোহিঙ্গাদের জন্য ৯৬০ কোটি টাকা দিচ্ছে ইইউ
এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৯৬ মিলিয়ন ইউরো (৯৬০ কোটি টাকা) সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মানবিক, উন্নয়ন সহযোগিতা ও সংঘাত রোধে চলতি বছর এ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার সংকট ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কমিশনার জ্যানেন লেনার্সিক।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জরুরি মানবিক সহায়তার জন্য অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ইইউর সহায়তার অর্থ খরচ করা হবে।
এ অর্থের মধ্যে কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং রাখাইন রাজ্যে স্থানীয়ভাবে বাস্তুচ্যুতদের স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তন ও সামাজিক স্থিতিশীলতা জোরদারের জন্য ৩৯ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ রয়েছে। এ ছাড়া এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা, শান্তি বজায় রাখা এবং সংঘাত রোধের জন্য সাহায্য হিসেবে সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেওয়া হবে।
মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর জোট ওআইসির সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা সংক্রান্ত মামলায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিয়ে গাম্বিয়ার পাশে থাকতে মিশরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
গতকাল মিশরের রাষ্ট্রদূত ওয়ালিদ আহমেদ সামসেলদিন বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে গেলে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মিশরের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে দেশটির রাষ্ট্রদূত নিশ্চিত করেছেন।
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ ও মিশরের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং এক্ষেত্রে দু’দেশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন ড. মোমেন। তিনি মিশরকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ বাংলাদেশিদের মিশর কাজে লাগাতে পারবে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। ড. মোমেন বাংলাদেশে পেট্রো- কেমিক্যাল শিল্প স্থাপনের অনুরোধ করলে এ বিষয়ে মিশর আগ্রহী বলে জানান রাষ্ট্রদূত। এ সময় মিশরের দূত জানান, সে দেশের আলেকজান্দ্রিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশের দু’জন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছেন।
মিশরের পিয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে বলে ওয়ালিদ আহমেদ সামসেলদিন উল্লেখ করেন। এ সময় দু’দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সফর বিনিময়ের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তি মতে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৩ সালের মিশর সফরের কথা স্মরণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেই বিবেচনায় ভ্রাতৃপ্রতিম দু’দেশের সম্পর্কের ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে। মিশরে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার সুযোগ আছে। ঢাকায় আগামী ডি-৮ সম্মেলনে মিশরের প্রেসিডেন্টের অংশগ্রহণ বিষয়ে আলোচনা হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
Posted ৩:২০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta