কক্সবাংলা ডটকম(১৪ মে) :: করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯’ (কভিড-১৯)-এ আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৪৪ লাখের বেশি। এই তথ্যের সঙ্গে একটি সতর্কবার্তাও আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) বলেছে, করোনাভাইরাস সম্ভবত কখনোই পুরোপুরি নির্মূল হবে না; একে সঙ্গে নিয়েই বেঁচে থাকা শিখতে হবে মানবজাতিকে। অবশ্য একটি স্বস্তির খবর দিয়েছে ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইউএমএ)। সংস্থাটি বলেছে, আগামী এক বছরের মধ্যেই করোনাভাইরাসের কয়েকটি টিকা (ভ্যাকসিন) হাতে চলে আসবে।
এদিকে করোনাভাইরাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ‘রাজনীতি’ অব্যাহত আছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অভিযোগ তুলেছেন, করোনার টিকা তৈরির মার্কিন গবেষণাপত্র চুরির চেষ্টা করছে চীনের হ্যাকাররা। যদিও বেইজিং এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মৃত্যু তিন লাখ ছাড়াল : সংক্রমণ শুরুর প্রায় সাড়ে চার মাসের মাথায় বিশ্বের অন্তত তিন লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল করোনাভাইরাস। দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু গুনতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে; প্রায় ৮৬ হাজার। অঞ্চল হিসেবে সবচেয়ে মৃত্যু হয়েছে ইউরোপে। সেখানে করোনায় অন্তত এক লাখ ৫৭ হাজার ৭৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরপর আছে উত্তর আমেরিকা। সেখানে মৃতের সংখ্যা ৯৫ হাজার ৭৭০। এশিয়ায় প্রাণ গেছে ২৩ হাজার ৪০৯ জনের। দক্ষিণ আমেরিকায় এই সংখ্যা ১৯ হাজার ১২১। আফ্রিকায় মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৫০৮ জনের। ওশেনিয়া অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে কম, ১১৯। গত দুই মাসের মধ্যে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে কম ছিল ১৫ মার্চ, ৬৯১ জন। সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় ১৭ এপ্রিল, আট হাজার ৪২৯ জনের। তিন লাখের মধ্যে দুই লাখের মৃত্যু হয়েছে গত পাঁচ সপ্তাহে।
করোনা সম্ভবত থেকেই যাবে : ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে গেলে লকডাউন থেকে বেরিয়ে বিশ্ব-অর্থনীতি পুনরায় গতি ফিরে পাবে—এমন একটা আগামীর অপেক্ষায় রয়েছে মানুষ। কিন্তু এর মধ্যে হতাশার কথা শুনিয়েছে ডাব্লিউএইচও। বুধবার জেনেভায় সংস্থাটির জরুরি বিভাগের প্রধান মাইকেল রায়ান বলেন, ‘আরেকটি ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাস আমাদের সমাজে চিরদিনের জন্য থেকে যেতে পারে। সম্ভবত এটি কোনো দিনই পুরোপুরি নির্মূল করা যাবে না। যেমন এইচআইভিকে করা যায়নি। আমরা একে সঙ্গে নিয়েই বসবাস করছি।’
এক বছরের মধ্যেই টিকা মিলবে : আগামী এক বছরের মধ্যে করোনাভাইরাসের কয়েকটি টিকা মিলবে বলে জানিয়েছে ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইউএমএ)। বর্তমানে করোনাভাইরাসের শতাধিক টিকা তৈরির প্রকল্প চালু রয়েছে। এসব প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এই তথ্য জানিয়েছে ইউএমএ। সংস্থাটির ভ্যাকসিন স্ট্র্যাটেজি বিভাগের প্রধান মারকো কাভালেরি বলেন, ‘সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক এগোলে আগামী এক বছরের মধ্যেই আমরা কয়েকটি টিকা হাতে পেয়ে যাব। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে, সব টিকাই হয়তো অনুমোদন পাবে না।’
দেশে দেশে করোনাচিত্র : যুক্তরাষ্ট্র এখনো করোনাভাইরাসের ‘হটস্পট’ হিসেবে রয়ে গেছে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ। রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লাখ ছাড়িয়েছে। তবে ১০ দিন পর দেশটিতে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে নেমেছে। আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীনে গতকাল শনাক্ত হয়েছে তিনজন। গতকালের ৭১ জনসহ ইরানে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৮৫৪ জনে। পাশের দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ছুঁই ছুঁই। মৃত্যু হয়েছে অন্তত আড়াই হাজার মানুষের।
সার্বিক পরিস্থিতি : ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, ১৪মে বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৪ লাখ ৮৫ হাজার ২০৪ জন। মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ৬১৮ জনের। সুস্থ হয়েছেন ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ৩১৫ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ২৪ লাখ ৯৭ হাজার ২৭১ জন। তাঁদের মধ্যে মৃদু উপসর্গ রয়েছে ২৪ লাখ ৫১ হাজার ৪২৭ জনের (৯৮ শতাংশ)। বাকি ৪৫ হাজার ৮৪৪ জনের (২ শতাংশ) অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া বিশ্বের প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৫৭৩ জন। বৈশ্বিক মৃত্যুর হার ৬.৭০ শতাংশ।
সূত্র : বিবিসি, এএফপি।
Posted ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৫ মে ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta