শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

করোনা মহামারিতে নজিরবিহীন এবারের হজ : আগামী বছর অগ্রাধিকার পাবে নিবন্ধিতরা

বুধবার, ২৪ জুন ২০২০
174 ভিউ
করোনা মহামারিতে নজিরবিহীন এবারের হজ : আগামী বছর অগ্রাধিকার পাবে নিবন্ধিতরা

কক্সবাংলা ডটকম(২৩ জুন) :: ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ (হে আল্লাহ, আমি হাজির)—গত বছর প্রায় ২৫ লাখ মুসল্লির এই ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়েছিল মক্কার আরাফাতের ময়দান। ঠিক এক বছরের মাথায় এবার পবিত্র হজে মুসল্লির সংখ্যা কমে হাজারের নিচে নামছে। মহামারি, রাজনীতি ও সংঘাতের কারণে অতীতে যে হজ স্থগিতের রেকর্ড নেই, এমন নয়। তবে ১৯৩২ সালে সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পর কখনো হজ বাতিল হয়নি।

১৭৯৮ সালে হজ স্থগিতের ২২২ বছর পর আবারও তার পুনরাবৃত্তি হয় কি না তা নিয়ে জোরালো শঙ্কা ছিল। তবে সেই শঙ্কাকে পেছনে ফেলে খুবই সীমিত পরিসরে হজ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব।

সৌদি হজবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি, ভ্যাকসিন না থাকা এবং বিদেশ থেকে আসা বিপুলসংখ্যক হজযাত্রীর বিশাল জমায়েতে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তারা এ বছর সীমিত পরিসরে হজ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

হজ নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে গত সোমবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে ফোন করেছিলেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সউদ। তিনি জানিয়েছেন, কভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতির কারণে এ বছরের হজ প্রথাগতভাবে হবে না। সীমিতসংখ্যক মুসলিমকে এ বছর হজ পালনের সুযোগ দেওয়া হবে। সৌদি নাগরিক ও বিদেশি মিলিয়ে এ সংখ্যা এক হাজারেরও কম হবে।

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিম দেশের স্বল্পসংখ্যক হাজিকে হজে যোগ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের এমন সিদ্ধান্তকে ‘বিচক্ষণ’ বলে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

সৌদি আরব সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবারের হজে সৌদি আরবের বাইরে থেকে কেউ অংশ নিতে পারবে না। কেবল সৌদি আরবে অবস্থানকারী সৌদি আরব ও অন্যান্য দেশের কিছু নাগরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা সাপেক্ষে হজে অংশ নিতে পারবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতি হজ মৌসুমে ২০ লাখেরও বেশি মুসল্লি হজ পালন করে। তাদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যকই বিদেশি। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা ফরজ। তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে হজের মতো এত বড় জনসমাগম থেকে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছিল বিভিন্ন মহল থেকে।

মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমিত পরিসরে হজ আয়োজনের অর্থ সৌদি আরবের বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি। করোনার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকা এবং তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় সৌদি আরবের অর্থনীতি ইতিমধ্যে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

সৌদি আরব সীমিত পরিসরে হজ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সেনেগাল ও ব্রুনেই এ বছর হজযাত্রী না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ইন্দোনেশিয়ার একজন মন্ত্রী বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ও কষ্টকর। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে নেই।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণের হারের দিক দিয়েও সৌদি আরব শীর্ষে আছে। সৌদিতে এক লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে অন্তত এক হাজার ৩০৭ জনের। এর মধ্যে সৌদি আরবপ্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা অন্তত ৪১৫।

জানা গেছে, হজ বাতিল বা আনুষ্ঠানিকতায় বিঘ্ন ঘটার নজির আগেও আছে। মহামারি, রাজনীতি ও সংঘাতের কারণে হজ বাতিল হয়েছে। ১৮৩৭-৫৮ সালের মধ্যে সাত বছর হজ পালন করতে পারেনি মুসল্লিরা।

বাংলাদেশ থেকে এ বছর হজ পালনের জন্য ৬৫ হাজার মুসল্লি নাম নিবন্ধন করেছিল। কিন্তু বর্তমান মহামারি পরিস্থিতিতে এ বছর তাদের আর হজে যাওয়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে গত মার্চ মাসের শুরু থেকেই ওমরাহ পালন বন্ধ আছে।

নিবন্ধিতরা অগ্রাধিকার পাবেন আগামী বছর

করোনার কারণে সৌদি সরকার এ বছর বিদেশ থেকে কাউকে হজের সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাংলাদেশের নিবন্ধিত প্রায় ৬৫ হাজার ব্যক্তি হজে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। তাঁরা চাইলে যেকোনো সময় টাকা ফেরত নিতে পারবেন। আর যাঁরা টাকা ফেরত নেবেন না তাঁরা আগামী বছর হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম মঙ্গলবার  এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ধর্মসচিব জানিয়েছেন, এসব বিষয় নিয়ে আজ বুধবার মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে হজ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী সোমবার রাতে আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় তাঁরা এ বছর বাংলাদেশ তথা বাইরের কোনো দেশ থেকে কোনো হাজি নিতে পারছেন না। এ জন্য তাঁরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এবং ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে আগামী দিনে বেশিসংখ্যক হজযাত্রী নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’

এদিকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার হজযাত্রীদের হজে পাঠাতে না পারায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন বেসরকারি এজেন্সি মালিকরা। একই সঙ্গে টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মাঝেও হতাশা দেখা দিয়েছে। করোনার কারণে হজে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেলেও আগামী বছর সবার ভাগ্যে এ সুযোগ হয় কি না, তা নিয়েও অনেকে চিন্তিত।

বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবের সভাপতি এম শাহাদত হোসাইন তসলিম  বলেন, ‘হজযাত্রীদের টাকা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অ্যাকাউন্টে ব্লক করা আছে। এটা এজেন্সির কেউ নিতে পারবে না। হজযাত্রীরা চাইলে ফেরত নিতে পারবেন। তবে টাকা ফেরত নিলে তাঁর নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। এতে আগামীতে তাঁর হজে যাওয়ার সুযোগ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।’

তিনি বলেন, ‘এবার হজে পাঠাতে না পারায় দেশের এজেন্সি মালিকদের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার ব্যাবসায়িক ক্ষতি হবে।

এই পরিস্থিতিতে অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। অনেকে অফিস চালাতে পারবেন না। আবার অনেকে চাকারি হারাবেন।’

করোনার কারণে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদেশিদের ওমরাহ পালনের অনুমতি দেওয়া স্থগিত করে সৌদি আরব। পরে পর্যটন ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় লকডাউন করা হয় পুরো দেশ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হজ অনুষ্ঠান নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। অবশ্য দুই মাস পর লকডাউন শিথিল এবং পর্যায়ক্রমে সৌদির মসজিদগুলো খুলে দেওয়ায় হজ নিয়ে নতুন আশার সৃষ্টি হয়। সবাই সৌদির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন। তবে সৌদির সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় আগেই এবার হজে লোক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সেনেগাল, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশ।

সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর নতুন করে বিদেশ থেকে কেউ হজের জন্য সৌদি আরবে যেতে পারবেন না। তবে সেখানে আগে থেকেই অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্যে সীমিতসংখ্যক লোক নিয়ে পালিত হবে এবারের হজ।

করোনা পরিস্থিতির কারণে অনিশ্চয়তার মধ্যেও হজের আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আগ্রহীদের নিবন্ধন কার্যক্রম চালায় ধর্ম মন্ত্রণালয়। ২ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নিবন্ধন কার্যক্রমের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল শেষ করা হয়। সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার জন। কিন্তু করোনা আতঙ্কের কারণে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মাত্র তিন হাজার ৪৫৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬১ হাজার ১৪২ জন নিবন্ধন সম্পন্ন করেন।

এবার হজে যেতে আগ্রহীদের জন্য তিন ধরনের প্যাকেজ রেখেছিল সরকার। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজে চার লাখ ২৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় প্যাকেজে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় প্যাকেজে তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করতে আগ্রহীদের নিবন্ধন করতে বিমানভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বাবদ এক লাখ ৫১ হাজার ৯৯০ টাকা জমা দিতে হয়। আর সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজের পুরো টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

174 ভিউ

Posted ৪:২৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ জুন ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com