কক্সবাংলা ডটকম(২৬ মে) :: প্রেম, সাম্য, মানবতা ও শোষিত মানুষের মুক্তির বার্তাবাহী মনীষী আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ২৫ মে বৃহস্পতিবারে জাগরণের এই কবির ১১৮তম জন্মবার্ষিকী। বিশ্বময় বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ বহুমাত্রিক এ কবির জন্মদিনকে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিনম্র শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় উদযাপন করছে। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি তাই দেশব্যাপী বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতায় পালিত হচ্ছে দিনটি।
১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিনটিতে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে কবিকে নিয়ে বিশেষ নিবন্ধ। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ দেশের বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনেও প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
বিশিষ্টজনদের মতে রবীন্দ্রনাথ-পরবর্তী নজরুলের গান অনেকটাই ভিন্ন ও ব্যতিক্রমী ধারার সৃজন এবং অধিকাংশ গান সুরপ্রধান। নজরুলের বৈচিত্র্যপূর্ণ সুরের লহরী কাব্যকথাকে তরঙ্গায়িত করে এগিয়ে নিয়ে যায়। সুরের বিন্যাসের ওপরে কথা ঢলে পড়ে। তাঁর গানে বহু গায়ক সুর-স্বাধীনতা ভোগ করেন। অনেক ক্ষেত্রে গায়ক সুরের ঢেউয়ে বেশি মেতে যান। তখন গান হয়ে যায় রাগপ্রধান।
নজরুল বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নজরুল ছিলেন ইতিহাস ও সময় সচেতন মানুষ। যার প্রভাব তাঁর লেখায় স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তাঁর সাহিত্যে বিপুলভাবে ধারণ করেন।’
গবেষক ও সঙ্গীতশিল্পী ড. লীনা তাপসী বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিপ্লবী সাহিত্যের প্রাণ পুরুষ। তাঁর অনন্যসাধারণ লেখনীর মাধ্যমে আমাদের সাহিত্য, সংগীত ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও সাম্যের প্রতীক। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ।’ তিনি বলেন, ‘সঙ্গীতের ক্ষেত্রে নজরুল সব ধরনের গান এবং গানের শিল্পীদের পছন্দ করতেন। আধুনিকের জন্য আধুনিক, ফোকের জন্য ফোক। তিনি সবধরণের গানকে সমান গুরুত্ব দিতেন।’
নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তাঁর কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ।
তাঁর লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বধীনচেতা বাঙালির কাছে তাঁর গান ও কবিতা ছিল সাহস এবং প্রেরণার অন্যতম শক্তি।
Posted ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৬ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta