কক্সবাংলা সম্পাদকীয়(৯ নভেম্বর) :: কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং এলাকার পাহাড়ে অস্ত্র তৈরি কারখানার সন্ধানের খবরটি ইতিবাচক হলেও বিষয়টি চাঞ্চল্যকর। বিশেষ করে এ কারখানা থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহের যে তথ্য র্যাব দিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। আমরা দেখেছি, সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।
গত ৪৮ মাসে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘাতে অন্তত ২২৬ জনের নিহত হওয়ার পরিসংখ্যান সেখানকার নাজুক পরিস্থিতিরই ইঙ্গিতবহ। ‘আধিপত্য বিস্তার’ নিয়ে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশে সম্প্রতি বেশ কিছু সহিংস ঘটনায় ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। এর পরই ওইসব এলাকায় র্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতায় যেভাবে অস্ত্র তৈরি ও মেরামত কারখানার সন্ধান করে বিপুল অস্ত্রসহ কারিগরদের আটক করা হয়েছে, সে জন্য এ বাহিনীকে আমরা ধন্যবাদ দিতে চাই।
বস্তুত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সংঘাত শরণার্থী শিবিরের বাইরেও সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে এ অস্ত্র কারখানার সন্ধান ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অস্ত্র কারখানার বাইরেও র্যাব ২০১৯ থেকে এ পর্যন্ত সীমান্ত শিবিরসহ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় দেশি-বিদেশি অনেক আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।
এমনকি রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন সম্প্রতি উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরসহ পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে অগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও অনেক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এর মাধ্যমে এটিই প্রমাণ হয়, সন্ত্রাসীরা ভেতরে ভেতরে বড় কোনো সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা আমাদের জন্য অশনিসংকেত।
এটা স্পষ্ট, মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দিয়েছে। সাময়িক আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটি ছোট অংশও যদি এভাবে সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ে, তা দুঃখজনক।
আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সংঘাতের কুফল আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে দীর্ঘস্থায়ী ও বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলতে পারে। এসব সন্ত্রাসীকে যেমন গ্রেপ্তার করতে হবে, তেমনি নেপথ্যে থেকে কেউ কলকাঠি নাড়ছে কিনা, তা খুঁজে বের করা জরুরি। অস্ত্র তৈরি ও মেরামত কারখানা সাধারণ কোনো বিষয় নয়।
আমরা চাই গোয়েন্দা তৎপরতা আরও বাড়িয়ে পাহাড়ে কিংবা নির্জনে এমন আরও আস্তানা রয়েছে কিনা, খোঁজা জরুরি। বস্তুত রোহিঙ্গাদের একটি অংশ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ কাজ করছে কিনা, এ আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে কারা এই ষড়যন্ত্রকারী এবং তাদের উদ্দেশ্য তদন্তসাপেক্ষে উন্মোচনের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
আমরা প্রত্যাশা করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে অস্ত্র কারখানা উদ্ধারে সফলতা দেখিয়েছে, একইভাবে নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচনেও সফল হবে। সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, রোহিঙ্গা শিবির ঘিরে গড়ে উঠছে নতুন নতুন অপরাধী চক্র। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানে তাদের অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে।
এর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে সংঘাত ও রক্তপাতের ফলে যে নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বলাবাহুল্য, রোহিঙ্গাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এমনকি কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে যেভাবে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাস করছে, সেখান থেকে তাদের ভাসানচরে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাসের ব্যবস্থা করেছে সরকার। ভাসানচরে খাবার, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও কক্সবাজারের চেয়ে ভালো। সেখানে ইতোমধ্যে জাতিসংঘও কাজ শুরু করেছে। এমনকি রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসনেও বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
এর পরও রেহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা যেভাবে সংঘাতে লিপ্ত হয়ে দেশের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারও ফাঁদে পা না দিয়ে রোহিঙ্গাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা মেনে নির্ধারিত শিবিরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করা উচিত। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করতে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করাই মঙ্গলজনক।
তাদের মধ্যে কারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে, সে ব্যাপারে প্রশাসনকে অবহিত করতে পারে। পাশাপাশি আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কতার বিকল্প নেই। বড় কোনো বিপদ ঘটার আগেই আগাম ব্যবস্থা প্রত্যাশিত।
Posted ১২:০৭ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta