নজরুল ইসলাম,কুতুবদিয়া :: কক্সবাজারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় নার্সারি করে সফলতা পেয়েছে এমন কৃষকের সংখ্যা খুবই কম। তার মধ্যে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে সফলত হয়েছেন উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের মনোহরখালী গ্রামের এক কৃষক। দিনরাত পরিশ্রম করে এ সফলতা পেয়েছেন তিনি। নার্সারির আয় থেকে সন্তানদের পড়ালেখাসহ সংসারের যাবতীয় খরচের যোগান দিচ্ছেন। তিনি এখন নার্সারি জগতে দ্বীপের আইডল। তার নার্সারি বিভিন্ন প্রজাতির চারা শোভা পাচ্ছে অফিস,বাসভবন ও বাড়ির ছাদ বাগানে।
বলছিলাম কুতুবদিয়ায় নার্সারি করে সফলতা পাওয়া জয়নাল আবেদীনের কথা। ২০১২ সালের শুরুতে মাত্র ১৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে নিজের বাড়ির আঙিনায় ১০শতক জমিতে শুরু করেছিলেন “বিসমিল্লাহ নার্সারি”। প্রথমে কিছু বনজ ও ফলদ চারা দিয়ে শুরু হয় তার নার্সারির যাত্রা। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে চারার চাহিদা। বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের মাধ্যমে মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধির কৌশল রপ্ত করেন। মাত্র পাঁচ বছরের মাথা সফলতার মুখ দেখেন। নার্সারির আয়ের টাকায় আরও ২০শতক জমি ক্রয় করে বাড়ানো হয়েছে আয়তন। এখন ৩০ শতক জমিতে বিস্তৃত বিসমিল্লাহ নার্সারি।
নার্সারি মালিক জয়নাল জানান,অভিজ্ঞদের পরামর্শ এবং ইউটিউবে নার্সারির ওপর কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে নার্সারিতে নতুনত্ব আনছেন তিনি।দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের চারা ও বীজ সংগ্রহ করে তিনি নার্সারির পরিচিতি বাড়িয়েছেন দ্বীপ ও দ্বীপের বাইরে। মাত্র পাঁচ বছরেই এ নার্সারি ব্যবসায় সফলতার মুখ দেখতে পাওয়ায় এখন তিনি সাবলম্বী। তার নার্সারি ব্যবসার সফলতা দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক অনুপ্রাণিত হচ্ছেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে।
জয়নাল আবেদীন সকালের সময়কে বলেন, কোন পেশায় নিজকে নিযুক্ত করতে পারছিলাম না। পরিবার নিয়ে আর্থিক অনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করছিলাম। ২০১২ সালে স্বল্প পরিসরে নিজ বাড়ির আঙিনায় ১০ শতক জমিতে ২০ প্রজাতির ফলজ ও ঔষুধী চারা নিয়ে শুরু করেন নার্সারী ব্যবসা।
এ বছর তিনি ২ হাজার নারিকেল চারা, ১ হাজার সুপারি চারাসহ বিভিন্ন বনজ, ফলদ, ঔষধি ও ফুলের চারা নার্সারি করেছেন। তার এখানে ভিয়েতনাম, ক্যারালা,বার্মার নারিকেল চারাও রয়েছে। যা মাত্র তিন থেকে সাড়ে ৩ বছরের মধ্যেই ফলন দেয়। এখানে রয়েছে ভিয়েতনামী সুপারি চারা। মাত্র ১৮ মাসের মধ্যেই ফলন দেয় এ চারা।
এছাড়া বিভিন্ন জাতের বনজ চারা ছাড়াও দেশি-বিদেশি জাতের আম, জাম, কাঠাল, পেয়ারা, বেদানা, কমলা, আমড়া, শরুফা, লেবু, জাম্বুরা, সফেদা, মাল্টা, বড়ই, কামরাঙ্গা, মিষ্টি তেতুল, চালতা, লিচু, বেল, লটকনসহ প্রায় দেড় শ জাতের চারা রয়েছে।
আমের জাতের মধ্যে হাঁড়িভাঙা, ল্যাঙড়া, আম্রুপালি, হিম সাগর, গুটি, ফজলি, গৌরমতি, কাঠিমণ, বারি-৪, বেনানা ম্যাঙ্গো সহ প্রায় ৪০টি জাতের চারা রয়েছে। ফুলের মধ্যে থাই গোলাপ, রজনীগন্ধা, চায়না টগর, হাছনাহেনা, বকুল, কৃষ্ণচুড়া, বেলি, গন্ধরাজ, জবা, কিসমাস ট্রি, পাতাবাহার, ঝাউ গাছসহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির চারা রয়েছে। এছাড়া এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছও। উপজেলার বিশিষ্টজনরা তার নার্সারি থেকে চারা কিনে নিয়ে যান। অনলাইনে কুতুবদিয়া বিসমিল্লাহ নার্সারি নামের একটি ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমেও তিনি চারা বিক্রি করে থাকেন। অপরদিকে তিনি ছাদ বাগানের জন্য অর্ডার নিয়ে বিভিন্ন অফিস ও বাসাবাড়ি সবুজ রাঙিয়ে দিয়েছে। এ বছর তিনি দ্বীপে ১০টি ছাদ বাগানের জন্য চারা বিক্রির অর্ডার পেয়েছেন।
তিনি আরো জানান, চলতি মৌসুমে পেঁপে, সুপারি, নারিকেল, আম ও মাল্টাসহ বিভিন্ন ফুলের চারা বিক্রি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার চারা বিক্রি হবে বলে তিনি আশাবাদী। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস এই নার্সারিটিকে আরো বৃহৎ আকারে করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
Posted ৫:১২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta