এম.নজরুল ইসলাম,কুতুবদিয়া(৩ মার্চ) :: কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপকূলের অদূরে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিনদিনে সাগরে ১২ টি ফিশিং ট্রলারে গণডাকাতির অভিযোগ উঠেছে। তন্মধ্যে কুতুবদিয়া উপকূলের ১০ ফিশিং ট্রলার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে বলে ট্রলার মালিক সূত্রে জানা গেছে।
এ সময় জলদস্যুদের নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়েছে ১৫ জেলে এবং লুট করেছে নগদ অর্থসহ অর্ধ কোটি টাকার মালামাল । চলতি মাসের এক মার্চ হতে তিন মার্চ পর্যন্ত সাগরে গণহারে ডাকাতি হওয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে জেলেরা। এমনকি রিপোর্ট তৈরির রাতেও ডাকাতি হতে পারে বলে আশংকা করেছেন তারা।
কুতুবদিয়া উপকূলের অমজাখালী এলাকার এফ,বি নাজমা ফিশিং ট্রলারের মালিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, গত বুধবার গভীর রাতে বঙ্গোপসাগরের জাহাজখাড়ী ও সোনাদিয়ারচর নামক স্থানে মাছ ধরারত অবস্থায় অস্ত্রধারী ৫৫/৬০ জন জলদস্যু চারটি ট্রলার নিয়ে ঘেরাও করে তার ট্রলারে হামলা চালিয়ে মাঝি শামীমসহ ৮ জেলেকে আটক করে ট্রলারটি মহেশখালী দ্বীপের ঘড়িভাঙা খাল দিয়ে গহীন প্যারাবনে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য মাঝি-মাল্লাদের নির্মমভাবে নির্যাতন করে। জলদস্যুদের টার্গেট অনুয়ায়ী জেলেরা টাকা দিতে না পারলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। এসব জেলেদের পরিবার নিরুপায় হয়ে গত শনিবার বিকালে জলদস্যুদের সরবরাহ করা ০১৬৪০৮৪৩১৩২ ও ০১৮২৯৪৩৫৪১৬ বিকাশ নাম্বারে দফায় দফায় ষাট হাজার টাকা দিয়ে জেলেদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন বলে ট্রলার মালিক আফাজ উদ্দিন জানান। এছাড়াও একই সাথে মাছ ধরতে যাওয়া লেয়াকত আলী,ওসমান গনি,মোঃ জকরিয়ার,জয়নাল আবেদীন,ও আজম কলোনীর মোর্শেদের ট্রলারসহ ১২টি ট্রলার ও দেড় শতাধিক জেলেকে জিম্মি করে মহেশখালী দ্বীপের ঘড়িভাঙা, সোনাদিয়া, জারীপাড়া খালের প্যারাবনের ভিতরে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করেছে বলে অভিযোগ করেন।
জেলেরা জানান, জলদস্যুদের কবলে পড়ে অন্যান্য ট্রলার মলিকরাও জলদস্যুদের ব্যবহৃত ০১৮১১৩৬৩৯৫৭,০১৮২১০৯১১৯৭,০১৮৫২৩২২৫৫৭,০১৭৬৮৪১৫৬৫৪,০১৮১২৯০১৫৫৫,০১৮৪৫৮৮৩৮৩৮,০১৮২৭৮২৩৬৭৯,০১৮৫২৫৮২৫১০ নাম্বারসহ একাধিক বিকাশ নাম্বারে প্রায় ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ পূর্বক ট্রলারগুলো উদ্ধার করে। কয়েকটি ট্রলারের মালিক টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ট্রলারের মূল্যবান মালামাল লুট করে ট্রলারটি সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে বলে ট্রলার মালিক মোরশেদ জানান।
গত তিনদিনে জলদস্যুরা ১২টি ট্রলার থেকে জলদস্যুরা জাল, মাছ, ডিজেলসহ প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মূল্যবান মালামাল লুট করেছে। এ সময় জলদস্যুদের মারধরে গুরুতর আহত হয়েছে, আবুল বশর (১৮) মোহাম্মদ সবুজ (২০) আলাউদ্দিন (২৯) সোহাগ মিয়াসহ(২৪) ১৬ জেলে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ডাকাত দলের কবলে পড়া ফিশিং ট্রলারগুলো উপকূলে ফিরে এসে আহত জেলেদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে ট্রলার মালিক আফাজ উদ্দিন এ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেন। এ ছাড়াও জলদস্যুরা এফ,বি কহিনুর ,এফ,বি খোকন, এফ,বি সাগরকন্যাসহ জেলেদের চোখে দেখা ২০/২৫টি ফিশিং ট্রলারে হামলা চালায়। মাছ ধরার মৌসুম হিসেবে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী কুতুবদিয়া উপকূল অমজাখালী উপকূল থেকে শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার প্রায় এক হাজার জেলে নিয়ে গভীর সাগরে মাছ ধরার উদ্যশ্যে যায়।
কুতুবদিয়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, বিগত চার মাসে কুতুবদিয়া উপকূলের তালিকাভূক্ত জলদস্যু সর্দ্দার রমিজ,ইসহাক,ছালে আহমদসহ শতাধিক জলদস্যুকে কুতুবদিয়া থানা আটক হওয়ার পর বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। মহেশখালী,বাশঁখালী,পেকুয়া,আনোয়ারা,হাতিয়া,রায়পুর, লক্ষীপুর,ভোলা উপকূলের তালিকাভূক্ত জলদস্যুরা দলবদ্ধ হয়ে মহেশখালী উপকূলের গহিন জঙ্গলে অবস্থান করে প্রস্তুুতি নিয়ে কয়েকটি গ্রুপে ট্রলার নিয়ে সাগরে ডাকাতি করছে।
অমজাখালী উপকূলের জলদস্যুদের কবলে পড়া ট্রলার মালিক মোহাম্মদ জকরিয়া জানান, গত ২৪ মার্চ ট্রলার জেলে নিয়ে তাঁর ট্রলারটি সাগরে আটক করে মুক্তিপনের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এক পর্যায়ে জেলেদের উদ্ধারের জন্য নিরুপায় হয়ে গত তিন মার্চ সকালে জলদস্যুদের দেয়া বিকাশ নাম্বারে দেড় লাখ টাকা পাওয়ার পর ট্রলার ও জেলেদের ছেড়ে দেয়।
কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ দিদারুল ফেরদাউসের সাথে এ ব্যাপারে তিনি জানান,কুতুবদিয়া উপকূলের তালিকাভূক্ত শতাধিক জলদস্যুকে আটক করা হয়েছে। বতর্মানে অন্যান্য উপকূলের জলদস্যুরা জড়ো হয়ে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে সাগরে মাছ ধরার ট্রলার ডাকাতের কবলে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সাগরে অতন্ত্রপ্রহরী কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর জাহাজের টহল জোরদার করলে জলদস্যুরা জিমিয়ে পড়তো।
Posted ১১:০৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৩ মার্চ ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta