বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কোন পথে আফগানিস্তান? কী পেল, মার্কিন ও মিত্ররা?

বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১
489 ভিউ
কোন পথে আফগানিস্তান? কী পেল, মার্কিন ও মিত্ররা?

কক্সবাংলা ডটকম(১৪ জুলাই) :: চির প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের ভূরাজনীতিতে নিশ্চিত সুবিধা জেনেও পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২ জুলাই মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি বাগরাম ছেড়ে গেছে অনেকটাই রাতের আঁধারে। মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় তালেবান নেতাদের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে দোহা চুক্তির আড়ালে দুই দশক ধরে চলা যুদ্ধের অবসান হলো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছেন, আসছে সেপ্টেম্বরের আগেই বাকি সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে।

কী পেল, মার্কিন বা তার মিত্ররা? এ এক বিরাট প্রশ্ন। মার্কিনসহ মিত্রদের প্রায় লক্ষ সৈন্যের উপস্থিতি। যদিও সর্বাগ্রে জার্মানী ও ইতালি তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে। ২.৬ ট্রিলিয়ন ডলার সামরিক ব্যয়, ২ হাজার ৫০০ সৈন্যের মৃত্যু, প্রায় ২০ হাজার সৈন্যের আহত হওয়া এবং প্রায় ১০ লক্ষ বেসামরিক মানুষের জীবন হরণের এই যুদ্ধ কোন ফল বয়ে আনেনি।

সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশ আফগানিস্তানের সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘ। ১৮৮৫–১৮৮৭ সালের ইঙ্গ-রুশ ‘যৌথ আফগান সীমান্ত কমিশন’ রাশিয়া ও আফগানিস্তানের মধ্যবর্তী সীমানা নির্দিষ্ট করে। সোভিয়েত আমলেও এ অঞ্চলে রুশ আগ্রহ বজায় থাকে। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানে শত শত কোটি ডলারের আর্থিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের তখন ‘নুতন তত্ত্ব’ একেকটা দেশ দখল কর এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কর।

পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো বড় উদাহরণ। ১৯৭৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর আফগানিস্তানে সোভিয়েত সৈন্য প্রবেশ করে এবং ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান থেকে সর্বশেষ সোভিয়েত সৈন্য বিদায় নেয়। তীব্র প্রতিরোধের মধ্যেই সোভিয়েত সৈন্য বিদায় নিতে বাধ্য হয়। এই প্রতিরোধ যুদ্ধে প্রায় ২০ লক্ষ আফগান প্রাণ হারায়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক। আফগানিস্তানের চলমান গৃহযুদ্ধের অবসানের প্রয়োজনে সোভিয়েতকে আফগানিস্তানে প্রবেশ করতে হয়েছে, এমনই অজুহাত সেদিন দেখিয়েছিল তারা।

আফগানিস্থানের গত ১০০ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস ক্ষণে ক্ষণে রং বদলের ইতিহাস। ১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বাদশাহ মুহম্মদ জহির শাহ আফগানিস্তান শাসন করেন। বাদশাহর চাচাতো ভাই লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহম্মদ দাউদ খান ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়েই মার্ক্সবাদী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি অব আফগানিস্তান পিডিপিএ-এর শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থার মধ্যেই ১৯৭৩ সালের ১৭ জুলাই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দাউদ একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন।

দাউদ আফগানিস্তানে জহির শাহ রাজতন্ত্রের অবসান ঘটান এবং আফগানিস্তানকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন। দাউদের শাসন আফগান জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও মার্ক্সবাদী পিডিপিএ-এর সমর্থকদের কাছে দাউদের শাসন জনপ্রিয় ছিল না। ১৯৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল এক সামরিক অভুত্থানে দাউদ সরকার উৎখাত হয় এবং সপরিবারে নিহত হন। পিডিপিএ-এর মহাসচিব নূর মুহম্মদ তারাকী নবগঠিত আফগানিস্তান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের বিপ্লবী পরিষদের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুকরণে একটি আধুনিকায়ন ও সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে পিডিপিএ সরকার। যেগুলোর বেশিরভাগই আফগান রক্ষণশীলরা ইসলামবিরোধী হিসেবে বিবেচনা করেন। বিবাহ প্রথার পরিবর্তন, ভূমি সংস্কার সংক্রান্ত অধ্যাদেশগুলো কট্টর ইসলামপন্থী আফগান জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। সুদপ্রথা নিষিদ্ধকরণ ও কৃষকদের ঋণ বাতিল করায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ক্ষমতাশালী জমিদাররাও সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠে। নতুন সরকার, নারীদের অধিকার বৃদ্ধি করে, নিরক্ষরতা দূরীকরণে সচেষ্ট হয় এবং আফগানিস্তানের জাতিগত সংখ্যালঘুদের সমঅধিকার প্রদানে সচেষ্ট হয়।

তারপরও পিডিপিএ-এর অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা থেমে থাকেনি। ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বরে উপ-প্রধানমন্ত্রী হাফিজুল্লাহ আমিন রাষ্ট্রপ্রধান তারাকীকে গ্রেপ্তার ও হত্যা করেন এবং শাসনক্ষমতা দখল করেন। আমিন পিডিপিএ-র অভ্যন্তরে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের এবং ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা বিদ্রোহীদের কঠোর হাতে দমনের চেষ্টা চালান, যার ফলে তার শাসনামলে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য তীব্রতর হয়ে ওঠে এবং সোভিয়েত অনুপ্রবেশের মঞ্চ প্রস্তুত হয়।

তালেব শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘ছাত্র’, এটি একটি পশতু শব্দ। ‘তালেবান’ ছাত্র শব্দের বহুবচন। তালেবান বলতে সাধারণত ধর্মীয় স্কুল মাদ্রাসার ছাত্রদের বোঝায়। মূলত মাদ্রাসা ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল তালেবান বাহিনী। তালেবানরা সুন্নি ইসলাম কেন্দ্রিক একটি পুনর্জাগরণবাদী আন্দোলন, দেওবন্দী মতাদর্শের অনুসারী। এই আন্দোলনের কেন্দ্রে রয়েছে, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ। নামটি ভারতের দেওবন্দ নামক স্থান থেকে এসেছে। এখানে দারুল উলুম দেওবন্দ নামক মাদ্রাসা অবস্থিত। এই আন্দোলন পণ্ডিত শাহ ওয়ালিউল্লাহ (১৭০৩-১৭৬২) দ্বারা অনুপ্রাণিত। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সিপাহী বিদ্রোহের এক দশক পর ১৮৬৬ সালের ৩০ মে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই আন্দোলনের সূচনা হয়। উপমহাদেশের অধিকাংশ মানুষ এ মতবাদ অনুসরণ করে থাকে।

তালেবান আন্দোলন গড়ে ওঠার সময় দুটি প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। যার একটি হলো, দেওবন্দি মতাদর্শ এগিয়ে নেয়া এবং অন্যটি, পশতু জাতীয়তাবাদের স্বীকৃতি। প্রেসিডেন্ট মুহম্মদ দাউদের সময় হতে পশতুদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয় তাদের জাতীয়তার অস্তিত্ব নিয়ে। পশতু জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত একটি ভৌগোলিক ঐতিহাসিক অঞ্চল যা আজকের দিনের আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের কিছু অঞ্চল নিয়ে গঠিত। যেখানে পশতু সংস্কৃতি, ভাষা এবং জাতীয়তা প্রবল। ৭ম শতকে আরব মুসলমানগণ এই অঞ্চলে আগমনের পরে পশতুদের মধ্যে ইসলামের বিকাশ ঘটে। কিছু আরবদেশীয় ব্যক্তি সুলাইমান পর্বতে বসবাস শুরু করে এবং ধীরে ধীরে পশতু জাতির সংগে একীভূত হয়ে যায়। তালেবানদের আন্দোলন হলো সুন্নি ইসলামি এবং পশতুন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। পশতুন আন্দোলন থেকেই মূলত তালেবান আন্দোলনের সূত্রপাত।

১৯৯৪ সালে আফগানিস্তানে তারা প্রতিষ্ঠা পায় এবং এক বছরের মাথায় ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বরে হেরাত প্রদেশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। পরের বছর তারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলে নিয়ে নেয়। তালেবানদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও স্থাপনা ধ্বংসের অভিযোগ ওঠে। ২০০১ সালে তারা আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি লঙ্ঘন করে বামিয়ানে গৌতম বুদ্ধের ঐতিহ্যবাহী মূর্তি ভেঙ্গে ফেলে। তারা নারীদের জন্য বোরকা এবং পুরুষের জন্য দাঁড়ি রাখা বাধ্যতামূলক করে। টেলিভিশন, নাচ, গান, সিনেমা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

আট বছর বয়সের পর কন্যা শিশুদের স্কুলে পড়া নিষিদ্ধ করা হয়। তালেবানদের সময়কালে মাত্র তিনটি দেশ পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের দায়ে জাতিসংঘের সমর্থন হারিয়েছিল তারা। রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, ভারতসহ মধ্য এশিয়ার দেশগুলো তালেবান শাসনের বিরোধিতা করে এবং নর্দান এলায়েন্সে যোগ দেয়। ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর ৭ অক্টোবর মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় এবং একই বছরের ডিসেম্বরে তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে।

২৫০ বছরের ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন আমলে আফগানকে তারা বশীভূত করতে পারেনি। সোভিয়েত ইউনিয়নকেও একরাশ গ্লানি নিয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল। সর্বশেষ ২ জুলাই মার্কিনীদের ২০ বছরের দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে যেতে হলো। ইতিহাসের নির্মমতা হলো সেই তালেবানদের সাথে সমঝোতা করেই কাতারের দোহা চুক্তির আড়ালে মার্কিনীদের বিদায় নিতে হলো। আফগানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে মরিয়া ভারতকেও রাতে বিমান পাঠিয়ে দূতাবাসের সকলকে ফেরত আনতে হয়েছে।

২০০১ এ তালেবানদের ক্ষমতাচ্যুতির আগ পর্যন্ত মাত্র তিনটি দেশের স্বীকৃতি হাতে ছিল। সে অবস্থার বদল ঘটেছে। মার্কিন বিদায়ের পর কাবুলকে নির্ভর করতে হবে রাশিয়া, ইরান, পাকিস্তান ও চীনের সাথে। এই লাইনে তুরস্কও আছে।

আফগানিস্তানে সোভিয়েত আমলে করা খনিজ সম্পদ জরিপ জানিয়েছিল, এখানে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ উত্তোলনযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। মার্কিনীদের কাছে ঐ রিপোর্ট হস্তগত হওয়ার পরও মাঠ পর্যায়ের যুদ্ধের কারণে সেই সম্পদ উত্তোলন করতে পারেনি। ফলে গোটা পৃথিবী ও বড় কর্পোরেট হাউজগুলোর নজর এখন আফগানিস্তানে। এছাড়াও রয়েছে বিলিয়ন ডলারের হিরোইনসহ অন্যান্য মাদকের কারবার। ইতোমধ্যে তালেবানরা উইঘুর প্রসঙ্গ থাকা সত্ত্বেও চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলেছে। এই অঞ্চলে চীন ভূরাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিতে যাচ্ছে তা এখন সময়ের ব্যাপার।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি করবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান চীন ও আফগানিস্তানের নৈকট্য লাভ করে। চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অভিন্ন সীমান্ত থাকার কারণে চীনের বেল্ট রোড প্রকল্পের আওতায় আফগানকে যুক্ত করা সম্ভব হবে। কোয়াড গঠন ভারতকে কী ফল দেয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তালেবান নেতাদের মধ্যেও মধ্যবর্তী ধারার সুর শোনা যায়। দোহায় অংশ নেয়া তালেবান নেতা এক সাক্ষাতকারে বলছেন, ইসলামের সাথে ‘চরম বৈরিতা’ না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে কোন চুক্তি বা সমঝোতা হতে পারে। নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বলছেন, নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা ও নারী শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হবে।

489 ভিউ

Posted ৯:০৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com