মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কোন বয়সে কার কতটুকু ঘুম দরকার?

বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১
849 ভিউ
কোন বয়সে কার কতটুকু ঘুম দরকার?

কক্সবাংলা ডটকম :: ডেস্কে বসে দরকারি কাজ করতে গিয়েও হাই তোলেন অনেকে। নিদ্রায় বুজে আসে চোখ। অথচ রাতে বেশ ভালোই ঘুমিয়েছেন। তারপরও এমন ঘুম চলে আসার কারণ কী? কেনই বা চোখ জড়িয়ে আসে? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু সকলেরই আগে জেনে রাখা দরকার প্রত্যেক বয়সী মানুষের জন্য কতটুকু ঘুম প্রয়োজন।

সোজাকথায়, সবার জন্য পর্যাপ্ত নিদ্রার একক মাত্রা বেঁধে দেওয়ার মতো সরল নয় বিষয়টি। অন্তত এমনটাই জানান যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. রাজ দাশগুপ্ত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির চিকিৎসা শিক্ষা বিভাগ- কেক স্কুল মেডিসিনের পাল্মোনারি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও স্লিপ মেডিসিন শাখায় সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত আছেন।

ডা. দাশগুপ্ত বলেন, “নিদ্রা ব্যক্তিবিশেষের দরকারের ওপর নির্ভরশীল। তবে সবার জন্য আদর্শ ঘুমের একটি প্রচলিত সময়সীমার পরামর্শ আছে, আর তা হলো- রাতে সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুম। তবে কোন ব্যক্তির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের সময়সীমার এ পরামর্শকেও আমরা বদলে দিয়ে থাকি।”

তার সঙ্গে একমত পোষণ করে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাইক্রিইয়াট্রি অ্যান্ড বিহেভেরিয়াল সায়েন্সের পোস্টডক্টরাল বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা চিক বলেন, “জীবনের নানান পর্যায়ের ওপরই নিদ্রার প্রয়োজন নির্ভর করে।”

সিডিসি গাইডলাইন:

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-সিডিসি’র পরামর্শ, প্রাপ্তবয়স্কদের রাতে অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কিন্তু, প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি তিনজন মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে একজন রাতে এ নিয়ম মেনে ঘুমান না বা ঘুমাতে পারছেন না।

অনিদ্রার কারণে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দেয়, যেমন ঝুঁকি বাড়ে হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের ব্যাধির, ডায়াবেটিস, মুটিয়ে যাওয়া এবং স্মৃতিহীনতার। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র একদিন না ঘুমালেও তা আমাদের সুস্থ থাকাকে প্রভাবিত করতে পারে।

ডা. দাশগুপ্ত বলেন, একারণে যাদের ঠিক মতো ঘুম হয় না- তারা উৎকণ্ঠা, বিষণ্ণতা এবং বাইপোলার ডিজঅর্ডার বা মানসিক চাপে সহসাই মেজাজ-মর্জি পরিবর্তনের মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন।

“নিদ্রাহীনতার দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র দুই ধরনের পরিণতিই আছে, যেকারণে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার গুরুত্বও অপরিসীম,” যোগ করেন তিনি।

শিশু ও টিনএজ (১৩-১৮) বয়সীদের কতটুকু ঘুম দরকার?

শিশুরা দিন ও রাতের বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়েই কাটায়। জীবনের প্রথম বছরে তারা দৈনিক গড়ে ১৭-২০ ঘন্টা ঘুমায় বলে জানান দাশগুপ্ত। চার থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুদের দৈনিক ১২-১৬ ঘন্টা গাঢ় নিদ্রা ও থেকে থেকে হালকা ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান স্ট্যানফোর্ডের বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা চিক।

এক থেকে তিন বছর বয়সী শিশুদের ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম একাডেমিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক সংস্থা মায়ো ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ ও সাইক্রিয়াট্রি অ্যান্ড সাইকোলজির সহকারী অধ্যাপক ভানু কোল্লা।

ক্রিস্টিনা চিক বলেন, তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সীদের জন্য যা ১০-১৩ ঘণ্টা এবং ৬-১২ বছরের শিশুদের ঘুম দরকার দিনে ৯-১২ ঘন্টা। পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্য গভীর নিদ্রার পাশপাশি স্বল্প সময়ের হালকা ঘুমও দরকার।

ডা. কোল্লা জানান, চিকিৎসকরা টিনএজারদের জন্য দৈনিক ১০ ঘণ্টা ঘুমের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের ঘুমের অভ্যাস দ্রুত বদলে যায়, যা নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরেই চিন্তিত। ক্রিস্টিনা বলেন, “শিশুরা বয়সন্ধির দিকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা একটু দেরি করে ঘুমাতে পছন্দ করে। এজন্য এখন যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল শুরুর সময় নির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক চলছে। কারণ, রাতে দেরি করে ঘুম হলে সকালে উঠে কম ঘুমিয়েই স্কুলে যেতে হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুর বেড়ে ওঠা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য।”

ডা দাশগুপ্ত অবশ্য জানান, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের পাশাপাশি ভালো মানের অর্থাৎ নিরুদ্বেগ, নিরবিচ্ছিন্ন গাঢ় ঘুম হওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাঢ় ঘুম এবং তার মাধ্যমে র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (রেম) স্তরটি অতিবাহিত করলে আমাদের বোধশক্তি, স্মৃতিশক্তি, সৃজনশীলতা বাড়ে। কারণ এই রেম স্তরেই স্মৃতি/অভিজ্ঞতা সংকুচিত হয়ে জমা হয়। ঘুমের এই পর্যায়েই আমরা নানান রকম স্বপ্ন দেখে থাকি।

অনেক সময় মানুষ বয়স অনুপাতে যথেষ্ট ঘুমানোর পরও ক্লান্তি অনুভব করেন; যার প্রধান কারণ তারা ঘুমের সঠিক স্তরগুলোয় পৌঁছাতে পারেননি।

কলেজ শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক:

রাত জেগে পড়াশোনা করা বা বন্ধুদের সঙ্গে নৈশকালীন পার্টিতে যোগদান- উভয়ভাবেই কলেজ পড়ুয়াদের স্বাভাবিক নিদ্রা রুটিনের ব্যাঘাত হয়। ঘুম বঞ্চিত মস্তিকে পড়ে প্রচণ্ড চাপ।

ডা. দাশগুপ্ত একে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ উলেখ করে বলেন, রাত জাগাটা কলেজ জীবনে সবাই স্বাভাবিক ভাবেই নেয়। কিন্তু, সেটা উচিত নয়।
তিনি এবং ডা. কোল্লা একমত পোষণ করে বলেন, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো সর্বোত্তম। তবে একটু বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের নিদ্রাহীনতার সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে বলেও যোগ করেন কোল্লা।

ক্রিস্টিনা চিক জানান, মগজের গঠন চলমান থাকায় কম বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক (তরুণদের) অন্তত নয় ঘন্টা বা তার বেশি সময় ঘুমানো দরকার। তার মতে, যেকোনো বয়সী প্রাপ্তবয়স্কের জন্যেই কোনো আঘাত বা অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে নয় ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুম দরকার।

তবে এই সাধারণ সংজ্ঞাই শেষ সীমানা এমনটাও নয়। ডা. ভানু কোল্লা জানান, কিছু কিছু প্রাপ্তবয়স্কের ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুম দরকার, অনেকে আবার দৈনিক চার ঘণ্টা ঘুমিয়েই স্বাভাবিক থেকে কাজ করতে পারেন। প্রকৃতিগতভাবেই এই পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তাই আপনি নিশাচর নাকি সকাল স্কলা ঘুম থেকে ওঠার পাত্র/পাত্রী তা নির্ভর করছে আপনার জীবনযাপনের সঙ্গে ঘুমের অভ্যাস গড়ার সিদ্ধান্তের ওপর। উভয়ের মধ্যে সঙ্গতি থাকলে সমস্যা নেই, কিন্তু সঙ্গতিহীন রুটিন আপনার শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করবে।

“যেমন ধরুন; রাতে দেরি করে ঘুমাতে যান কিন্তু সকাল সাতটা থেকে অফিস করেন তাহলে তা আপনার ক্ষতির কারণ হবে। একইভাবে কেউ যদি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাইটশিফটে কাজ শুরু করেন, তার জন্যও সমান ক্ষতিকর হবে।”

কীভাবে ঘুমের উন্নতি করবেন?

আপনি যদি যথেষ্ট পরিমাণ ঘুমাতে না পারেন এবং এর থেকে মুক্তি চান তবে নিচের উপায়গুলো সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে:

১. শয্যার সময় অপরিবর্তিত রাখুন: প্রতিদিন নিয়ম করে একই সময়ে ঘুমোতে যাবেন এবং ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করবেন। ঘুমের এ সময়গুলো ডায়েরিতে লিখে রাখার অভ্যাস গড়ুন, এমনকি তাতে রাতে কয়বার ঘুম ভাঙ্গছে, সেটাও লিখে রাখুন। ডা. দাশগুপ্ত জানান, এভাবে আপনি নিজের জন্য সেরা নিদ্রাভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য পাবেন। তাছাড়া, ঘুমাতে যাওয়ার আগে শয়নকক্ষ যেন আলোহীন, শীতল ও আরামদায়ক থাকে তা নিশ্চিত করুন।

২. বন্ধু রাখুন ইলেক্ট্রনিক সব ডিভাইস: ঘুমানোর প্রস্তুতি নেওয়ার অনেক আগেই এ ধরনের সব ডিভাইস বন্ধ করা ভালো। চিক জানান, কারণ আলো আমাদের নিদ্রা ও জেগে থাকার চক্রে ব্যাহত করে।

“রাতে আগে ঘুমানোর ইচ্ছে থাকলে সকাল সকাল উঠে নিজেকে মুক্ত আলোর সংস্পর্শে নিয়ে আসুন। একইভাবে, ঘুমানোর আগে থেকেই আলোর সংস্পর্শ কমানোর চেষ্টা করবেন। ইলেকট্রনিক ডিভাইসের আলো সুর্যালোকের অনেক বৈশিষ্ট্যকে অনুকরণ করে, যার ফলে আমাদের দেহ জেগে থাকার সংকেত পায়,” – ব্যাখ্যা করেন তিনি।

৩. মনঃসংযোগের কৌশল প্রয়োগ: ঘুমানোর আগে নির্ভার ও চিন্তামুক্ত থাকতে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, ধ্যান ও যোগের সাহায্য নিতে পারেন।

নিজের এক সাম্প্রতিক গবেষণার সূত্র উল্লেখ করে ক্রিস্টিনা চিক বলেছেন, মনঃসংযোগের কৌশল কাজে লাগানো শিশুদের রাতের ঘুম অন্তত একঘণ্টা বেশি হয়েছে।

৪. স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যগ্রহণ ও ব্যায়ামের অভ্যাস: স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত শারীরিক কসরতের রুটিন রাতে সহজে ঘুমাতে সাহায্য করে বলে জানান ডা. দাশগুপ্ত।

তার পরামর্শ, “সব সময় দিনে ব্যায়ামের চেষ্টা করবেন। শারীরিক কসরতে শরীর ও মনের চাপ কমবে, যা রাতে ঘুমানোর সহায়ক হবে।”

সূত্র: সিএনএন

849 ভিউ

Posted ৯:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১

coxbangla.com |

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com