কক্সবাংলা ডটকম(৩ সেপ্টেম্বর) :: বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর। বেগম জিয়ার পরিবারের সূত্রগুলো বলছে যে, তারা চেষ্টা করছেন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার। এজন্য তারা সরকারের সঙ্গে কথা বলছেন বলেও জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের একজন সদস্য। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে পারবেন কি পারবেন না এ নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। দু`টি মামলায় ১৭ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত বেগম জিয়া। গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার এক নির্বাহী আদেশে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রথম ছয় মাসের জামিন দিয়েছিল। পরবর্তীতে এই জামিনের মেয়াদ দু`দফা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার সর্বশেষ একটি আবেদন করেছিলেন যেখানে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। এই সময় বেগম জিয়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং আইসিইউতে থাকা অবস্থায় এই আবেদনটি করা হয়েছিল। কিন্তু সে সময় আইন মন্ত্রণালয় জানিয়ে দেয় যে, বেগম খালেদা জিয়া যেহেতু ফৌজদারি কার্যবিধি ৪৬১ ধারার একবার প্রয়োগ করেছেন সেই ধারা দ্বিতীয়বার প্রয়োগ করা সম্ভব নয়।
সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হলে তাকে আবার কারাগারে যেতে হবে। সেখান থেকে নতুন করে আবেদন করতে হবে। তবে বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সূত্রগুলো বলছে যে, তারা এখনো আশা হারাননি। আইনজীবী এবং বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি পথ রয়েছে।
১. সরকারের অনুকম্পা: সরকার যদি চায় তাহলে বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশেই বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে। সেক্ষেত্রে তার বর্তমানে যে আবেদন সেটি বাতিল করতে হবে। নতুন করে বেগম খালেদা জিয়া আবেদন করবেন এবং সেই আবেদনে তিনি বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করবেন। সরকার যদি সেটি সদয় বিবেচনা করে তাহলে তিনি বিদেশ যেতে পারবেন। এছাড়াও সরকারের সদয় অনুমতির আরেকটি সুযোগ খোলা রয়েছে। সেটি হলো, বেগম খালেদা জিয়া যদি রাষ্ট্রপতির কাছে দণ্ড মার্জনার আবেদন করেন সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি দণ্ড মার্জনা করতে পারেন এবং এর ফলে তিনি বিদেশ যেতে পারবেন। বেগম খালেদা জিয়া এখন পর্যন্ত এরকম দণ্ড মার্জনার আবেদন করার বিষয়টি বিবেচনা করেনি বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
২. বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আরেকটি পথ হলো উচ্চ আদালত: বেগম জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে যদি আবেদন করা হয় এবং তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া প্রয়োজন এরকম একটি আবেদনে যদি উচ্চ আদালত সন্তুষ্ট হয় সেক্ষেত্রে তার বিদেশি অনুমতি দিতে পারে সর্বোচ্চ আদালত। তবে এ কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসকদের কাছ থেকে একটি প্রত্যয়ন পত্র নিয়েছে যেখানে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এরকম দুটি মামলায় ১৭ বছর দণ্ডিত একজন ব্যক্তিকে এ ধরনের আদেশ আদালত দিবে কি না তা নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে যথেষ্ট সংশয় এবং সন্দেহ রয়েছে।
৩. আন্দোলন এবং সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ: বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি পথ খোলা আছে তা হলো বিএনপি যদি বড় ধরণের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে এবং সরকারের ওপর একটি চাপ সৃষ্টি করতে পারে সেক্ষেত্রে সরকার সমঝোতার একটি কৌশল হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে। কিন্তু এরকম আন্দোলন গড়ে তোলার শক্তি এবং সম্ভাবনা বিএনপি`র এখন নেই বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ, বিএনপি এখন বিভক্ত এবং নানা রকম সংকটে জর্জরিত। এই অবস্থায় একটি বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলা এবং সেই আন্দোলনের চাপে সরকারকে নতি স্বীকার বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি বিএনপি`র নেই।
আর তাই বেগম খালেদা জিয়াকে শেষপর্যন্ত বিদেশ যাওয়ার জন্য নির্ভর করতে হবে সরকারের অনুগ্রহের উপর এবং সরকারের সঙ্গে সমঝোতার উপরই। সেক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের উপরই বিএনপি চেয়ারপার্সনের বেশি ভরসা বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে।
Posted ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta