কক্সবাংলা ডটকম(৩ এপ্রিল) :: একজন রোগীর রোগের বিষয়টি একান্ত তার। সে বিষয়ে জানানো ঠিক নয়। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে মেডিকেল বোর্ড প্রধানের এমন মন্তব্য, স্বাস্থ্য পরিস্থিতি জানাতে প্রেস ব্রিফিং ডেকেও তাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন অনুপস্থিত থাকা।
উপপরিচালক ডা. শাহ আলম এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতে না পারার পরিপ্রেক্ষিতে এ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
খালেদা জিয়া কি আদৌ অসুস্থ? অসুস্থ হলে কী ধরনের অসুস্থ, এর মাত্রা কি পরিমাণের এ প্রশ্ন এখন সর্বত্র। সবার প্রশ্ন, সত্যিই যদি খালেদা জিয়া অসুস্থ হন তাহলে এ নিয়ে এত লুকোছাপা কেন? কেন মেডিকেল বোর্ড তথ্য চেপে যাচ্ছে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষইবা বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে কেন, কারা কর্তৃপক্ষইবা নিশ্চুপ কেন? খালেদা জিয়ার পরিবার থেকেও কেন এ নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলা হচ্ছে না?
খালেদা জিয়া অসুস্থ এ সংবাদটি প্রথম জনসম্মুখে আসে গত ২৮ মার্চ। জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় এ দিন খালেদা জিয়াকে বিশেষ আদালতে হাজির করার নির্দেশ ছিল বিচারকের। এ উপলক্ষে সে দিন আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া ‘অসুস্থ’ এ সংবাদ জানিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে আদালতে হাজির করেনি।
ওই দিনই কারাগারের চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়া অসুস্থ নন। তিনি ভালো আছেন। তার হাঁটুতে সমস্যা ছিল, যে কারণে হাঁটতে কষ্ট হয়। এ সমস্যা আগে থেকেই ছিল। এটা ছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই। এ বয়সে যে সমস্যা থাকে তা রয়েছে। তবে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো অবস্থা হয়নি।
পরদিন বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়া অসুস্থ এ কথা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিবকে ফেরত পাঠায় কারা কর্র্তৃপক্ষ। এ দিনই খালেদার শারীরিক অবস্থা দেখতে সিভিল সার্জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সিভিল সার্জন কারা কর্তৃপক্ষকে জানান, খালেদা জিয়ার আগের যেসব সমস্যা ছিল, সেগুলো আছে। নতুন করে কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি। কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শও তিনি দেননি।
এমনকি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদেরও তার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। তবে খালেদা জিয়ার ভাইবোনসহ স্বজনরা দেখা করেন। কিন্তু তারা মিডিয়ার মুখোমুখি হননি। তবে তাদের বরাত দিয়ে বিএনপির এক নেতা দাবি করেন, খালেদা জিয়া আগের চেয়ে কিছুটা অসুস্থ। মহাসচিবকে দেখা করতে না দিলেও খালেদা জিয়ার স্বজনদের দেখা করতে দেয়ার বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চেয়ারপারসনের অসুস্থতা নিয়ে সরকার ধূ¤্রজাল সৃষ্টি করছে। সরকার বলছে, খালেদা জিয়া অসুস্থ, আদালতে ফাইল উত্থাপন করেছে। আবার কারা চিকিৎসক বলছেন, তিনি অসুস্থ নন। বিএনপির মহাসচিব এ সময় খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেশে হোক বিদেশে হোক চিকিৎসার দাবি জানান।
মির্জা ফখরুলের এমন দাবির মুখে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করানো হবে বলে জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন। তিনি কিছু ক্রনিক রোগে ভুগছেন।
দুই পক্ষের এমন দাবি ও প্রতিশ্রæতির মধ্যে গত রবিবার খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের সদস্য করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক মো. শামছুজ্জামান (অর্থোপেডিকস), অধ্যাপক মনসুর হাবীব (নিউরোলজি), অধ্যাপক টিটু মিয়া (মেডিসিন) ও সোহেলী রহমানকে (ফিজিক্যাল মেডিসিন)।
চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত এ মেডিকেল বোর্ড ওই দিনই দুপুর সোয়া ১টায় নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে ঘণ্টাখানেক খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে।
পরে অধ্যাপক শামসুজ্জামান জানান, খালেদা চিকিৎসা চলছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করছেন। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর নতুন করে কিছু ওষুধ যুক্ত করা হয়েছে। আর কিছু বিষয় পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একজন রোগীর রোগের বিষয়টি একান্ত তার। সে বিষয়ে জানানো ঠিক নয়। গতকাল সোমবার তিনি আবার জানান, আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছি।
তিনি জানিয়েছেন, তার ঘাড়ে, বাম হাতে, পায়ে ব্যথা বোধ করেন। হাত ঝিমঝিম করে। আগে যেসব ওষুধ সেবন করতেন, আমরা আরো কিছু ওষুধ বাড়িয়ে দিয়েছি। রক্ত ও এক্স-রে পরীক্ষা দিয়েছি, যা কারা কর্তৃপক্ষ করাবে। পাশাপাশি খালেদাকে ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছি। সর্বোপরি তিনি অসুস্থ, তবে গুরুতর নয়।
খালেদার জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি জানাতে গতকাল সোমবার ঢাকা মেডিকেলের মিডিয়া রুমে হাসপাতালটির পরিচালক ব্র্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিনের প্রেস ব্রিফিং করার কথা ছিল। বেলা ১১টার নির্ধারিত সেই ব্রিফিংয়ে নাসির উদ্দিন হাজির ছিলেন না। সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি অনুষ্ঠানে তিনি রয়েছেন জানিয়ে ব্রিফিংয়ে হাজির হন উপপরিচালক শাহ আলম তালুকদার।
কিন্তু তিনি ব্রিফিংয়ে নতুন কোনো তথ্য জানাননি। শুধু জানান মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ এবং পরবর্তী করণীয় কারা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়া হবে। তারাই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ কোনো বক্তব্য দেয়নি।
এ ধরনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির প্রকৃত তথ্য পাচ্ছেন না দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। ফলে বিভ্রান্তি আরো বাড়ছে। অনেকের সন্দেহ, পর্দার অন্তরালে কোনো গোপন প্যাকেজ ডিলের বাস্তবায়ন করতেই অসুস্থতার খবর ছাড়ানো হচ্ছে।
Posted ২:০০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৩ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta