শাহাব উদ্দিন সাগর(২৬ জুলাই) :: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য সফরে রয়েছেন। লন্ডনে তিনি বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় আছেন। কিছু রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও অংশ নিচ্ছেন। কয়েক দফা সফর পেছানোর পর ১৫ জুলাই লন্ডনের উদ্দ্যেশে ঢাকা ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। জুলাইয়ের শুরু থেকে খালেদার লন্ডন সফর হচ্ছে এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে। মামলার হাজিরা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে খালেদার লন্ডন সফর পিছিয়েে যায়।
খালেদার লন্ডন সফর নিয়ে দেশ ও প্রবাসে সবখানে আলোচনা হচ্ছে। বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি তারেক রহমান এখন একসঙ্গে। দলীয় এবং পারিবারিক সিদ্ধান্ত নিতে তাদের এখন বেগ পেতে হচ্ছে না। খালেদা দেশে থাকলে মোবাইল বা অন্য মাধ্যমে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। ফলে মা- ছেলে মিলে রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া অনেকটাই দু:সাধ্য।
২০১৯ সালে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির মধ্যে একটি নির্বাচন নির্বাচন আমেজ শুরু হয়েছে। নেতাকর্মীরা নির্বাচনের অংশ নেয়ার জন্য নীরবে প্রস্তুতি শুরু করেছেন। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে দলের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী চুড়ান্ত করার এখনই উপযুক্ত সময়।
নিবার্চনের এক বছর আগে অন্তত প্রার্থী চুড়ান্ত না করলে সংসদ নির্বাচনের মাঠ গরম করা যাবেনা। খালেদা দেশে, লন্ডনে তারেক এমন বাস্তবতায় মা ছেলে একমত হয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা কষ্টসাধ্য। অতি নিকটে থেকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করতে লন্ডন সফর গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবে কি, নিবেনা এমন সিদ্ধান্ত লন্ডনে হতে পারে! এছাড়া জামায়াতকে সঙ্গে রেখে যুগপথ আন্দোলন বিএনপি করবে কিনা এসব বিষয় প্রাধান্য পাবে খালেদার লন্ডন সফরে এমনটি ধারনা করা হয়।
দেশ-প্রবাসে যখন এ ধরনের আলোচনা তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের খালেদার দেশে ফেরা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর শুরুর একদিন পর ১৭ জুলাই বাংলাদেশ সচিবালয়ে নিরাপদ সড়ক চাই’র নেতৃবৃন্দের সাক্ষাত অনুষ্ঠান শেষে ওবায়দুল কাদের এ সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার মতো, ওই ওয়ান ইলেভেনের সময় সাহস করে তিনি ফিরে আসবেন কি না, মামলার ভয়ে আবার সময় বর্ধিত হবে কি না, সেটা কেবল সময়ই বলে দেবে।
’ তিনি অারো বলেন, ‘গত শনিবার থেকে ফেসবুকে দেখছি, টুইটারে দেখছি তার (বিষয়ে) স্ট্যাটাস। এত বেশি সময়ের জন্য একটি বড় দলের চেয়ারপারসন বিদেশে যাচ্ছেন, এখন জনশ্রুতি হচ্ছে, তিনি কি মামলার ভয়ে পালিয়ে গেলেন? তিনি কি মামলার ভয়ে ফিরে আসবেন না? মামলায় ১৫০ বার আদালতে সময় চাওয়ার পর এই সন্দেহটা ঘনীভূত হচ্ছে, জনগণের মধ্যে এই গুঞ্জনটা শাখা–প্রশাখা বিস্তার করছে।’ তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া ফিরবেন না এটা আহাম্মকও বিশ্বাস করবে না।’
ওবায়দুল কাদেরের কথায় মনে হয়েছে খালেদা জিয়া দেশে না ফিরলে তিনি খুব খুশি। এতে করে আওয়ামী লীগ খুব লাভবান হবে। ওবায়দুল কাদেরের মতো একজন বিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতার পক্ষে এ ধরনের মন্তব্য আমাদের হতাশ করে। তার কথায় ধারনা করা যায় খালেদা জিয়া না আসলে আওয়ামী লীগ খালি মাটে গোল দেবে। খালেদা দেশে না ফেরলে বিএনপির অবস্থা সূচনীয় হবে! এতে করে আওয়ামী লীগের লাভ হবে। আমি বলছি কি, এ ধরনের চিন্তা হাস্যকর। কারণ যে কোন দেশে বড় কোন গণতান্ত্রিক দলকে বাদ দিয়ে, সে দলের নীতি নির্ধারক বা শীর্ষদের দেশের বাইরে রেখে নিজের দল কৌশলে বছরের পর বছর ক্ষমতায় থাকার চিন্তা অবান্তর।
সমান উঁচ্চতায় দুটি পাহাড়ের মধ্যে একটি পাহাড় কোন কারণে ভেঙ্গে পড়লে অন্য পাহাড়টি একদিন ধ্বসে পড়বে। খালেদা জিয়া দেশে ফিরে না আসলে বা এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ইতিহাস স্বাক্ষী থাকেবে। বাস্তবতার বাতাওয়ন খোলা থাকতে পারে বর্তমান সরকারের নীতি নির্ধারকদের জন্যও। আমি মনে করি বর্তমান বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের উচিৎ খালেদা জিয়াকে সম্মানের সঙ্গে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা। মন্ত্রীরা দেশে থাকেন। আমরা বিদেশিদের অনেক অনুষ্ঠানে যোগ দিই।
বিদেশি অনেক রাজনীতিক আছেন যারা বাংলাদেশর রাজনীতির হাঁড়ির খবর জানেন। তারা এখনও প্রশ্ন তুলেন ‘ ৫ জানুয়ারির’ নির্বাচন নিয়ে। সন্দেহ প্রকাশ করেন ২০১৯ সালের সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশ গ্রহণে হবে কি না তা নিয়ে ? ওবায়দুল কাদেরের কথায় ধরে নিলাম খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেন না। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশের বাইরে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে?
এমন কথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। ধরে নিলাম খালেদা- তারেক দেশে ফিরলেন না, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিল না। বাস্তবতা দাঁড়ায়, খালি মাটে গোল দিয়ে আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায়! সে ক্ষমতা কি দেশে- বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে! মনে রাখতে হবে ৫ জানুয়ারির প্রেক্ষাপট এবং এখনকার প্রেক্ষাপট এক নয়। সব দলের অংশ গ্রহণে একটি নির্বাচন এখন সময়ের দাবী। বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে সে দাবী উপেক্ষিত হবে।
নিকট ভবিষ্যতের জন্য আওয়ামী লীগ লাভবান মনে করলেও সূদুর ভবিষ্যতের জন্য এটি ভয়ঙ্কর। গণতন্ত্রের ভীত একবার ভেঙ্গে গেলে সেটি ফিরে আসা খুবই কষ্টের। বাংলার মানুষ আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন করেছে, দেশ স্বাধীন করেছে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে। ওয়ান ইলেভেন থেকে মুক্ত করে গণতান্ত্রিক শক্তির হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছে। সবই করেছে জনগণ। সেই জনগণ যেমনি আওয়ামী লীগের তেমনি বিএনপিরও। সুতরাং জনগণ চাইলে যে কোন সময় যে কোন কিছু করে ফেলতে পারে।
সরকারকে বা ওয়ায়দুল কাদেরকে মনে রাখতে হবে, ‘অনেকেই বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র অনুপস্থিত বলে যে দবী করে সেটি’। গায়ের জোরে মানুষের এ মন্তব্য সরকার উপেক্ষা করতে পারে। কিন্তু খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন না বলে ওয়ায়দুল কাদের যে মন্তব্য করেছেন জনগণ মনে হয় সেটি উপেক্ষা করবে না। তাই বলতে হয়, খালেদা জিয়া দেশে না ফিরলে ক্ষতি আওয়ামী লীগেরই বেশি।
শাহাব উদ্দিন সাগর, সাংবাদিক, ২৪ জুলাই, ২০১৭ ইংরেজি, নিউইয়র্ক।
Posted ৩:২৭ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৬ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta