কক্সবাংলা সম্পাদকীয়(১৬ আগস্ট) :: বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে ছয়জনের ফাঁসির রায় কার্যকর হলেও পলাতক পাঁচজনকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে না পারার বেদনা অসীম, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
শঙ্কার বিষয় হলো, পাঁচ খুনির মধ্যে দুজনের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হলেও বাকি তিনজনের নাকি কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঘাতকরা অধরা থাকায় কেবল মনস্তাপই বাড়ছে না জাতির; একইসঙ্গে ইতিহাসের জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়াও পূর্ণতা পাচ্ছে না, যা মেনে নেওয়া যায় না।
তথ্য অনুযায়ী, পলাতক পাঁচ খুনির মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছে। অন্যদিকে মোসলেম উদ্দিন সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ ভারতে ধরা পড়েছে বলে সেদেশের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
এছাড়া খুনি রশীদ ও ডালিম এ মুহূর্তে কোথায় অবস্থান করছে, গোয়েন্দারা তার কোনো হদিসই করতে পারছেন না। অবশ্য ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) পক্ষ থেকে পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার কথা বলা হচ্ছে। পাশাপাশি ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও খুনিদের আশ্রয়স্থল সম্ভাব্য দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথাও জানা গেছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন। ’৭৫-পরবর্তী সরকার কেবল খুনিদের বিচারের পথই রুদ্ধ করেনি; একইসঙ্গে তাদের পুনর্বাসন ও পুরস্কৃত করার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে করা ইনডেমনিটি আইন বাতিল করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় খুনিদের বিচার প্রক্রিয়া।
দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ সালে ১২ খুনির মধ্যে পাঁচ খুনি কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ, মেজর (অব.) একে বজলুল হুদা এবং মেজর (অব.) একেএম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি) মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় গত বছরের ১১ এপ্রিল রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
বাদবাকি ছয়জনের মধ্যে আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা গেলেও পাঁচ খুনি এখনও অধরাই রয়ে গেছে। বিদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার কাজটি জরুরি হলেও এক্ষেত্রে খুনিরা যেসব দেশে অবস্থান করছে, সেখানকার নিজস্ব আইন বড় প্রতিবন্ধকরূপে কাজ করছে বলে জানা গেছে। সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।
বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবনে একটিই ব্রত ছিল-বাংলা ও বাঙালির মুক্তির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা। দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন আর স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু ছিল বঙ্গবন্ধুর নিত্যসঙ্গী। তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। একাধিকবার ফাঁসির মঞ্চ তৈরি হয়েছিল তার জন্য। বাঙালির প্রতি তার বিশ্বাস ও আস্থা ছিল আকাশচুম্বী। সে জন্যই হাসিমুখে, নির্ভীকচিত্তে মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সব ধরনের জুলুম-নির্যাতন বরণ করেছেন তিনি।
এরই ফসল হিসাবে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বাংলাদেশ ও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবশিষ্ট খুনিদের ফিরিয়ে এনে এই বাংলার মাটিতে তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার সবরকম উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।
Posted ৪:৩২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৬ আগস্ট ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta