কক্সবাংলা ডটকম :: বেশ কিছুদিন থেকে লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকা বীমা খাতের শেয়ারের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এ খাতের ৪৮ কোম্পানির মধ্যে ২২টির দরপতন হয়েছে ৯ শতাংশের ওপর। ক্রেতাশূন্য অবস্থাও তৈরি হয়েছে অনেক শেয়ারে। প্রধান বাজার ডিএসইর লেনদেনের অর্ধেকের বেশি দখলে নেওয়া এ খাতের শেয়ার কেনাবেচা কমেছে। এতে সার্বিকভাবে অন্য সব খাতের বেশিরভাগ শেয়ারের দর ও লেনদেন বেড়েছে।
বাজার-সংশ্নিষ্টরা জানান, নানামুখী গুজবে ও গুঞ্জনের পাশাপাশি কারসাজির মাধ্যমে বেশ কিছু বীমা কোম্পানির শেয়ারদর স্বল্প সময়ের মধ্যে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনাও চলছে। এরপরও বীমার শেয়ার দর বাড়তে থাকায় পতনের ধারায় ছিল বাকি সব খাতের ভালো-মন্দ সব শেয়ার। এমনকি জুনে হিসাব বছর শেষ হওয়ার পর অনেক কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করেও কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিল না। এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেনে এ বড় পরিবর্তন দেখা গেছে।
ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, পুরো বাজারের লেনদেন বীমাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছিল। মাঝে লেনদেনের ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত এ খাতে হয়েছে। জুনকেন্দ্রিক (হিসাব বছর) কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুম শুরু হলেও এসব শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল না বললেই চলে। এক খাতমুখী হয়ে পড়ে বাজার। এমন প্রেক্ষাপটে কয়েকটি কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা অনেককে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত পাল্টাতে কিছুটা উৎসাহিত করেছে। এর প্রতিফলন ছিল গতকালের লেনদেনে।
জানতে চাইলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএর সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের সিংহভাগ ক্যাপিটাল গেইনের (বেশি দরে শেয়ার বিক্রির থেকে মুনাফা) পেছনে ছুটছেন। এখানে লভ্যাংশ কারও কাছে মুখ্য বিষয় নয়। এটাই বাজারকে সংকটে ফেলছে। নগদ লাভের আশায় বীমার শেয়ারের পেছনে ছোটায় লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুমে ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ারদর কমছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়।
বৃহস্পতিবার লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, হঠাৎ নিম্নমুখী ধারায় চলে যাওয়ায় গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি ইপিএস ঘোষণা করা রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর কমেছে ৪ শতাংশের ওপর। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বীমা কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৬৬ পয়সা মুনাফা করার তথ্য দিয়েছে, যা গত বছর ছিল মাত্র ৮০ পয়সা। একই দিনে তালিকাভুক্ত মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানিটি গত বছরের জুলাই থেকে গত মার্চ পর্যন্ত সময়ে অর্থাৎ ২০১৯-২০ হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসে শেয়ারপ্রতি ৩ টাকা ১৬ পয়সা লোকসান করেছে বলে তথ্য দিয়েছে। এর আগের হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ৩৯ পয়সা। এ তথ্য প্রকাশের দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারদর ১০ শতাংশ বেড়ে ২০ টাকা ৯০ পয়সায় উঠেছে।
ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, বীমার শেয়ারদর অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় এখন যেকোনো গুজব বা গুঞ্জনে এসব শেয়ারদরে বড় প্রভাব পড়ে। কিছু বীমা কোম্পানির ব্যাপক ইপিএস বাড়ার তথ্য শুরুতে বীমার শেয়ারদর বাড়াতে যেমন সহায়তা করেছে, তেমনি সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বীমা কোম্পানির মুনাফা কমার তথ্য বিনিয়োগকারীদের নতুন করে ভাবাচ্ছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে শেয়ার লেনদেনে।
সার্বিক হিসাবে গতকাল ডিএসইতে ১৫৪ শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে, কমেছে ১৩৫টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৬৫টির দর। এতে ডিএসইএক্স সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে ৪৮৪৬ পয়েন্টে উঠেছে। দ্বিতীয় শেয়ারবাজার সিএসইতে ১০৫ শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে ১০১টির দর কমেছে।
শীর্ষ ১০ ব্রোকারের সঙ্গে বিএসইসির বৈঠক : সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বৃহস্পতিবার দেশের শীর্ষ ১০ ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে অংশ নেন লংকাবাংলা, ইবিএল, ব্র্যাক, ইউসিবি, এবি, সিটি, এআইবিএল, ইউনাইটেড, আইডিএলসির সিইওরা। কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামসহ কমিশনার ও নির্বাহী পরিচালকরা এতে শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ব্রোকাররা স্বল্প সুদে ঋণ এবং মূলধনি লোকসানে থাকা বিও হিসাবগুলোর বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
Posted ১২:৫১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta