মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া :: তিন দিনের টানা বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভাসছে কক্সবাজারের চকরিয়া । উজানের পাহাড়ি এলাকা থেকে ঢল নামতে শুরু করে মঙ্গলবার রাত থেকে। চকরিয়ার একটি পৌরসভাসহ উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে অন্তত ২০ হাজারের বেশী বসতঘরে পানি উঠেছে। গ্রামীন সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বন্যা কবলিত পরিবারগুলোতে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার অভ্যন্তরীণ জিদ্দাবাজার-মানিকপুর সড়ক, চিরিঙ্গা-বদরখালী সড়ক, কেবি জালাল উদ্দিন সড়কসহ কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কের উপর দিয়ে ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে গ্রামীন সড়কে যান চলাচল একেবারে বন্ধ, আঞ্চলিক সড়কে জীবন ঝুঁকি নিয়ে অল্প সংখ্যক গণপরিবহণ চলছে। চকরিয়া পৌরসভার একাংশ পাহাড়ি ঢলে ও বৃহৎ অপর অংশ জলাবদ্ধতায় পানিবন্দী রয়েছে শতাধিক পরিবার।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢলের প্রবেশমুখ সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন ও কাকারা ইউনিয়ন পানির নিচে তলিয়ে আছে। বিএমচর ইউনিয়নের কইন্যাকুম বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। জিদ্দাবাজার-মানিকপুর সড়কের কয়েকটি অংশের উপর দিয়ে মাতামুহুরী নদী থেকে উপচে আসা ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় পাড়াগাঁয়ে প্রবেশ করছে পানি।
এছাড়া, চকরিয়া পৌরসভা, উপজেলার লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁশিয়াখালী, বদরখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী ও লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়নের নিচু গ্রামগুলোতেই পানি উঠেছে অধিক।
অন্যদিকে, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে পৌরসভার জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বেশ কযেকটি ওয়ার্ডে সিংহভাগ ঘরে পানি উঠেছে। এছাড়া বাটাখালী ব্রীজ থেকে থানার মোড় হয়ে মগবাজার পর্যন্ত জলাবদ্ধতার কারণে পানিতে তলিয়ে আছে।
সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, টানা বৃষ্টি ও মাতামুহুরী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে অধিকাংশ বসতঘর ডুবে গেছে। সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, মাতামুহুরীর নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার ইউনিয়নের ছড়াখালগুলো পানিতে ভরে গেছে। এই এলাকায় ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।
কাকারা ইউনিয়নের এসএমচের বাসিন্দা ও চকরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এম.জাহেদ চৌধুরী বলেন, অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে গেছে শতাধিক বসতঘর। পানিতে তলিয়ে রয়েছে অধিকাংশ টিউবওয়েল। যার কারণে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙকট সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও রান্না করা খাবারেরও সংকট রয়েছে। দ্রুত বন্যা কবলিত এলাকায় শুকনো খাবার সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেছেন, চকরিয়ার বন্যা কবলিত বেশ কয়েকটি এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। বন্যাকবলিত পরিবারগুলোকে প্রাথমিকভাবে সাহায্যের জন্য ৭২ টন চাল জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বরেন, প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের ৪ টন করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যাতে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষরা দ্রুত এই সাহায্য পাই।
Posted ৬:০৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৮ জুলাই ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta