মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া(২৮ জুন) :: সারাদেশে যেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্য হু হু করে বাড়ছে, সেখানে গত দুইদিন ধরে করোনা আক্রান্তই নেই কক্সবাজারের চকরিয়ায় ! হঠাৎ করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমে গেল কেন তা নিয়ে চলছে নানা কানাঘোষা। এতে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা দুইদিনের রিপোর্টে নিয়ে প্রশ্ন না করে অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান।
চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে ধরে চকরিয়া পৌরসভা ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নে হঠাৎ করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে সংক্রমণ রোধে উপজেলা প্রশাসন দুটি এলাকাকে রেডজোনের আওতায় এনে লকডাউন ঘোষনা করে। প্রথমে ৬ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত লকডাউন ঘোষনা করা হয় পৌরসভা ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ২, ৩ ও ৮নং ওয়ার্ডে।
এরপরও সংক্রমণ না কমায় লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়ে ২৮ জুন পর্যন্ত করা হয়। তবে ডুলাহাজারা ইউনিয়নকে লকডাউনের বাইরে রাখা হয়। ফলে রবিবার মধ্যরাতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে লকডাউনের সময়সীমা।
হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, ২৭ জুন পর্যন্ত চকরিয়ায় ৩’শ ১৪জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন ২’শ ১ জন। হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১১ জন। তন্মধ্যে ২জন নন-কোভিড রোগি। আর বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১’শ ৪জন। সরকারি হিসেবে ৬ জনের মৃত্যু হলেও বেসরকারি হিসেবে তা ১০জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে কক্সবাজারের পিসিআর মেশিনে করোনার রিপোর্ট জট পড়ে যায়। ফলে রিপোর্ট পেতে সময় লাগছিলো ১০ থেকে ১২দিন। রিপোর্টের জট কমাতে উপজেলার সব ক’টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দৈনিক ২০টি করে নমুনা সংগ্রহ করার নির্দেশনা দেয় সিভিল সার্জন। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কমে যায় নমুনা সংগ্রহের হার।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে জানান, জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশের পর থেকে চকরিয়ায় নমুনা সংগ্রহের হার কমে গেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ৬০/৭০টি নমুনা সংগ্রহ করা হতো তা এখন নেমে এসেছে ২০/৩০ এর ঘরে। এর ফলে গত দুইদিন ধরে চকরিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা শূণ্যের কোটায় নেমে এসেছে।
তারা আরো বলেন, ইচ্ছে করে নমুনা সংগ্রহ কম করা হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহের কারণে অনেকে নমুনা দিতে যাচ্ছেনা। যার কারণে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
তবে, এধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প:প কর্মকর্তা ডা.মোহাম্মদ শাহবাজ বলেন, আসলে নমুনা সংগ্রহ কম করা হচ্ছেনা এটা সঠিক না। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। যেখানে আমাদের সীমাবদ্ধতা ২০ থেকে ৩০জন। আবার অনেকে সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে পরীক্ষা করাচ্ছেনা। যারা পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের অধিকাংশ চাকুরীজীবি। কারণ তাদের একটু উপসর্গ দেখা দিলে মালিকরা তাদের নমুনা দিতে বাধ্য করাচ্ছেন। যার কারণে নমুনা সংগ্রহ কম হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, লকডাউনের কারণে আক্রান্তের সংখ্যা কমে গেছে সেটা এখন বলা যাবেনা। দুইদিন রোগি না পাওয়া মানে এই না করোনা আক্রান্ত নেই। তা বুঝতে হলে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। সবাইকে যদি মাস্ক পড়া বাধ্যতামুলক করাতে পারি তাহলে করোনার সংক্রমণ কমে আসবে।
লকডাউন বাড়ানো হবে কিনা জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ২৮ জুন মধ্যরাতেই শেষ হবে লকডাউনের সময়সীমা। আপাতত লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারের নির্দেশনার আলোকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, ২৯ জুন থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা প্রতিষ্টান সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। তবে তাদের অবশ্যই মাস্ক ও সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। কেউ যদি এই নির্দেশ অমান্য করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্তা নেয়া হবে।
Posted ৮:২৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৮ জুন ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta