এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(২৭ মে) :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে জেনারেটর না থাকায় রোগীদের দুর্ভোগের বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়েছে চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার-১) আসনের সংসদ সদস্য ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলহাজ জাফর আলমের।
এরই প্রেক্ষিতে তিনি আগামী এক মাসের মধ্যে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের জন্য ২০ কিলোওয়াট ক্যাপাসিটির একটি নতুন জেনারেটর ব্যবস্থা করে দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন।
বুধবার ২৭ মে এমপি জাফর আলম তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক ফেইজে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট দিয়েছেন। এমপি জাফর আলম লিখেছেন, চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে জেনারেটর না থাকায় রোগীদের দুর্ভোগের বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। বিষয়টি এতদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে অবহিত করেনি। তারপরও রোগীদের দুর্ভোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত তহবিলের অর্থায়নে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের জন্য ২০ কিলোওয়াট ক্যাপাসিটির একটি নতুন জেনারেটর ব্যবস্থা করে দেবো। সল্পসময়ে মধ্যে একটি নতুন জেনারেটর হাসপাতালে পৌঁছে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
এদিকে নতুন জেনারেটর আনতে কিছুদিন সময় লাগতে পারে। সেইজন্য বুধবার বিকালে ঘোষনা দেয়ার পরপর এমপি জাফর আলম একইদিন সন্ধ্যা ৬টা দিকে ভাড়ায় একটি জেনারেটরের ব্যবস্থা করেছেন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের জন্য।
এমপি’র ব্যক্তিগত সহকারি অ্যাডভোকেট আমিন চৌধুরী বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগিদের অন্ধকারে থাকতে হয়। এ বিষয়টি জানার পরই তাৎক্ষণিকভাবে একটি ২০ কিলো ওয়াটের জেনারেটর ভাড়া নেয়া হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় এটি চালু করা হয়েছে। এটি আপাতত এক মাসের জন্য ভাড়া করা হয়েছে। এর পুরো খরচ এমপি মহোদয় ব্যয় করবেন। পরবর্তীতে নতুন একটি জেনারেটর দেয়া হবে।
তিনি বলেন, একমাসের জন্য ভাড়ায় স্থাপিত এই জেনারেটরে পুরো হাসপাতালের লাইট,ফ্যান জ্বলবে। এখন বিদ্যুৎ নিয়ে তেমন আর সমস্যা হবেনা।
প্রসঙ্গত: ১৮ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ৬ লাখ জনগনের জনপদ কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা বর্তমানে করোনার আক্রান্তের হটস্পর্ট হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে এই উপজেলায় ১৪২ জন নানা বয়সের মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের জন্য চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালের নতুন ভবনে চালু করা হয়েছে ৫০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড।
ঈদের পরদিন ২৬মে পর্যন্ত চকরিয়া উপজেলা থেকে ১৪২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৯জন। বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৬০ জন। সুস্থ হয়েছেন ৪৩ জন। হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগিদের চিকিৎসার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে মাত্র দুই জন চিকিৎসক এবং তিনজন নার্স।
অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালের এই আইসোলেশন ওয়ার্ডের চিকিৎসা-খাবার ও বিদ্যুৎ নিয়ে রোগিদের মধ্যে রয়েছে নানা অসন্তোষ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রোগিরা ভর্তির পর যথাযথ খোঁজ-খবর নেন না চিকিৎসক-নার্সরা। আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভিজিটে যাননা চিকিৎসক-নার্সরা। হাসপাতালের আইসোলেশনে রোগি আসলে তাদেরকে শুধুমাত্র কয়েকটি ওষুধ দিয়েই দায়সারা ভাবে শেষ করছে তাদের কাজ। এরপর আর কোন খবর রাখেনা করোনা আক্রান্ত রোগিদের বিষয়ে। শুধু সকাল-বিকেল ও রাতে তাদের খাবার সরবরাহ করা হয়। সারাদিনে একটি বারের জন্যও কোন চিকিৎসক বা নার্স রোগিদের দেখতে বা খবর নিতে যায়না।
পাশাপাশি আছে রোগিদের খাবার সরবরাহে নানা অসংগতি। তাদের যেসব খাবার সরবরাহ করা হয় তা খুব নিম্নমানের। একদম মুখে দেয়ার মতো না। রোগি হিসেবে ভর্তি আছে তাই খাওয়া এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা রোগি গোলাম মোস্তফা পারভেজ ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।
তিনি ওই স্ট্যাটাসে লিখেন- চকরিয়া হাসপাতালে বিদ্যৎ নাই। আইসোলেশনেও বিদ্যৎ নাই। বিদ্যৎ চলে গেলে গরমে গা ভিজে যায়। কিন্তু আইসোলেশন পরিবেশ অনেক সুন্দর, অনেক ভাল। খাবারের কথা বলে লাভ নাই, না খেয়ে মাঝে মাঝে ফেলে দিতে হয়। এক সাথে আটটি ওষুধ খেতে হয় দিনে দুই বার। বাকি সব ঠিক ঠাক আছে। একেই বলে আইসোলেশন।
Posted ১:১৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ মে ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta