মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া(৬ জুন) :: করোনার হটস্পর্ট হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভা ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ড। এজন্য চকরিয়া পৌরসভা ও ওইসব ওয়ার্ডগুলোকে রেড জোনের আওতায় এনে ১৪ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষনা করেছে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন।
আগামী ৭জুন রবিবার বিকেল ৪টার পর থেকে ২১ জুন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত এই আদেশ বলবৎ থাকবে। তবে ১৪ দিন লকডাউনের মধ্যে সপ্তাহে ৪দিন করে ৮দিন মুদির দোকান ও কাঁচাবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করেছে সচেতন মহল। জেলার মতো সপ্তাহে দুইদিন ৮ ঘন্টার জন্য মুদি ও কাঁচাবাজার খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন পৌরবাসী।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে, চকরিয়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ৯৮জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ২,৩ ও ৮নং ওয়ার্ডে প্রায় ২৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যান্য ইউনিয়ন গুলোতে অল্প সংখ্যক আক্রান্ত হয়েছেন। যার কারণে চকরিয়া পৌরসভা ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নকে রেড জোনের আওতায় আনা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, চকরিয়া পৌরসভা সব কটি ওয়ার্ড ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ২, ৩ ও ৮নং ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষনা করা হয়েছে। এর ফলে এসব এলাকায় লকডাউন দেয়া হয়েছে। আগামীকাল রবিবার ৭ জুন বিকেল ৪টার পর থেকে ২১ জুন পর্যন্ত এই লকডাউন কার্যকর থাকবে। এসময় সব ধরনের প্রতিষ্টান বন্ধ থাকবে।
শুধুমাত্র সপ্তাহে চারদিন শুক্রবার, শনিবার, সোমবার ও বুধবার মুদির দোকান ও এবং তিনদিন কাঁচাবাজার খোলা থাকবে তাও ৮ ঘন্টার জন্য। বন্ধ থাকবে ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহণ চলাচল।
তবে, প্রশাসনের অন্যান্য সিদ্ধান্তগুলো ঠিক থাকলেও সপ্তাহে চারদিন মুদির দোকান ও কাঁচাবাজার খোলা রাখার বিষয়টি অযৌক্তিক দাবি করেছে পৌরবাসী। তারা এই সিদ্ধান্তটি পুনরায় বিবেচনা করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে কম-বেশি বাজার রয়েছে। এসব বাজারগুলোতে ছোট-বড় মুদি ও কাচাঁবাজারের দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে স্ব-স্ব ইউনিয়নের লোকজনরা বাজার করতে পারে। তাদের বর্তমানে চিরিংগা পৌরশহরে এসে বাজার না করলেও চলবে। শুধুমাত্র চকরিয়া পৌরবাসীর জন্য সপ্তাহে দুইদিন মুদির দোকান ও কাঁচাবাজার খোলা রাখলেই চলে।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সদস্য জিয়া উদ্দিন বলেন, ১৪দিনের জন্য চকরিয়া পৌরসভাকে লকডাউন করা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু এই ১৪দিন লকডাউনের ভিতরে যদি ৮দিন মুদির ও কাঁচাবাজার খোলা রাখা হয় তবে লকডাউন বাস্তবায়ন সম্ভব হবেনা। অনেকটা যে লাউ সে কদুর মতো।
তিনি আরো বলেন, চকরিয়া পৌরসভার নাগরিকদের অবস্থা এমন হয়নি যে প্রতিদিন বাজার কওে খেতে হবে। আমরা দরকার হলে ডাল-ভাত খেয়ে থাকবো। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ লকডাউন কার্যকরে মুদি ও কাঁচাবাজার সপ্তাহে দুইদিন করার দাবি জানাচ্ছি।
কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার অর্থ-সম্পাদক এএসএম আলমগীর হোছাইন বলেন, ১৪দিন লকডাউনের মধ্যে ৮দিন মুদির দোকান ও কাঁচাবাজার খোলার যে সিদ্ধান্ত প্রশাসন নিয়েছে তা অযৌক্তিক। কারণ মানুষ বাজার করার অজুহাতে ঘর থেকে রেব হবে। এতে করে লকডাউন কতটুকু কার্যকর হবে তা সন্দিহান।পূর্বেও দেখেছি লকডাউনের সময় মানুষ নানা অজুহাতে ঘর থেকে রেব হয়েছে। মানেনি কোন সরকারি নির্দেশ। যার কারণে চকরিয়া করোনা আক্রান্তের হটস্পর্টে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার পৌরসভায় যদি সপ্তাহে দুইদিন বাজারের সময় নির্ধারণ করতে পারে চকরিয়ায় কেন চারদিন দিতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক চকরিয়া পৌরসভা এবং ডুলাহাজারা ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডকে ১৪দিওে জন্য লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে। এসময় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্টান বন্ধ থাকবে। তবে সপ্তাহে চারদিন মুদির দোকান এবং তিনদিন কাঁচা বাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওইসব ব্যবসা প্রতিষ্টানের দোকান মালিকদের অবশ্যই সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের উপজেলায় মুলত ব্যাপক হারে সবজি উৎপাদন হয়। কৃষকের সবজি যাতে নষ্ট না হয় সে কথা মাথায় রেখে তিনদিন কাঁচা বাজার খোলার রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি চকরিয়া পৌরসভার অধিকাংশ মানুষের ১৪দিনের জন্য বাজার এক সাথে করা সম্ভব না। এছাড়া যেহেতু চিরিংগা বাজারটা পাইকারী বাজার। এখান থেকে বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্য ক্রয় করে নিয়ে ব্যবসা করে। সেসব বিবেচনা করে চারদিন মুদির দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে করে গ্রামীণ এলাকায় পণ্যের মূল্যও স্থিতিশীল থাকবে।
Posted ৬:৩৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৬ জুন ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta