এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(১৭ জুলাই) :: চকরিয়া উপজেলার দেড়শত বছরের পুরানো হারবাং গুনামেজু বৌদ্ধ বিহার সংস্কারের নামে পুরাতন বিহারটি ভেঙ্গে ফেলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া বৌদ্ধবিহারে ভাংচুর চালিয়ে বিহারের স্বর্ণ ও বৌদ্ধ ধাতুর মূল্যমান মুর্তি লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন।
ভাংচুর ও মালামাল লুটের সময় বাধা দিতে গেলে বিহারের অধ্যক্ষ সুমনা ভিক্ষুকে বিহার থেকে বের করে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের রাখাইন পাড়াস্থ প্রাচীনতম গুনামেজু বৌদ্ধ বিহারে এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভ শুরু করে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের রাখাইন নারী-পুরুষসহ এলাকাবাসি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাখাইন সম্প্রদায়ের মাঝে শুরু হয় পক্ষ বিপক্ষের দু’পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ঘটনাস্থলে হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির এসআই পারসিত চাকমার নেতৃত্বে একদল পুলিশ অবস্থান করেন। খবর পেয়ে দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ ও চকরিয়া থানার ওসি মো.হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের রাখাইন পাড়া এলাকায় ১৮৬৫ সালে গুনামেজু বৌদ্ধবিহারটি স্থাপন করা হয়। বিগত ১৫৫ বছর ধরে ওই এলাকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের (রাখাইন) লোকজন এই বিহারটি ধর্মীয় ভাবে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবহার করে আসছে।
সম্প্রতি সময়ে বিহার রক্ষানাবেক্ষণ ও সংস্কারের নামে কথিত একটি কমিটির প্রতিনিধি নিয়ে রাখাইন সম্প্রদায়ের ৪২ পরিবার ও চার পরিবারের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। এই নিয়ে সমাজের দু’পক্ষের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মতবিরোধে জড়িয়ে পড়ে বিহার কমিটির ও জমির মালিকানা দাবী করে রাখাইন পাড়া এলাকার মং ইয়াই প্রকাশ মং মাস্টার বৃহস্পতিবার ভাড়াটে লোকজন নিয়ে বিহারটি ভাংচুর করেন। এসময় তাঁরা বিহারের ভিক্ষুকে তাড়িয়ে দিয়ে বৌদ্ধ বিহারে থাকা তিনটি স্বর্ণ ও বৌদ্ধ ধাতুর মূল্যমান মুর্তি লুট করে নিয়ে গেছে বলে দাবী করেছেন রাখাইনরা।
হারবাং গুনামেজু বৌদ্ধ বিহার কমিটির উপদেষ্টা আ লং রি বলেন, একটি পুরাতন বৌদ্ধ বিহার সংস্কার করতে হলে আগে বিহার কমিটির দায়িত্বরত ব্যাক্তিদের নিয়ে বৈঠক করা দরকার। এটা কারো ব্যাক্তিগত বিষয় না, এই বিহারটি পুরো রাখাইন সম্প্রদায়ের সম্পদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়। বিহার কমিটিকে উপেক্ষা করে উপজেলা প্রশাসনের (ইউএনও) অনুমতি নিয়ে দাবী করে মং মাস্টার সমাজের ও সম্প্রদায়ের কাউকে না জানিয়ে ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে এসে আকস্মিক ভাবে পুরাতন বিহারটি ভাংচুর শুরু করেন।
এতে বাঁধা দিতে গেলে উল্টো তাদেরকে প্রশাসনের ভয়ভীতি ও ক্ষমতা দেখিয়ে বিহার সংস্কারের জন্য দাবী তুলেন মং মাস্টার। এতে রাস্তায় ও বিহারে বিক্ষোভ শুরু করে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ। এঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে তাঁরা। তবে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করেছিল উপজেলা প্রশাসন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত মং মাস্টারের ছেলে সেন জু বলেন, তার বাবা অসুস্থ অনুভব করতেছে। তার সাথে কথা বলা যাবে না। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পুরাতন বিহারটি সংস্কারের জন্য ভাঙ্গানো হচ্ছে। বৌদ্ধ বিহারে লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.হাবিবুর রহমান জানান, হারবাং গুনামেজু বৌদ্ধ বিহার সংস্কার নিয়ে বৌদ্ধধর্মলম্বী সম্প্রদায়ের স্থানীয় রাখাইনের মধ্যে অভ্যান্তরীণ বিরোধ দেখা দেয়। এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তবে তাদের বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ কাছে বৌদ্ধ বিহার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হারবাং গুনামেজু বৌদ্ধ বিহার সংস্কার ব্যাপারে সরকারি ভাবে একটি বরাদ্দ এসেছে। তবে পুরাতন বৌদ্ধ বিহারটি ভেঙ্গে ফেলার বিষয়ে কেউ প্রশাসনকে কেউ অবহিত করেনি এবং অনুমতিও নেয়নি। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত যে অবস্থায় আছে ওই ভাবে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিবাধমান বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে এমপি মহোদয়সহ আমরা বৈঠক করেছি। শীঘ্রই এ ব্যাপারে সমাধান করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
Posted ১:৩৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta