কক্সবাংলা ডটকম(২৪ জানুয়ারী) :: আগামী ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা দেশ। অন্যান্য নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও কি একতরফা ভাবে জিতবে আওয়ামী লীগ? নাকি এই নির্বাচনের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াবে বিএনপি? এরকম প্রশ্ন এখন চট্টলাবাসীর মুখে মুখে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন নিয়ে কিছুটা হলেও সিরিয়াস বিএনপি। এই মনোযোগের কারণ হলো, প্রার্থী। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, অনেকদিন পর একটি নির্বাচনে বিএনপি যোগ্যপ্রার্থী দিয়েছে। আর বিএনপি প্রার্থী ডা: শাহাদত হোসেনের কারণে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন জমে উঠেছে।
আর এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ইতিবাচক ও নেতিবাচক এবং বিএনপি প্রার্থী ডা: শাহাদাতের পক্ষে এবং বিপক্ষে ফ্যাক্টর নিয়েই এই প্রতিবেদন।
যে কারণে জিততে পারেন রেজাউল:
১. রাজনীতিতে কোন কলঙ্ক নেই: ত্যাগী নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা। এজন্য এলাকাবাসীদের ভোট তার পক্ষে যেতে পারে।
২. মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী: প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর আলাদা সম্মানের জায়গা আছে মহানগরীর ভোটারদের মধ্যে। সেই সম্মান ও আবেগ যেতে পারে রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে।
৩. আওয়ামী লীগের উন্নয়নের রাজনীতি: গত এক যুগে আওয়ামী লীগ সরকার চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছে। জনগণ জানে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।
৪. শক্তিশালী সংগঠন: চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী। দলের নেতাকর্মীদের সম্মিলিত উদ্যোগ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে জোয়ার আনতে পারে।
৫. কেন্দ্রীয় নেতাদের চট্টগ্রাম সফর: নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম সফর করেছেন। এটা দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং পূণ:শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে উৎসাহিত করেছে। এটি নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
যে কারণে হারতে পারেন রেজাউল:
১. আ.জ.ম নাছিরের ভূমিকা: আওয়ামী লীগের নেতা এবং সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির চট্টগ্রামের রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর। তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিপক্ষ গ্রুপের নেতা হিসেবে পরিচিত। এই নির্বাচনে তার আসল ভূমিকার উপর নির্বাচনের ফলাফল অনেকখানি নির্ভরশীল। গোপনে তিনি যদি অন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তাহলে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপর্যয় হতে পারে।
২. ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী: চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ বিভক্ত। ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩১টিতেই বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডে বিদ্রোহীরা অনঢ়। এদের ভূমিকা এই নির্বাচনে মেয়র পদে প্রভাব ফেলবে।
৩. গোপন অন্তঃকলহ: কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য কোন্দল বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এই অন্ত:কলহ যদি গোপনে হয় তাহলে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে যেতে পারে।
৪. জামাত ফ্যাক্টর: চট্টগ্রামের রাজনীতিতে জামাত সব সময় একটা ফ্যাক্টর। জামাত যদি একট্টা হয়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপির পক্ষে অবস্থান নেয় তাহলে এই নির্বাচনে জয় রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
৫. বাবু নগরী এবং হেফাজত ফ্যাক্টর: চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদ্রাসা ঘিরে হেফাজত এখন মহানগর রাজনীতিতেও একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুনায়েদ বাবু নগরী হেফাজতের আমীর হবার পর চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থান লক্ষণীয়। নির্বাচনে এর প্রভাব কি হয় তার উপর ফলাফল কিছুটা হলেও নির্ভরশীল।
যে কারণে জিততে পারেন ডা: শাহাদত:
১. এলাকায় ইমেজ এবং গ্রহণযোগ্যতা: চট্টগ্রাম মহানগরী বিএনপির সভাপতি ডা: শাহাদাত হোসেন। চিকিৎসক এবং ভদ্র মানুষ হিসেবে তার সাধারণ ভোটারদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এটা ভোটে তার পক্ষে ফ্যাক্টর হতে পারে।
২. কোন্দল নেই বিএনপিতে: প্রার্থীতা নিয়ে বিএনপিতে কোন্দল নেই। দল মোটামুটি ঐক্যবদ্ধ। এটাও ডা: শাহাদাতের জন্য ইতিবাচক ফল আনতে পারে।
৩. সব মনোযোগ মেয়র কেন্দ্রিক: বিএনপি নির্বাচনী কৌশলে সব টুক মনোযোগ দিয়েছে মেয়র নির্বাচনের দিকে। ওয়ার্ড কাউন্সিলে তাদের প্রার্থীরা মূলত: মেয়রের পক্ষেই প্রচারণা করছে। এটাও বিএনপি প্রার্থীর জন্য প্লাস পয়েন্ট।
৪. সরব কেন্দ্রীয় নেতারা: এই প্রথম একটি স্থানীয় নির্বাচনে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সরব এবং তৎপর দেখা যাচ্ছে। এতে কর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছে।
৫. বিগত মেয়রের ব্যর্থতা: জলাবদ্ধতা সহ নানা ইস্যুতে বিগত মেয়র আ.জ.ম নাছিরের ভূমিকা ভোটারদের কাছে সমালোচিত। তিনি যেহেতু আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন, তাই এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ব্যাপারে সাধারণ ভোটারদের নেতিবাচক মনোভাব হতে পারে। এটা ডা: শাহাদত এর জন্য হবে ইতিবাচক।
যে কারণে হারতে পারেন ডা: শাহাদত:
১. দূর্বল সংগঠন: চট্টগ্রামে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি অত্যন্ত দূর্বল। এই অবস্থায় সব কেন্দ্রে বিএনপি এজেন্ট দিতে পারবে কিনা, এটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
২. নেতিবাচক রাজনীতি: বিএনপির প্রার্থীরা ছোট খাট ইস্যুতে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ায়। ভোট বর্জন করে। এজন্য ভোটাররা সংশয়ে আছেন। অনেকের প্রশ্ন, শেষ পর্যন্ত বিএনপি প্রার্থী ভোটে থাকবেন তো?
৩. উন্নয়ন বিমূখতা: চট্টগ্রামের মানুষ উন্নয়ন চায়। তারা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি চায়। ভোটাররা সন্দিহান শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি প্রার্থী জয়ী হয়, তাহলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে কিনা। এই ভীতি ভোটাররা বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।
৪. জামাতের প্রতিশোধ: শেষ পর্যন্ত জাতীয় রাজনীতিতে, বিএনপি কর্তৃক জামাতকে অবহেলার প্রতিশোধ নিতে চসিকের ভোটে তারা যদি নীরব থাকে, তাহলে শাহাদাতের পরাজয় অনিবার্য।
৫. ওয়ার্ড কাউন্সিলদের দূর্বলতা: ওয়ার্ড নির্বাচন উপেক্ষা করার মূল্য দিতে হতে পারে বিএনপির প্রার্থীর। কারণ সিটি নির্বাচন হয় ওয়ার্ডকে ঘিরেই।
Posted ৯:৩৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta