কক্সবাংলা ডটকম(৯ মে) :: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা সংক্রান্ত চুক্তি ভঙ্গ করেছে চীন, আর এজন্য দেশটিকে বাড়তি শুল্ক দিতেই হবে। যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করলে তারাও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে—বেইজিংয়ের এমন বক্তব্যের পর ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন। বেইজিং যদি ‘যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা ও কাজ চুরি বন্ধ না করে’, তবে নতুন শুল্কারোপ থেকে পিছিয়ে না আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।
এদিকে ২০ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির জন্য আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র জমা দিয়েছে ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের অফিস।
ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের অফিস ঘোষণা দিয়েছে, শুক্রবার গ্রিনিচমান সময় রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হবে। অথচ গতকাল থেকে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিয়ু হি ও ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দুই দিনব্যাপী আলোচনা শুরু হয়েছে। অর্থাৎ আলোচনার মাঝপথেই শুল্ক বাড়াতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
চীনা আলোচনা দলের একটি সূত্র সিএনবিসিকে জানিয়েছে, ট্রাম্পের দলের কাছে বাণিজ্য আলোচনা নিয়ে বেইজিংয়ের অবস্থান তুলে ধরবেন চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী। যে ভুল বোঝাবুঝির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনের চেষ্টা করা হবে।
এ আলোচনা শুরুর আগ মুহূর্তে গত বুধবার রাতে ফ্লোরিডার পানামা সিটিতে দেয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, বেইজিং বাণিজ্য আলোচনার চুক্তি ভঙ্গ করেছে। তারা এটি করতে পারে না। তাই তাদের এর দাম চুকাতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা যদি কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারি, তবে বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার নেয়ার মধ্যে ভুল কিছু নেই। আমরা এমনটা আগে কখনো করিনি।
ট্রাম্প বলেন, আমি ঘোষণা দিলাম আমরা চীনের ওপর উচ্চতর শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছি এবং চীন যতদিন না আমাদের শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা ও আমাদের কাজ চুরি বন্ধ করছে, ততদিন আমরা এ থেকে পিছিয়ে আসব না। এটিই ঘটা উচিত, নতুবা তাদের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য করার দরকার নেই।
বেইজিং বলেছে, শুক্রবার যদি যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি শুল্ক আরোপ করেই, তবে তারা প্রয়োজনীয় প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। তবে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ কার্যকর করে, চীন দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছে, তারা প্রয়োজনীয় প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। শুক্রবার যেসব আমদানি পণ্যের ওপর উচ্চতর শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে, তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। এর পরই চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওই বিবৃতি দেয়।
একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চললেও গত রোববার ট্রাম্প ঘোষণা দেন, চলতি সপ্তাহেই ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর উচ্চতর শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ রবার্ট লাইটহাইজার অভিযোগ করেন, বাণিজ্য আলোচনায় যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তা ভঙ্গ করেছে চীন। তবে তিনি এও বলেছিলেন, এর পরও চীনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্ভব।
শুক্রবার কোন কোন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে, তার একটি আনুষ্ঠানিক তালিকা গত বুধবার প্রকাশ করেছেন লাইটহাইজার। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে— চীনের তৈরি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি, গাড়ির পার্টস, ফল, সবজি ও আসবাবপত্র। এও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, শিগগিরই আরো ৩২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। শুল্ক পরিশোধ করবে পণ্য আমদানিকারকরা। তাই যুক্তরাষ্ট্র যেসব চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, তা পরিশোধ করতে হবে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে।
ছয় সপ্তাহের সর্বনিম্নে এশিয়ার শেয়ার সূচক
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে শেষ ধাপের আলোচনা শুরু করছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এ আলোচনা বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিপথ পুরোপুরি পাল্টে দিতে পারে বলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এর প্রভাবে গতকাল এশিয়ার শেয়ারগুলো ছয় সপ্তাহের নিচে নেমে যেতে দেখা গেছে। খবর রয়টার্স।
গতকাল জাপান বাদে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিস্তৃত এমএসসিআই সূচক ১ শতাংশ কমে ২৮ মার্চের পর সর্বনিম্নে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সমাবেশে চীন সমঝোতা থেকে সরে এসেছে এবং এর জন্য তাদের মূল্য দিতে হবে—এমন মন্তব্য করার পর এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোর পতন আরো তীব্র হয়েছে।
গতকাল চীনা শেয়ারদরে আরো পতন দেখা গেছে। সাংহাই কম্পোজিটে ১ দশমিক ১ শতাংশ এবং ব্লু-চিপ সিএসআই-৩০০ সূচকে ১ দশমিক ৫ শতাংশ পতন দেখা যায়। এছাড়া হংকংয়ের হ্যাং সেং ১ দশমিক ৬ শতাংশ নিচে নেমে যায়।
একই সময় জাপানের নিক্কেই অ্যাভারেজ ১ দশমিক ২ শতাংশ হারিয়ে পাঁচ সপ্তাহের সর্বনিম্নে দাঁড়ায়। দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচকে ১ দশমিক ১ শতাংশ পতন দেখা গেলেও অস্ট্রেলিয়ার প্রধান সূচকে দশমিক ৪ শতাংশ যোগ হয়।
এদিকে কয়েক সপ্তাহ আগের ১৫ বেসিস পয়েন্টের তুলনায় তিন মাস মেয়াদি ও ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের ইল্ড স্প্রেড কমে ৩ বেসিস পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগে মার্চের শেষ দিকে স্প্রেড ঋণাত্মক হলে ভবিষ্যৎ মন্দার সম্ভাবনায় বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। গতকাল ১০ বছর মেয়াদি বন্ড ইল্ড ২ দশমিক ৪৬৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে বুধবার ইল্ড পাঁচ সপ্তাহের সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৪২৬ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়।
এশিয়ার পাশাপাশি ওয়াল স্ট্রিটেও চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যে টানাপড়েনের প্রভাব পড়েছে। ওয়াল স্ট্রিটের প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে ডাও জোনস সামান্য বাড়লেও এসঅ্যান্ডপি-৫০০ ও নাসডাক কম্পোজিট যথাক্রমে দশমিক ২ শতাংশ ও দশমিক ৩ শতাংশ হারিয়েছে। গতকাল পাউন্ডের মান ১ ডলার ৩০ সেন্টের নিচে নেমে যায়।
গার্ডিয়ান, বিবিসি ও রয়টার্স