কক্সবাংলা ডটকম(৬ মে) :: মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিপাকে রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। এ যুদ্ধের লাগাম টানতে একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। বিশ্বের শীর্ষ এ দুই অর্থনীতি শিগগিরই, আরো নির্দিষ্ট করে বললে চলতি মাসেই একটি চুক্তিতে পৌঁছতে পারে বলে বহুল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। তবে এ প্রত্যাশায় কার্যত পানি ঢেলে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত রোববার নাটকীয়ভাবে তিনি জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়াতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত তারই ইঙ্গিত বহন করছে। ট্রাম্পের এ মন্তব্যে বিশ্বের প্রধান শেয়ারবাজারগুলোয় অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের মন্তব্যের জেরে ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলতি সপ্তাহের আলোচনা বাতিল করার চিন্তা করছে চীন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে চীনের সরকারি কর্মকর্তারা হতবাক হয়েছেন। এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেছেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা চলছে, তবে বেইজিংয়ের দরাদরির চেষ্টার কারণে এর গতি খুবই শ্লথ।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী শুক্রবার থেকে ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন সিদ্ধান্ত চমক তৈরি করেছে, কারণ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ট্রাম্প প্রশাসন বরাবর বলে এসেছে যে বেইজিংয়ের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য আলোচনা বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে এর আগে এসব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির কথা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। চলতি বছরের প্রথম থেকে ট্রাম্প শুল্ক বৃদ্ধি করার হুমকি দিয়ে আসছিলেন, তবে বাণিজ্য আলোচনায় বসতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র রাজি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। ট্রাম্প আরো জানিয়েছেন, শিগগিরই আরো ৩২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার চীনা পণ্যের ওপরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে চীন থেকে ৫৩ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪১ হাজার ৯২০ কোটি ডলার। যদি ট্রাম্প তার হুমকি বাস্তবায়ন করেন, তবে কার্যত চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা সব পণ্য কোনো না কোনো শুল্কের আওতায় পড়বে।
গত শুক্রবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সিএনবিসিকে জানিয়েছিলেন, চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি করার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আশাবাদী। এর আগে গত বুধবার হোয়াইট হাউজ জানিয়েছিল, সর্বশেষ আলোচনায় বেইজিং ও ওয়াশিংটন একটি চুক্তির খুব কাছে পৌঁছেছিল। প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স বলেছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত ইস্যুগুলো ও মার্কিন-চীন বাণিজ্যিক সম্পর্কে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অগ্রগতি আনার বিষয়েই জোর দেয়া হচ্ছে আলোচনায়। এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছিল, আগামী শুক্রবার এ দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী বুধবার ওয়াশিংটন সফরে যাওয়ার কথা ছিল চীনের ভাইস প্রিমিয়ার লিউ হুর। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্পের নতুন হুমকির পর লিউ হু এ সফর বাতিল করতে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ১০০ জনের প্রতিনিধি বহর নিয়ে ওয়াশিংটন আসার পরিকল্পনা করেছেন লিউ হু।
এদিকে ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণায় বিশ্বের শীর্ষ শেয়ারবাজারগুলোয় গতকাল অস্থিরতা দেখা দেয়। চীনের সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স হ্রাস পায় ৫ শতাংশ, অন্যদিকে হংকংয়ের হ্যাং সেং ইনডেক্সের পতন হয় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। সরকারি ছুটির কারণে জাপানের শেয়ারবাজারগুলো বন্ধ ছিল। ট্রাম্পের সতর্কবার্তার প্রভাব এড়াতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার। গতকাল সকালে ডাউ ফিউচারসে ৫০০ পয়েন্টের বেশি পতন ঘটে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ হ্রাস পায় ২ দশমিক ১ শতাংশ এবং নাসডাক ফিউচারসের পতন হয় ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
রয়টার্স ও সিএনবিসি
Posted ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta