কক্সবাংলা ডটকম :: নাসির উদ্দিন খান প্রথম নজরে আসেন মহানগর ওয়েব সিরিজে অভিনয় করে। এরপর সিন্ডিকেট, পরাণ এবং সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া হাওয়ায় তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে তার অভিনয়গুণ ও ডায়ালগ সমৃদ্ধ ছোট ছোট ভিডিও। অভিনয় ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি ।
ঈদে পরাণ, এরপর হাওয়া। পরপর দুটি প্রশংসিত সিনেমা মুক্তি পেল। নিশ্চয় অনেক মন্তব্য পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত কোন মন্তব্যটা সবচেয়ে সুন্দর লেগেছে?
দুটো ছবি মুক্তির পর অনেক প্রশংসা পাচ্ছি এটা সত্য। ফেসবুকে, ফোনে, সামনাসামনি যেখানে যাচ্ছি এটা নিয়ে মন্তব্য করছেন। সাধারণ দর্শক, চলচ্চিত্রের মানুষজন এবং আমার বন্ধুবান্ধবও দুই সিনেমায় আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলছে। সবাই ইতিবাচক মন্তব্য করছে। খুবই ভালো লাগছে। নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। সবাই পজিটিভটাই বলছে। এটা ভালো লাগছে।
হাওয়া করার সময় যে পরিমাণ পরিশ্রম আপনারা করেছেন, তখন কি মনে হয়েছিল হাওয়া নিয়ে এত হইচই হবে? হলে উপচে পড়া ভিড় থাকবে?
এতকিছু হবে তা মনে হয়নি। তবে এটা মনে হয়েছিল, কিছু একটা আমরা করতে পারব। কারণ সবাই চূড়ান্ত লেভেলের এফোর্ট দিয়েছে। ডিরেক্টোরিয়াল, অ্যাক্টিং, আর্ট, ক্যামেরা, কস্টিউম, প্রডাকশনসহ প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট তাদের সেরাটা দিয়েছে। সবাই ঘাম ঝরিয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমাদের মনে হয়েছিল হাওয়া নাম কামাবে। দর্শক ইতিবাচক সাড়া দেবে এটুকু আশা ছিল।
হাওয়ার জোয়ারে পরাণে ভাটা দেখা দিয়েছে?
তা একদমই মনে হয় না। যে সপ্তাহে হাওয়া মুক্তি পেল সেই সপ্তাহেই হাওয়ার হল বেড়েছে। বর্তমানে পরাণ ৬০টা হলে চলছে। দুটো সিনেমাই বর্তমানের আলোচিত। সেই হিসেবে হাওয়া, পরাণ দুটোর জোয়ার বইছে। কারো ভাটা পড়েনি।
আপনি কখনো ভেবেছেন, দেশে ১০০টা হল, তার মধ্যে ৮৪টা হলে আপনার সিনেমা চলবে?
না, এটা ভাবিনি কখনো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখছি আপনাকে বাংলাদেশের নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী বলা হচ্ছে। বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?
নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী একজন গ্রেট অ্যাক্টর। তার জীবনে যেমন সফলতা আছে, তেমনি কষ্টের জার্নি আছে। আমাদের দেশের দর্শক তাকে পছন্দ করে। যখন তার মতো করে আরেকজন কাছের মানুষ পছন্দের তালিকায় ঢুকে যাচ্ছে তখনই তাকেও নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী বলে ডাকতে পারে। এটা আমার কাছে অবশ্যই ভালো লাগার। যেহেতু এটা দর্শকের ভালো লাগার জায়গা থেকে আসছে। আমরা যেমন ফুল ভালোবাসে প্রিয়জনকে ফুলের নামে ডাকি। দর্শক ভালোবেসে আমাকে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী বলছে। বিষয়টা ভালো লাগার বটেই।
আমরা বলিউডে দেখি একজন শিল্পীর শক্তির জায়গাকে কেন্দ্র করে গল্প লেখা হয়, সেভাবে একটা সিনেমা তৈরি হয়। আমাদের দেশে এ জায়গায় গ্যাপ আছে কিনা?
এ গ্যাপ তো আছেই। এ গ্যাপটা এখন চলছে তা না। বাংলা সিনেমার জন্মলগ্ন থেকেই এ গ্যাপটা হয়ে আসছে। বলিউডে আমরা দেখি অমিতাভ বচ্চনকে কেন্দ্র করে সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে। আমাদের দেশে এমন শিল্পী নেই? অবশ্যই আছে। নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা গ্রেট শিল্পীদের কাজে লাগাতে পারছি না। যেমন মনে করেন আনোয়ার হোসেন। তিনি নবাব সিরাজউদ্দৌলার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এরপর এমন আর কোনো চরিত্রে তাকে দেখা যায়নি। ছোটখাটো চরিত্র তাকে দিয়ে করানো হয়েছে।
কী ধরনের পদক্ষেপ নিলে আমাদের দেশেও ক্যারেক্টার বেজড কাজ হতে পারে? কারা এ পদক্ষেপ নিতে পারে?
আমি-আপনি একা এভাবে ভাবলে তো হবে না। এর জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এখানে লেখকদের কাজ আছে, পরিচালকদের কাজ আছে। প্রযোজকদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। এককভাবে চিন্তা করে বিষয়টা বদলানো যাবে না। সামগ্রিক একটা ভাবনা দরকার।
অভিনয়ের ক্ষেত্রে আপনি কারো থেকে অনুপ্রাণিত?
না। অভিনয়ের ক্ষেত্রে আমি কাউকে ভাবি না। কাউকে ভাবাটা কি ঠিক? ভাবলে তো আমিও তার মতো হয়ে যাব। আমার মতো করে চরিত্রায়ণ করতে পারব না। আমার পছন্দের অভিনেতা-অভিনেত্রী থাকতে পারে। কিন্তু কারো থেকে অনুপ্রেরণা নিতে গেলে আমি তার মতো হয়ে যাব।
এ কারণেই কি পরিপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠতে পারছেন?
শুধু আমার কারণেই না। আমাকে রাইটার, ডিরেক্টররা সেই স্কোপটা দিচ্ছেন। সহশিল্পীর থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি বলেই আমার প্রতিভাটা কাজে লাগাতে পারছি। সুতরাং এটার জন্য অবশ্যই তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা।
সম্প্রতি ‘কোনটা সিনেমা কোনটা নাটক’ এমন বিতর্কে পরাণ আর হাওয়ার নাম এসেছে। মজার বিষয় হলো আপনি দুটো সিনেমাতেই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আপনার কাছে যদি জানতে চাই নাটক আর সিনেমার পার্থক্য আসলে কোথায়?
সত্যি বলতে আমি এগুলো নিয়ে ভাবি না। কোনটা নাটক, কোনটা সিনেমা, কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ এসব নিয়ে না ভেবে আমি যদি পজিটিভ কোনো চিন্তা করি সেটাই আমার জন্য ভালো। এজন্য আমার কাজের বাইরে আর কোনো বিষয় মাথায় নিই না। হ্যাঁ, আমার সহকর্মীরা বিভিন্ন বিষয় বলেন, পরামর্শ দেন, সেটা আমি অবশ্যই ভাবি। কিন্তু এ ধরনের বিতর্কের বিষয়গুলো থেকে আমি দূরে থাকতে পছন্দ করি। বেশির ভাগ তর্কে আমি আগ্রহী নই। শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভকামনা নিই। তাদের পরামর্শ শুনি। এর বাইরে আর কোনো কিছুতে আমার উৎসাহ নেই।
স্বপ্নের কোনো চরিত্র আছে, যে চরিত্রে কাজ করতে চান?
না, আমার এমন কোনো স্বপ্নের চরিত্র নেই। আমি যখন যে চরিত্রটায় কাজ করব বলে ঠিক করি, সেটাকেই আমার স্বপ্নের চরিত্র বলে মনে করি।
একটা কাজ করবেন কি করবেন না, সে সিদ্ধান্ত নেন কী দেখে?
সবসময় দেখার চেষ্টা করি কার সঙ্গে বা কাদের সঙ্গে কাজ করছি। তারপর সিদ্ধান্ত নিই।
Posted ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৩ আগস্ট ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta