
দীপন বিশ্বাস :: সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। বলতে গেলে কানায় কানায় পূর্ণ সাগরতীর।
বিশেষ করে কক্সবাজার সাগরতীরের লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট লোকে লোকারণ্য।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সাগরের নোনাজল আর বালুচরে পর্যটকরা মেতেছেন আনন্দ ও হৈ-হুল্লোড়ে। পর্যটকের ভিড়ে জমে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসাও। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সমুদ্রসৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাগরতীরের লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলীর নোনাজল আর বালুচরে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ। সাগরের নোনাজলে আনন্দ আর হৈ-হুল্লোড়, যা পর্যটকদের উচ্ছ্বাস আর প্রকৃতির অপরূপ মেলবন্ধনের এক অনন্য প্রতিচ্ছবি।
সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে খুনসুটি, বালুচরে ঘুরে বেড়ানো; সব মিলিয়ে যেন এক স্বস্তির ছোঁয়া। একদিকে বাড়ছে আনন্দ, অন্যদিকে কর্মব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি ঝেড়ে মন হয়ে উঠছে সতেজ। সাপ্তাহিক ছুটির দিন এলেই এমন ভিড় চোখে পড়ে কক্সবাজারে। পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুদের নিয়ে মানুষ ছুটে আসছেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে।
মাহমুদা ইসলাম বলেন, ‘উপভোগ করার জন্য আসছি। আর মানুষ না হলে তো কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত উপভোগ করা যায় না। সৈকতে লোকসমাগমই আমার ভালো লাগছে। আমার মনে হচ্ছে, লোকসমাগমের মধ্যে সমুদ্রসৈকত উপভোগ করাটা অসাধারণ। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত মানেই সবাই মিলে উপভোগ করব।’
নূরুল আলম বলেন, ‘বিনোদনের জন্য আসা। বিশেষ করে আমার ছেলের জন্য। বিয়ের ১৯ বছর হয়ে গেছে, এই প্রথম স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আসা। এই সৈকত বেশ উপভোগ্য।’
রোকেয়া রহমান বলেন, ‘জীবনে প্রথমবার কক্সবাজার আসা। এর আগে আমার কখনো আসা হয়নি। আর এখন পর্যন্ত সমুদ্রের পানি ছোঁয়া হয়নি। তবে দেখে খুব ভালোই উপভোগ করছি। সমুদ্রের নোনাজলে নামলে হয়তোবা আরও বেশি ভালো লাগবে।’
সরওয়ার আলম বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত তো বেড়ানোর অন্যতম গন্তব্য। এখানে যখনই আসি ভালো লাগে, যখনই মন খারাপ হয় চলে আসি।’
পর্যটকের এমন ভিড়ে দারুণ খুশি সৈকতপাড়ের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আগের লোকসান কাটিয়ে আবারও স্বস্তি ফিরছে তাদের জীবনে।
বার্মিজ পণ্যের দোকানদার শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘গত সপ্তাহে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকার বেশি বেচাবিক্রি হয়নি। কিন্তু এখন পর্যটকের আগমন বাড়ায় প্রতিদিন ৩০ হাজার টাকার বেশি বেচাবিক্রি হচ্ছে।’
আচার ও টুপি বিক্রেতা বাবু বড়ুয়া বলেন, ‘পর্যটক তো অনেক বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে আশা করি। এখন যেভাবে ব্যবসা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে, অতীতের লোকসান দ্রুত কাটিয়ে উঠব।’
তবে পর্যটকের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রসৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসের মহাব্যবস্থাপক মো. ইয়াকুব আলী বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত এলাকা পর্যটকদের অবাধ চলাচলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন জোন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এই জোনটিকে অন্যান্য এলাকা থেকে কিছুটা আলাদা গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।’
তিনি মনে করেন, ‘সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের উচিত এই অঞ্চলকে বিশেষভাবে নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার আওতায় রাখা, যাতে পর্যটকরা কোনো ধরনের অনিরাপত্তা বোধ না করেন। এ জন্য প্রশাসনিকভাবে এই জোনটিকে আলাদাভাবে প্রাধান্য দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।’
পর্যটকের আগমনে পর্যটন খাতে প্রাণ ফিরলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সেটি নিশ্চিত করা গেলে কক্সবাজার আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে পর্যটকদের কাছে।

Posted ৯:১৪ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta