শনিবার ২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

জনকণ্ঠ পত্রিকা দখলের অভিযোগ, মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা

রবিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৫
306 ভিউ
জনকণ্ঠ পত্রিকা দখলের অভিযোগ, মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা

কক্সবাংলা ডটকম(৩ আগস্ট) :: ঢাকা থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্র জনকণ্ঠের সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে নিজেরাই একটি সম্পাদকীয় বোর্ড গঠন করেছে পত্রিকাটির একদল কর্মী, যাঁরা গত বছর ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সময়ে পত্রিকাটিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

শনিবার তাঁদের কয়েকজনকে মালিকপক্ষ চাকরিচ্যুত করার পর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ছাড়াও তাঁরা মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ঢাকার হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেছেন।

জনকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক শামীমা এ খান শনিবার রাতে ষড়যন্ত্র করে জনকণ্ঠ ভবনে ‘মব সৃষ্টি করে অবৈধভাবে দখলের’ অভিযোগ করেছেন। তাঁর এ অভিযোগ গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের চিফ অপারেটিং অফিসার অবসরপ্রাপ্ত মেজর আফিজুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক ও পত্রিকাটির প্লানিং অ্যাডভাইজর জয়নাল আবেদীনসহ (শিশির) বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামপন্থী কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে।

আফিজুর রহমান ও জয়নাল আবেদীন শিশির উভয়েই বিবিসি বাংলার কাছে জনকণ্ঠ দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জয়নাল আবেদীন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘দখলের অভিযোগ আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ভাষ্য। আমরা এখনো মালিকানা ও প্রকাশনায় নেই। পরিচালনার জন্য শুধু একটা বোর্ড করেছি। কর্মরত সব সাংবাদিকের সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এদিকে রোববার সকাল থেকেই পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে প্রিন্টার্স লাইনে সম্পাদক ও প্রকাশকের নাম দেখা যাচ্ছে না। এর বদলে লেখা হচ্ছে, ‘সম্পাদকমণ্ডলী কর্তৃক গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের সদস্য প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে গ্লোব প্রিন্টার্স লি: ও জনকণ্ঠ লি: থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত’।

এর আগে গত রাতে জনকণ্ঠ ভবনের সামনে এক সমাবেশে মীর জসিম নামের একজন নিজেকে নতুন সম্পাদকীয় বোর্ডের একজন হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘জনকণ্ঠ ও সম্পাদক হিসেবে যিনি আছেন, তাঁকে সম্পাদকের পদ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। তবে তিনি প্রকাশক হিসেবে থাকবেন। তাঁর দুই ছেলেকে জনকণ্ঠে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে আতিকউল্লাহ খান মাসুদ পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠার পর এটি একসময় পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁরা বাংলাদেশবিরোধী রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনীর সদস্য ছিলেন, তাঁদের নিয়ে ‘সেই রাজাকার’ শিরোনামে সিরিজ প্রকাশ করে আলোচনায় এসেছিল।

তবে পরবর্তী সময়ে এটি আওয়ামী লীগপন্থী পত্রিকা হিসেবেই পরিচিত হয়ে ওঠে।

গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এর নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগবিরোধীদের, বিশেষ করে জামায়াত ও এনসিপি–সমর্থিত ব্যক্তিদের হাতে চলে যায় বলে আলোচনা আছে।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার অনেক সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের মালিকানা থেকে শুরু করে কর্মী পর্যায় পর্যন্ত পরিবর্তন হয়েছে। কোথাও কোথাও চাপ দিয়ে বা মব তৈরি করেও পরিবর্তন আনার অভিযোগ আছে।

জনকণ্ঠ নিয়ে যা যা হলো

পত্রিকাটির মালিকপক্ষ, মালিকবিরোধী গ্রুপ এবং কর্মীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা হলো আওয়ামী লীগের পতনের কিছুদিন আগে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা আফিজুর রহমান।

মালিকপক্ষ অভিযোগ করেছে, আওয়ামী লীগের পতনের পর তিনি বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে পত্রিকাটিতে সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ দেন। একজন বিএনপি নেতার স্ত্রীকেও তিনি সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসেন।

পত্রিকাটির প্রকাশক ও সম্পাদক শামীমা এ খান বিবিসি বাংলার কাছে অভিযোগ করেন, আফিজুর রহমানই পুরোনোদের বাদ দিয়ে নতুন লোকজন এনেছেন এবং তাঁরা ষড়যন্ত্র করে পত্রিকা দখল করেছেন।

‘তাঁরাই আগস্টে পত্রিকার ব্যানারে লাল-কালো ইস্যু তুলে সাবোটাজ করেছেন। নিজেরাই পত্রিকার টেম্পলেট কালো করে আমাদের নামে প্রচার করে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছেন,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

আফিজুর রহমান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, প্রতিষ্ঠানকে সেফ ও সাসটেইন (নিরাপদ ও টেকসই) রাখতে যা করার, নিয়োগের ক্ষেত্রে সেটিই তিনি করেছেন।

‘হাউস দখলের প্রশ্নই আসে না। এ ধরনের অভিযোগ আমি ডিজার্ভ করি না। ম্যাডাম (সম্পাদক) অনেকগুলো অসত্য বলেছেন,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন আফিজুর রহমান, যিনি আওয়ামী লীগ আমলে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইতে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন।

এর আগে মে মাসেও জনকণ্ঠ ভবনে ‘মব’ তৈরি করে হামলার অভিযোগ উঠেছিল। তখনো এনসিপি নেতা জয়নাল আবেদীনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠলে দল থেকে তাঁর কাছে ব্যাখ্যাও দাবি করা হয়েছিল।

তবে এর আগে ও পরে বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানটির পুরোনো সাংবাদিকদের অনেককে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়। আবার অনেকে নিজেরাই চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন।

শামীমা এ খান বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে তাঁকে অবহিত না করেই কিংবা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনিয়োগ আনতে সহায়ক হবে, এমন কথা বলে কয়েকজনকে আফিজুর রহমান জনকণ্ঠে চাকরি দিয়েছেন।

সর্বশেষ আগস্ট থেকে পত্রিকার ব্যানার লাল ও কালো করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ বাড়ে। এ ঘটনার জের ধরে মালিকপক্ষ বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সমর্থক হিসেবে আসা নয়জনকে চাকরিচ্যুত করলে তাঁরাও পাল্টা অবস্থান নেন। একপর্যায়ে জনকণ্ঠের সব কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দেন তাঁরা। শুক্রবার রাত থেকে এ নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয় জনকণ্ঠ ভবনে। শেষ পর্যন্ত শনিবার রাতে চাকরিচ্যুতরা সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতাদের নিয়ে একটি সম্পাদকীয় বোর্ড গঠন করে জনকণ্ঠের নিয়ন্ত্রণ নেন।

‘অনেক দিন ধরেই ষড়যন্ত্র করছিল তারা। এখন নিজেরাই কালো রং করে সাবোটাজ করেছে। অথচ আমরা পত্রিকার ব্যানার লালই করেছি। কিন্তু এটাকে ইস্যু করেই তারা পত্রিকা দখলের ষড়যন্ত্র করেছে,’ বলেন শামীমা এ খান।

তবে মালিকপক্ষ পত্রিকা দখলের চেষ্টার জন্য এনসিপির যে নেতা জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, তিনি বলছেন তিনিসহ যাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাঁরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তাঁরা ‘স্বপদে বহাল আছেন’।

জয়নাল আবেদীন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে দুই দিন ধরে আলোচনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আসেনি। তারা পত্রিকার ব্যানারে কালো রং ধারণ করে আমাদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। মালিকপক্ষের দু–তিনজন লোক আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে এটি করেছে। সব সাংবাদিক সংগঠনের সঙ্গে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে পত্রিকাটি বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে একটি সম্পাদকীয় বোর্ড দরকার। সেটি করেছি এবং একটা মামলাও করেছি।’

জনকণ্ঠ দখলের অভিযোগ অসত্য দাবি করে জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা এখনো মালিকানা ও প্রকাশনায় নেই। পরিচালনার জন্য শুধু একটা বোর্ড করেছি। কর্মরত সব সাংবাদিক সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সাড়ে চার কোটি টাকা বকেয়া বেতন আছে। এগুলো তারা পরিশোধ করছে না। তারা প্রতিষ্ঠান না চালালে তাহলে আমাদের বেতন–ভাতা দিয়ে যেতে পারে। তারা গোঁয়ার্তুমি করছে।’

শামীমা এ খানের দাবি হলো, জনকণ্ঠের কিছু পুরোনো কর্মী কিছু সমস্যা তৈরি করেছিল এবং সেই সুযোগে জামায়াত ও এনসিপি–সমর্থিতদের জনকণ্ঠে আনা হয়।

‘তারা আমাকে ও আমার সন্তানদের নিষিদ্ধ করেছে। জনকণ্ঠ ভবন দখল করেছে। অ্যাকাউন্টসের তিনটি ফ্লোরের চাবি নিয়ে গেছে। অথচ এটা আমাদের প্রতিষ্ঠান। মব সৃষ্টি করে তারা অবৈধ দখল করেছে। এটা একটা মিডিয়া ও করপোরেট অফিস। আমরা পুলিশের সহায়তা চেয়েও পাইনি,’ বলেন তিনি।

তাঁর ছেলে জিশাল আতিকুল্লাহ খান বলছেন, কয়েকজন কর্মচারী প্রতিষ্ঠান দখল করে হাতিরঝিল থানায় উল্টো মামলা করেছেন।

আফিজুর রহমান বলছেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে জনকণ্ঠে তিনি যোগ দেওয়ার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেটা পেশাদারির সঙ্গে করা হয়েছে।

‘এখন যে সাত–আটজনকে টার্মিনেট করা হলো, সেটা আমি জানতাম না। পরশু রাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। আমি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সবাই আলোচনা করে পত্রিকা লাল করা হয়েছে ম্যাডামের পারমিশন নিয়েই। আমি আমার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি গত এক বছর,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

তাঁর ইন্ধনে পত্রিকা দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে আফিজুর রহমান বলেন, ‘ডুবন্ত এ প্রতিষ্ঠান দখল করবে কে? তাদের এত ঋণ। আর অনেক দিন ধরে তাদের মধ্যে একধরনের সাইকি তৈরি হয়েছে যে জনকণ্ঠ দখল করবে। প্রতিষ্ঠানের ভালোর জন্য আমার যেখানে যতটা করার সক্ষমতা ছিল আমি করেছি।’

306 ভিউ

Posted ৮:২১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

SunMonTueWedThuFriSat
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031 

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com