কক্সবাংলা ডটকম(১৬ সেপ্টেম্বর) :: জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ১৯ জন। তারা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। মোট ৪২ জেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে চেয়ারম্যান পদে। এই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে বেশির ভাগ জেলায়ই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় বলা যায়, আওয়ামী লীগের নেতারাই একে অন্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। ফলে দলের ভিতরে-বাইরে প্রশ্ন উঠেছে, এত বিদ্রোহী নিয়ে কী করবে আওয়ামী লীগ।
গতকাল মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে ১৯ জেলায় চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী। তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আর অন্যান্য জেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়া হলে অনেকটা একতরফা নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা হতে পারে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। বিদ্রোহীদের নিয়ে কী করবে আওয়ামী লীগ- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন থেকে কাউকে সরিয়ে দিতে চাই না। যে কেউ নির্বাচন করতে পারবে। এ অধিকার সবার আছে। কিন্তু দল করলে দলের শৃঙ্খলা সবাইকে মেনে চলতে হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চায় আওয়ামী লীগ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক করতে আওয়ামী লীগ কি শেষ পর্যন্ত ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের’ ব্যাপারে নমনীয় থাকবে?- এমন প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের। এ ছাড়া দু-একটি জেলায় আগের বিদ্রোহীদের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে কোনো নির্বাচনই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে সবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে পারত। দলীয় সাংগঠনিক কাঠামোতে কতটা শৃঙ্খলা সেটাও ঝালাই করার সুযোগ পেত। অন্যদিকে এটি নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রথম নির্বাচন। তাও আবার ইভিএমএ। সেক্ষেত্রে সরকার এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারত। যেমন- জেলা পরিষদ নির্বাচন উন্মুক্ত করে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেশে-বিদেশে তুলে ধরার সুযোগ থাকত। আবার ভোটার যেহেতু জনপ্রতিনিধিরা এবং ৯০% জনপ্রতিনিধিই আওয়ামী লীগের সেক্ষেত্রে জেলা পরিষদে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের ঘরেই আসত।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের সিদ্ধান্ত কোনো বিদ্রোহীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে দুটি জায়গায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে দল নমনীয় মনোভাব দেখাতে পারে। তিনি বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে কারণে দলের সর্বস্তরের শক্তি দরকার। যারা জনপ্রিয় তারাই নির্বাচিত হয়ে আসুক, সেটাই চাই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, কেউ নির্বাচনে না এলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দলের কেউ বিপক্ষে গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তফসিল অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে। গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন। ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাইয়ের পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ১৬২ জন, সংরক্ষিত আসনে ৭১৫ ও সাধারণ সদস্য পদে ১৯৮৩ জন মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ১৯ জন : সিরাজগঞ্জে আবদুল লতিফ বিশ্বাস, নারায়ণগঞ্জে চন্দন শীল, লালমনিরহাটে অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে রুহুল আমিন, গোপালগঞ্জে অ্যাডভোকেট মুন্সী মো. আতিয়ার রহমান, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, মাদারীপুরে মুনির চৌধুরী, টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক, ঝালকাঠিতে অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির, সিলেটে নাসির উদ্দিন খান, বরগুনায় জাহাঙ্গীর কবির, নওগাঁয় অ্যাডভোকেট এ কে এম ফজলে রাব্বি, ঠাকুরগাঁওয়ে মু. সাদেক কোরাইশী, ফেনীতে খায়রুল বশর মজুমদার, ভোলায় আবদুল মমিন টুলু, মুন্সীগঞ্জে মো. মহিউদ্দিন, মৌলভীবাজারে মিছবাহুর রহমান, লক্ষ্মীপুরে মো. শাহজাহান, শরীয়তপুরে ছাবেদুর রহমান খোকা।
বিদ্রোহী প্রার্থী যেখানে রয়েছে- মাগুরায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন পংকজ কুমার কুন্ডু। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিহাদ মিয়া। চট্টগ্রামে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কৃষক লীগ নেতা ফয়েজুর রহমান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন আল মামুন সরকার। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম। কিশোরগঞ্জে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন মো. জিল্লুর রহমান। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তিন আওয়ামী লীগ নেতা। তারা হলেন- অ্যাডভোকেট হামিদুল আলম চৌধুরী, আজিজুল হক, মো. সেলিম। খুলনায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন শেখ হারুনুর রশীদ। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা, বিএমএ জেলা সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. শেখ বাহারুল আলম। ব
গুড়ায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মকবুল হোসেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান। ফরিদপুরে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন মো. ফারুক হোসেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মো. শাহাদাৎ হোসেন। পাবনায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন আ স ম আবদুর রহিম পাকন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক কামিল হোসেন। পিরোজপুরে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন সালমা রহমান হ্যাপী। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ, নেছারাবাদ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মনি, ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন।
ময়মনসিংহে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন ইউসুফ খান পাঠান। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের উপকমিটির নেতা নুরুল ইসলাম রানা। চাঁদপুরে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন ইউসুফ গাজী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ওসমান গনি। রাজশাহীতে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন মীর ইকবাল। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক মো. আখতারুজ্জামান। নোয়াখালীতে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু। এখানে দলীয় প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আলাবক্স টিটু, মুসফিকুর রহমান।
সুনামগঞ্জে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন খায়রুল কবির রুমেন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট। গাজীপুরে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন মোতাহার হোসেন মোল্লা। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম মোকসেদ আলম। জয়পুরহাটে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন খাজা শামসুল আলম। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল আজিজ মোল্লা, রফিকুল ইসলাম রফিক। রাজবাড়ীতে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন এ কে এম শফিকুল মোর্শেদ। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন পাংশা পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দিপক কুন্ডু।
চুয়াডাঙ্গায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন মাহফুজুর রহমান। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ সামসুল আরেদীন খোকন, যুবলীগের নেতা আরেফিন আলম রঞ্জু। দিনাজপুরে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন আজিজুল ইমাম চৌধুরী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক তৈয়ব উদ্দিন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফরিদুল ইসলাম। নেত্রকোনায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন অসীত সরকার। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক যুবলীগ নেতা আবু সাঈদ খান জ্যোতি। নরসিংদীতে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন আবদুল মতিন ভূইয়া। বিদ্রোহী প্রার্থী মনির হোসেন ভূইয়া।
আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত যাচ্ছে (তিন পার্বত্য জেলা বাদে) দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের নির্বাচন। এ নির্বাচনে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল অংশ না নেয়ায় চেয়ারম্যান পদে এককভাবে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। বেশকিছু এলাকায় আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। এরইমধ্যে মনোনয়ন দাখিল করেছেন চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা। তফসিল অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। এতে ২৩টি জেলায় একমাত্র আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরাই মনোনয়ন দাখিল করেছেন। ফলে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হতে চলেছেন তারা। আর ৩৮টি জেলা পরিষদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। এসব প্রতিদ্ব›িদ্বর মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতারাই আছেন।
তাদের মধ্যে অনেকেই মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়। দলের সমর্থন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন তারা। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ সেপ্টেম্বর আরো কিছু জেলায় দলের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতা করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে পারেন কেউ কেউ। সেক্ষেত্রে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হতে পারেন আরো কয়েকজন চেয়ারম্যান।
এদিকে স্থানীয় সরকারের বড় এই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হতে পেরে চেয়ারম্যানরা স্বস্তি প্রকাশ করলেও অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। কেননা প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ জাতীয় পার্টি ও অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ফলে মাঠ সম্পূর্ণ ফাঁকা।
আর এই ফাঁকা মাঠে দলের মনোনয়ন না পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন অনেকেই, যাদের বেশিরভাগই স্ব স্ব জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। কেউ কেউ আবার জনপ্রিয়তার দিক থেকেও এগিয়ে আছেন। এসব প্রার্থীর কেউ কেউ বিদ্রোহী কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতেও শঙ্কা প্রকাশ করছেন, কারণ দলের হাইকমান্ড তাদের বিরুদ্ধে আবার সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেয় কিনা। তবে রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, যেহেতু এই নির্বাচনে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে না, তাই আমরা দাবি করব জেলা পরিষদের
এই নির্বাচনটি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হোক। যাতে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ নির্বাচন হয়। কেননা আমরাও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেই আছি। দলের বাইরে তো আর যেতে পারব না। কাজেই আমরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে এককভাবে বিজয়ী হলে সেই বিজয়ের কোনো আনন্দ থাকে না।
একদিকে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অনুপস্থিতি, অন্যদিকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে গিয়ে দলের হাইকমান্ডের বহিষ্কারের মতো শাস্তির ভয়। তখন কী হবে নির্বাচনের? প্রতিদ্ব›িদ্বতা ছাড়াই কী বিজয়ী হওয়ার পথে বেশিরভাগ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান? এই যদি হয়- তাহলে এই নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকছে বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের। সেক্ষেত্রে কী করবে আওয়ামী লীগ- জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং দলের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে জানান, গতকাল মনোনয়ন দাখিলের শেষদিন ছিল। কতটি জেলায় একক প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন, সেই তথ্য এখনো আমাদের কাছে আসেনি। সব তথ্য আসার পরেই আমরা বলতে পারব, কী অবস্থা।
মাঠের পরিস্থিতি বুঝেই হয়তো আরো নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের দলের সিদ্ধান্ত আগে থেকেই যা আছে, সেটাই বহাল আছে। সেক্ষেত্রে অন্য জেলা পরিষদগুলোতে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, আগে আমরা মাঠের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করি। তারপর দেখা যাবে। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যারা যাবেন, তাদের বিষয়ে আমাদের অবস্থান আগের মতোই আছে। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হলে তো অবশ্যই আপনারা জানতে পারবেন।
যারা বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হওয়ার পথে : এদিকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত জানা গেছে ৬১টি জেলা পরিষদের মধ্যে ২৩টি জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরাই মনোনয়ন দাখিল করেছেন। যাছাই-বাছাইয়ে যদি কেউ বাদ না যান, সেক্ষেত্রে এই ২৩ জনকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। তবে একক প্রার্থী হিসেবে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তারা হলেন- রংপুর বিভাগের লালমনির হাটে এডভোকেট মতিয়ার রহমান, কুড়িগ্রামে মো. জাফর আলী, ঠাকুরগাঁওয়ে সাদেক কুরাইশী।
রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, নওগাঁয় একে এম ফজলে রাব্বী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মো. রুহুল আমিন খান। ঢাকা বিভাগের নারায়নগঞ্জে চন্দন শীল, গাজীপুরে মোতাহার হোসেন মোল্লা, মুন্সীগঞ্জে মো. মহিউদ্দিন, নরসিংদীতে আলহাজ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া, টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান ফারুক, শরীয়তপুরে ছাবেদুর রহমান খোকা, মাদারীপুরে মুনির চৌধুরী, গোপালগঞ্জে মুন্সী আতিয়ার রহমান। সিলেট বিভাগের সিলেট জেলা পরিষদে এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান ও মৌলভীবাজারে মিছবাহুর রহমান। বরিশাল বিভাগের বরগুনায় এডভোকেট একে এম জাহাঙ্গীর, ঝালকাঠিতে এডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির। ময়মনসিংহে ইউসুফ খান পাঠান। আর খুলনা বিভাগের বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু। চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লায় মফিজুর রহমান বাবুল, ফেনীতে খায়রুল বশর মজুমদার ও ল²ীপুরে মো. শাহজাহান।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৬১টি জেলা পরিষদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১৯টি জেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হন।
Posted ১:৫১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta