কক্সবাংলা রিপোট(৩১ মে) :: দেশের মাদক সাম্রাজ্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রক হাজি সাইফুল করিম বৃহস্পতির (৩১ মে) দিবাগত রাত ১টার দিকে টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।এই ‘সাইফুল করিমই ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবার চালান এনেছিলেন। দেশের লাখ লাখ তরুণ-তরুণীকে মাদকাসক্ত করার পেছনে তাঁর ভূমিকা রয়েছে।
জানা গেছে,নিহত ও আত্মসমর্পণকারী ১০২ ইয়াবা কারবারির সম্পদ জব্দ করতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন।এরমধ্যে টেকনাফের তিন ইয়াবা ডনের সম্পদের তত্ত্বাবধান করবেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। প্রতি বছরের ১৪ মে ক্রোক করা সম্পদের যাবতীয় আয়-ব্যয় সংক্রান্ত সার্বিক হিসাব আদালতে উপস্থাপন করবেন তিনি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির দায়ের করা মামলায় এই আদেশ দেন আদালত।
গত ২৩ মে এই রায় দেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মো. ফিরোজ। এই প্রথম মাদক-সংক্রান্ত ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা মামলায় আদালত এই ধরনের আদেশ দিয়েছেন বলে জানান সিআইডির সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা।
যে তিন ইয়াবা ডনের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা হলো- টেকনাফের নাজিরপাড়ার এজাহার মিয়া (৭০) ও তার দুই ছেলে নুরুল হক ভুট্টো (৩২) ও নূর মোহাম্মদ (৩৫)।
এদিকে ইয়াবা কারবারিদের ক্রোক করা বাড়িতে আপাতত পুলিশ সদস্যদের রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব পুলিশ সদস্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা সত্ত্বেও যাদের থাকার মতো জায়গা নেই তাদের। অনেক জায়গায় পুলিশের আবাসন সমস্যা তীব্র। কক্সবাজারও এর ব্যতিক্রম নয়। কেবল ইয়াবার ব্যবসার অর্থে টেকনাফে আলিশান বাড়ি করেছে অনেক মাদক কারবারি।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন ইয়াবা ডনের সম্পদ জব্দের মধ্য দিয়ে অন্যদের কাছেও একটি বার্তা যাবে। মাদক কারবারি হিসেবে অর্জিত সম্পদ যে রক্ষা পাবে না, এটা হলো নতুন দৃষ্টান্ত।’
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘তিন মাদক কারবারির সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত আদেশ আমি পেয়েছি। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
কক্সবাজার পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আত্মসমর্পণকারী ১০২ ইয়াবা কারবারির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য খতিয়ে দেখতে পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে আত্মসমর্পণের বাইরে যেসব কারবারি রয়েছে তাদের সম্পদের তথ্য খতিয়ে দেখতে আরেকটি চিঠি দেওয়া হবে।
পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজারের আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৬৪৬ জন মাদক ব্যবসায়ীর তথ্য উঠে আসে। তবে যাচাই-বাছাইয়ের পর ৫৯০ জন মাদক কারবারির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পায় পুলিশ। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের জন্য যোগাযোগ করছে।
সিআইডি সূত্র জানায়, এজাহার মিয়া ও তার দুই ছেলে ৮টি ব্যাংক ও ৪টি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের মাধ্যমে ১৮২টি হিসাব নম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাদক বিক্রির অর্থ সংগ্রহ করত। এ অর্থে তারা নির্মাণ করেছে দুটি বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ি। কক্সবাজার শহর ও টেকনাফে জমি কিনেছে ৯টি স্থানে। বিলাসী জীবন-যাপন করত তারা। তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা।
এই চক্রের বিরুদ্ধে সিআইডি ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট টেকনাফ মডেল থানায় মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা দায়ের করে। এটি হলো মাদকের ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা প্রথম মামলা। সিআইডি এ মামলার তদন্ত অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। শিগগিরই এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে।
মাদকের এ চক্রে যাদের সংশ্নিষ্টতা পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- কক্সবাজারের টেকনাফের নাজিরপাড়ার নুরুল আলমের ছেলে জালাল উদ্দিন, মো. বেলাল, জালিয়াপাড়ার মো. আরিফ, আবদুর রহমান, অলিয়াবাদের নুরুল মোস্তফা, ডেইলপাড়ার মোহাম্মদ তৈয়ব, কলেপাড়ার নুরুল কবিরের ছেলে রাশেদুল ইসলাম, নাজিরপাড়ার নুরুল আলমের ছেলে আবছার উদ্দীন, হেলাল, মো. কামাল, মোহাম্মদ হাসান, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার আবদুল কাদেরের ছেলে মোজাহার আলম, কুলালপাড়ার মৃত আলী আহমদের ছেলে আবু তাহের প্রমুখ।
Posted ১:১৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ৩১ মে ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta