হেলাল উদ্দিন টেকনাফ :: ভোট দেওয়ার জন্য মানুষের দীর্ঘ সারি। সোমবার কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড় হাবির পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার জন্য মানুষের দীর্ঘ সারি।
কক্সবাজারের টেকনাফের চারটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে সোমবার। একমাত্র হ্নীলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতেছেন। অপর তিনটিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী এবং বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থক প্রার্থীদের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা বলছেন, এই তিনটি ইউনিয়নে নৌকার পক্ষে ছিলেন না দলের নেতা-কর্মীরা। নেতাদের অনেকে গোপনে দলীয় প্রার্থীদের বিপক্ষে কাজ করেছেন।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা একাধিকবার টেকনাফে এসেছিলেন। তাঁরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পক্ষে সমাবেশে বক্তব্য দেন। প্রার্থীদের জয়লাভ নিশ্চিত করতে উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেন তাঁরা। সমাবেশে দলীয় নেতা-কর্মীরা নৌকার পক্ষে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু বাস্তবে নৌকার পক্ষে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ ছিলেন না।
এ প্রসঙ্গে সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আমিন বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় ১১ জনকে এবং বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করায় ৪ নেতাকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এখন নৌকার ভরাডুবি কেন হয়েছে, তার অনুসন্ধান করেছে। অনুসন্ধানের তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিবেন জেলা আওয়ামী লীগ।
টেকনাফ সদরে জিতলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউর রহমান জিহাদ। টেকনাফ সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন আবু সৈয়দ। এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীককে জিতিয়ে আনার দায়দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের। সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নেতাকর্মীরা।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু সৈয়দ পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৮৬৭ ভোট। ৯ হাজার ৪৬৮ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউর রহমান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া শাহজাহান মিয়া। তিনি পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৫২ ভোট।
বিপুল ভোটে পরাজয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু ছৈয়দ হতাশার সুরে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারাই ডুবিয়েছেন নৌকা। আমি একাকী নৌকা জেতাব কী করে? ভোটকেন্দ্রে যুবলীগ-ছাত্রলীগের যাঁরা এজেন্ট হয়েছিলেন, তাঁরাও নৌকার পক্ষে কাজ করেননি। কেন করেননি দলের নেতারা অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে।
আবু ছৈয়দের অভিযোগ, এই ইউনিয়নের নির্বাচনের দায়িত্ব নিলেও আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ভোটের তিন থেকে চার দিন আগে উধাও হন। নৌকা প্রতীকের সভায় কিছুসংখ্যক নেতাকর্মীদের পাওয়া গেলেও, অনেক নেতাকর্মীদের পাওয়া যায়নি। এমনকি নির্বাচনের দিন সকাল থেকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও নেতাকর্মীরা ফোন ধরেননি। দু-তিনজন নেতা ছাড়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কাউকে পাশে পাননি তিনি (ছৈয়দ)। আসলে নৌকায় ভোট দেওয়ার মানুষ থাকলেও নেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না বলে অভিযোগ করেছেন নৌকার পরাজিত প্রার্থী আবু ছৈয়দ।
Posted ২:২৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta