কক্সবাংলা ডটকম :: পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ কমলেও নিষ্পত্তির হার কমছে না। তাই ডলারের খরচও খুব বেশি কমছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আগের তুলনায় ঋণপত্র খোলা কমেছে ১৫ শতাংশ। এই সময়ে নিষ্পত্তির হার বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
কভিড-পরবর্তী সময়ে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকে বাড়তে থাকে পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ। বাড়তে বাড়তে এই হার অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেলে আমদানিতে লাগাম টানতে নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় ঋণপত্র খোলার পরিমাণ প্রতি মাসেই কমছে, তবে বাজারে ডলারের সংকট কাটছে না। কারণ, আগের আমদানির দায় মেটাতে হচ্ছে এখন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ ২ হাজার ৪২৭ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ৮৫৮ কোটি ডলার। সে হিসাবে চার মাসের ব্যবধানে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ কমেছে ৪৩১ কোটি ডলার বা ১৫ শতাংশ। একই সময়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে ২ হাজার ৭৯৫ কোটি ৭১ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ২৪৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। চার মাসে ঋণপত্র নিষ্পত্তি বেড়েছে ৫৫১ কোটি ৮৩ লাখ ডলার বা ২৫ শতাংশ।
জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। সেই তুলনায় বাড়ছে না রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স। ফলে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। সংকট সৃষ্টি হয় মার্কিন ডলারের। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমে আসে। অর্থনীতির এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আমদানির লাগাম টানতে নানা শর্ত দেয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক। যার প্রভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ধারাবাহিকভাবে কমছে আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ।
একই সময়ে বেড়েছে নিষ্পত্তির পরিমাণ। এ সময়ে এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এর মানে গত ৬ মাস বা এক বছর আগে যেসব এলসি খোলা হয়েছিল তার দায় মেটানো হচ্ছে এখন। এতে আমদানির জন্য ডলারের খরচ আরও বেড়েছে।
আমদানিতে এলসি নিষ্পত্তি বাড়ায় আগামীতে ডলারের খরচ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, আগামী দুই মাসে খরচ আরও বাড়বে। তবে ২০২৩ সালের শুরুতে খরচ কিছুটা কমে আসবে।
এই প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘এখন যেসব এলসি নিষ্পত্তি হচ্ছে সেগুলো ৬ মাস বা এক বছর আগের খোলা ড্যাফার্ড এলসি। এর ফলে ব্যয় বাড়ছে। এতে ব্যাংকগুলোতে বেশি চাপ পড়ছে, আগামী ২ থেকে ৩ মাস অব্যাহত থাকবে। তবে নতুন এলসি খোলা যে কমেছে সেটার প্রভাব দেখতে পাব কয়েক মাস পর।’
এদিকে, আমদানি-রপ্তানির আড়ালে বিদেশে অর্থ পাচারের পুরোনো অভিযোগকে এবার পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানিতে আমরা ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং দেখতে পাচ্ছি। আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডিকে সহায়তা করা হচ্ছে, যা সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে। এর কারণে অসামঞ্জসত্যা দেখা যাচ্ছে আমদানি-রপ্তানিতে। এটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি।’
ব্যাংকিং চ্যানেলে গত অক্টোবরে রেমিট্যান্সের পরিমাণও কমেছে। একই সঙ্গে টানা ১৩ মাস ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পর দেশের রপ্তানি কমেছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় কোনো কোনো ব্যাংক এলসি খুলতে চাচ্ছে না। আমদানি দায় মেটাতে সরকারি ব্যাংকগুলোকে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫৯৪ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৭৬২ কোটি ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে রিজার্ভে চাপ বেড়েছে। ফলে আমদানি কমার পরও দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমছে। গতকাল রিজার্ভ ৩৪ দশমিক ৩০ বিলিয়নে নেমেছে, যা গত অর্থবছরের এই সময়ে ছিল ৪৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।
Posted ৩:৩২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta