শুক্রবার ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

তালেবানদের উত্থানে জঙ্গিবাদের ঝুঁকিতে বিশ্ব : শঙ্কায় থাকবে বাংলাদেশসহ ১০ দেশ

রবিবার, ২২ আগস্ট ২০২১
351 ভিউ
তালেবানদের উত্থানে জঙ্গিবাদের ঝুঁকিতে বিশ্ব : শঙ্কায় থাকবে বাংলাদেশসহ ১০ দেশ

কক্সবাংলা ডটকম(২২ আগস্ট) :: দুই দশকের চেষ্টাতেও আফগানিস্তানে তালেবানদের পরাস্ত করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধব্যয় কমাতে শেষমেশ আফগানিস্তান থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর একে বিজয় হিসেবে দেখছে সশস্ত্র তালেবান গোষ্ঠী। তালেবানরা ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই করে আফগানিস্তানকে দখল করার ঘটনা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসবাদী ও জঙ্গি দলগুলোর জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে বলে বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে এএফপি।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো আধুনিক সমরাস্ত্র সমৃদ্ধ দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তালেবানের ধৈর্য ও সতর্ক থাকার কৌশলকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সিরিয়া ও ইরাকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের পতন হলেও দলটি তালেবানদের অনুসরণ করতে পারে এমন শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

নিউ ইয়র্কভিত্তিক সুফেন সেন্টার থিংকট্যাংকের গবেষণা প্রধান কলিন ক্লার্ক এএফপিকে বলেন, ‘তালেবানের এই জয় বিশ্বের অন্য জিহাদি দলগুলোর জন্য প্রেরণা হয়ে দেখা দেবে।

এটা তাদের বিশ্বাস করতে সহায়তা করবে যে, বিদেশি শক্তিকে চাইলে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা যায়, এমনকি সেটা যুক্তরাষ্ট্রের মতো ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হলেও। আমি মনে করি ৯/১১’র ঘটনার ২০ বছর পূর্তিতে উল্লেখযোগ্য প্রোপাগা-া দেখতে পাব। এতে উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জিহাদিদের নৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করবে।’

ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রাম অন এক্সট্রিমিজমের ফেলো আয়মন জাওয়াদ আল তামিমির মতে, ‘তালেবানদের ধৈর্যের এই উদাহরণ বিশ্বের অন্য অঞ্চলের জিহাদি যারা লড়াই করছে তাদের উদ্বুদ্ধ করবে। যদিও আফগানিস্তানের উগ্রবাদীদের সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের মতো দলের মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব রয়েছে।

ইসলামিক স্টেটের নেতৃত্ব আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থানে খুশি হোক বা না হোক, অন্য জিহাদিরা একে মাইলফলক হিসেবে নেবে। অন্য দলগুলো যখন তালেবানদের আনন্দ উদযাপন করতে দেখছে, এতে তারা মনে করছে যে, তারাও যদি ধৈর্য ধরে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে তাহলে হয়তো সোমালিয়া অথবা পশ্চিম আফ্রিকায় ওই উদযাপন তারাও করতে পারবে।’

আল-কায়েদার প্রোপাগান্ডা বিভাগ আল তাহবাত ইতিমধ্যেই তালেবানদের সাধুবাদ জানিয়ে বলেছে যে, ‘আফগানিস্তানে তালেবানদের এই বিজয়ে পাকিস্তান, কাশ্মীর, ইয়েমেন, সিরিয়া, গাজা, সোমালিয়া ও মালির মুসলিম ও মুজাহিদিনরা উদযাপন করছে।’ তালেবান ও আইএসের মধ্যকার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা খুব একটা সহজ নয়।

তালেবানদের আইএসবিরোধী বক্তব্য দিতে দেখা গেলেও তালেবানদের হাত ধরেই কিন্তু আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় ইসলামিক স্টেট-খোরাসান প্রদেশ (আইএসকেপি) গঠিত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, তালেবান ও আইএসের মধ্যে আদর্শিক দ্বন্দ্ব থাকলেও বাস্তবতা থেকে লাভবান হবে আইএস। গত ১ জানুয়ারি থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত আইএস বিভিন্ন স্থানে ২১৬ বার হামলা চালিয়েছে। আর গত বছর একই সময়ে ওই হামলার সংখ্যা ছিল ৩৪।

আগামী সপ্তাহ নাগাদ আফগানিস্তানে সরকার গঠন করতে পারে তালেবান। সরকারের রূপরেখা কেমন হবে তা এখনো প্রকাশ করেনি সশস্ত্র দলটি। তবে আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তালেবানরা যে এবার সমন্বিত সরকার গঠন করবে এমন ইঙ্গিত দলটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। তালেবানরা যদি সরকার গঠন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে সমর্থ হয়, তাহলে বৈশ্বিক জিহাদিদের জন্য একে বড় বিজয় হিসেবে দেখা হবে।”

বাংলাদেশসহ ১০ দেশ শঙ্কায় থাকবে

ফাইল ছবি এখন থেকে ২৫ বছর আগের কথা। তালেবানকে সহায়তা করার দায়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো সরকারের অব্যাহত সমালোচনা করছিলাম আমি। আমার সমালোচনায় খানিকটা বিচলিত হয়ে পড়েছিল তাঁর সরকার। এ অবস্থায় তালেবানকে ‘পাইপ-লাইন পুলিশ’ হিসেবে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি।

বেনজির ভুট্টো তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসেরুল্লাহ খান বাবরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তালেবান সম্পর্কে আমাকে তাঁর সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই মেজর জেনারেল আমাকে ধীরে ধীরে নানা বিষয় জানান। আহমদ শাহ মাসুদ, বোরহানুদ্দিন রাব্বানি এবং গুলবুদ্দিন হেকমাতিয়ার মতো আরও কিছু বিখ্যাত আফগান বিদ্রোহীকে ১৯৭৫ সালে অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। বেনজির ভুট্টোর পিতা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর আমলে সীমান্ত প্রদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফ্রন্টিয়ার কর্পে মহাপরিদর্শক (আইজি)-এর দায়িত্বে ছিলেন।

তালেবানের সাবেক প্রধান প্রয়াত মোল্লা ওমরের সঙ্গেও আমার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছিলেন নাসেরুল্লাহ খান বাবর। তাঁর সঙ্গে আলাপ করে, এ অঞ্চলে তেল নিয়ে যে বড় ধরনের ‘খেলা’ চলছে তা নিয়ে তিনি খুব একটা সচেতন বলে মনে হলো না। আফগানিস্তানে শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠাই তাঁর চিন্তাকে আচ্ছন্ন করে আছে বলে মনে হলো। তা ছাড়া, পাকিস্তান যেন তালেবানের সঙ্গে বিমাতার বদলে ভ্রাতৃসুলভ আচরণ করে সেটাই ছিল তাঁর দাবি।

আফগানিস্তানে তখন এক ব্যাপক টালমাটাল সময়। বোরহানুদ্দিন রাব্বানি সরকারকে হটিয়ে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। ক্ষমতাচ্যুতরা উত্তরাঞ্চলে গিয়ে তালেবানের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছেন প্রতিরোধ, যা উত্তরাঞ্চলীয় জোট হিসেবে পরিচিত। এ জোটের অন্যতম নেতা বোরহানুদ্দিন রাব্বানি, আহমদ শাহ মাসুদের ওপর নাসেরুল্লাহ খান বাবরের প্রভাব ছিল।

তিনি এ প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তাঁদের রাজি করিয়েছিলেন। তা ছাড়া বিখ্যাত উজবেক ওয়ারলর্ড আবদুর রশিদ দুস্তমও তালেবানের সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছিলেন।

বাবরের উদ্দেশ্য ছিল সব নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কাবুলে একটি বোর্ডভিত্তিক সরকার গঠন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রর চাপ সত্ত্বেও তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে গড়িমসি করছিলেন বেনজির ভুট্টা। কারণ, পরিকল্পিত তুর্কমিনিস্তান-আফগানিস্তান-পাকিস্তান-ভারত পাইপলাইন (টিএপিআই) নির্মাণের কাজ যুক্তরাষ্ট্রের ইউনোকলের বদলে আর্জেন্টিনার তেল কোম্পানি ব্রাইডাসকে দিতে আগ্রহী ছিল তাঁর সরকার। ইউনোকলকে কাজ দিতে তাঁর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ছিল বলে স্বয়ং বেনজির ভুট্টা আমাকে বলেছিলেন। এই যখন অবস্থা, ঠিক তখনই ১৯৯৬ সালে আচমকা পতন হয় বেনজির সরকারের। ভেস্তে যায় আফগান শান্তি আলোচনা। আর পাইপলাইন প্রজেক্ট চলে যায় ইউনোকলের কাছে।

এ ঘটনার কয়েক মাস পর আমি প্রথমবারের মতো আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নেই। এরপর কান্দাহারে লাদেনের দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি ১৯৯৮ সালে। এখনো স্পষ্ট স্মরণ করতে পারি, দাড়ি না থাকায় সেবার তালেবান আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। আর উদ্ধার করেছিল আল-কায়েদা যোদ্ধারা। লাদেনের তৃতীয় সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম নাইন–ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনার দুই মাস পর কাবুলে।

ইদানীং অনেককে বলতে শোনা যাচ্ছে, বর্তমান তালেবান ২০০১ সালের তালেবানের চেয়ে আলাদা। তবে আমার বিশ্বাস, তালেবান নিজেদের পুরোনো আদর্শের প্রতি এখনো অনুগত। তবে দুই দশকে তারা নতুন কিছু কৌশল রপ্ত করেছে বলে মনে হচ্ছে। বাহিনীটির নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা ব্যবস্থা মূলত তাদের সেই পুরোনো আদর্শকে কেন্দ্র করেই চলছে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গত ১০ বছরে কাতারে তালেবানের যে রাজনৈতিক অফিস গড়ে উঠেছে, সেখানকার কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ‘রাহবরি শূরা’ বা সর্বোচ্চ পরামর্শসভা এবং আফগানিস্তানে মাঠে প্রতিরোধ সংগ্রামে নিয়োজিত নেতারাই তাঁদের সিদ্ধান্ত ঠিক করে দেন। তবে সর্বোচ্চ নেতা মোল্লা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদাই হচ্ছেন তালেবানের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামরিক শাখার হর্তাকর্তা। তিন সহকারীর সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, মোল্লা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা দেশটিতে গণতন্ত্র কতটুকু সমর্থন করবেন। ভারত সরকার যে কাবুলে নতুন সংসদ ভবন বানিয়ে দিয়েছে, তার কতটুকু ব্যবহার হবে? তাঁরা ধর্মীয় আলোকে নারী স্বাধীনতা, বিভিন্ন পক্ষের অংশগ্রহণে সরকার গঠনের কথা বলেছেন ঠিকই, কিন্তু পশ্চিমা গণতন্ত্র নিয়ে তাঁদের মধ্যে যথেষ্ট আপত্তি আছে বলে আমার ধারণা। এক তালেবান নেতা আমাকে বলেছিলেন, সৌদি আরবে তো কোনো গণতন্ত্র নেই। তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক আছে। তাহলে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে তাদের সমস্যা কোথায়। তাই মুখে তারা যত কিছু বলুক, তারা মূল আদর্শে কোনো ছাড় দেবে বলে আমার মনে হয় না।

তালেবানের এক প্রজন্ম সোভিয়েত রাশিয়াকে পরাজিত করেছে। আরেক প্রজন্ম যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করেছে ঠিকই। কিন্তু দেশ চালানো আসলেই অনেক কঠিন। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পেলে তালেবানের পক্ষে দেশ চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তালেবান ইতিমধ্যে আশ্বাস দিয়েছে, তাদের ভূমি কোনো বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে দেবে না।
কিন্তু এটা তো কথার কথা।

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ১৫টি প্রদেশে আল-কায়েদার কার্যক্রম রয়েছে। এসব আল-কায়েদা যোদ্ধার মধ্যে আফগান ও আরবের বাইরে অনেক পাকিস্তানি, ভারতীয়, বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের নাগরিক রয়েছে। ফলে এই দেশগুলো শঙ্কায় থাকবে। তাই তালেবানকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে হলে অন্তত বিশ্বের ১০টি দেশকে আশ্বস্ত করতে পারতে হবে। এরা হলো পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, চীন, ইরান, রাশিয়া (চেচনিয়া) ও যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে আশ্বস্ত করতে না পারলে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়বে। কয়েক বছরে তালেবান ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে। আইএসআইএস, আল-কায়েদা বা কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীকে এসব দেশের বিরুদ্ধে কাজ করতে আফগানিস্তানকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করেছে তালেবান।

এদিকে তালেবানের প্রধান মুখপাত্র জবিয়ুল্লাহ মুজাহিদ প্রথম সংবাদ সম্মেলনে অনেক ভালো ভালো কথা বলেছেন বটে, কিন্তু ১৯ আগস্ট দেশটির স্বাধীনতা দিবসে পতাকা নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। দেশটির পুরোনো জাতীয় পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রাকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে তালেবান। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেও কিছু সাংবাদিকের বাড়িতে তল্লাশি চালানো এবং কিছু নারী সাংবাদিককে কাবুলে কাজে বাধা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইসলামের নামে এসব হচ্ছে। কিন্তু এসবের মধ্যে তো কোনো ইসলাম নেই। এসব তো কেবল রাজনীতি।
এভাবে তালেবানের পক্ষে দেশ চালানো সম্ভব হবে না। তারা দুই দশকে বিদেশি কূটনীতিক এবং গণমাধ্যম মোকাবিলার কৌশল শিখেছে। এখন তাদের দরকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শেখা। নইলে তারা জনভিত্তি তৈরি করতে পারবে না। বুলেট দিয়ে জনমত সৃষ্টি করা যায় না। এ জন্য ব্যালট আবশ্যক। অর্থাৎ তালেবানকে নির্বাচনী ব্যবস্থায় ফিরতে হবে।

২৫ বছর আগে তালেবানকে একটি ‘পাইপলাইন পুলিশ’ হিসেবে আমার কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজকে তালেবান একটি বহুজাতিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তাই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল স্যার নিক কার্টারের উদ্ধৃতি দিয়ে আমি শেষ করতে চাই। তিনি বলেছেন, ‘নতুন তালেবানকে একটু সুযোগ দেওয়া হোক। তারা তাদের পার্থক্য প্রমাণ করতে পারে কি না, দেখা যাক।’

তবে প্রশ্ন হচ্ছে, তারা এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে তো? না পারলে আফগান সমস্যা আশপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। যা থেকে রক্ষা পাবে না পাকিস্তান, ভারত কিংবা বাংলাদেশ।

 ইসলামিক স্টেটের হামলার আশঙ্কা

ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের আফগানিস্তান অংশের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের কাবুলের বিমানবন্দর এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।

শনিবার প্রকাশিত হওয়া এক নিরাপত্তা বিষয়ক সতর্কবার্তায় ‘প্রবেশপথের বাইরে নিরাপত্তার হুমকি’ তৈরি হতে পারে উল্লেখ করে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদ দূরত্বে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র মার্কিন সরকারের প্রতিনিধি যদি কোনো ব্যক্তিকে ঐ এলাকায় যেতে নির্দেশ দেন, কেবলমাত্র তখনই কোন মার্কিন নাগরিকের ঐ এলাকায় যেতে পারেন।

মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং বিমানবন্দরে যাওয়ার বিকল্প রাস্তার বিষয়টি যাচাই করছেন।

আইএস এর হামলার সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে এর চেয়ে বেশি তথ্য দেয়া হয়নি। আইএস’ও কাবুলে হামলা করার কোনোরকম ঘোষণা দেয়নি।

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের এই বিবৃতি এমন সময়ে এসেছে যখন হাজার হাজার মানুষ আফগানিস্তান ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন এবং বিমানবন্দরের বাইরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার ও মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

AFP তালেবান কাবুলের দখল নেবার পর বহু মরিয়া আফগান যেকোন উপায়ে দেশ ত্যাগের চেষ্টা চালায়এক সপ্তাহ আগে তালেবান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে নেয়।

এর আগে থেকেই প্রতিদিন বিমানবন্দরে মানুষ ভিড় করছে কোনো একটি বিমানে ওঠার সুযোগ পাওয়ার আশায়। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের জোটের সাথে যারা কাজ করেছে অথবা যারা মানবাধিকারের মত বিষয় নিয়ে কাজ করেছে, তারা মনে করেন দেশ ছাড়তে না পারলে তালেবানের রোষের শিকার হবেন তারা।

তবে শনিবার বিমানবন্দরের প্রবেশপথের পরিস্থিতি আসলে কী ছিল, তা নিয়ে এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের প্রতিনিধি স্টুয়ার্ট রামসে জানান বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষের জটলার সামনের সারিতে থাকা অনেক মানুষ ‘পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন।’

তার বর্ণনা মতে, এটি ছিল ‘এখন পর্যন্ত নিকৃষ্টতম দিন’ এবং তাদের বিশ্বাস ঘটনাস্থলে অনেক মানুষ মারা গেছেন।

দেয়াল, কাঁটাতার সব বাধা পেরিয়ে বিমানবন্দরে ঢুকে পড়েন অনেক আফগানশনিবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে ১৭ হাজার মানুষকে বিমানে করে সরিয়ে নেয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে আড়াই হাজার মার্কিন নাগরিক রয়েছেন।

এক কর্মকর্তা জানান যেসব মার্কিন ও আফগান নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী সরিয়ে নিতে চেয়েছিল, তাদের মধ্যে ‘স্বল্প সংখ্যক’ ব্যক্তি হয়রানির শিকার হয়েছেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে আসার সময় তাদের মারধর করার ঘটনাও ঘটেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র পরে বিবিসিকে জানায় যে তারা বিমানবন্দরের প্রবেশপথের বাইরে বড় ধরনের জটলা এড়িয়ে চলতে আনুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ দিয়েছে তারা।

অন্যান্য দেশও তাদের নাগরিকদের আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করেছে।

জার্মানির সরকার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে বিমানবন্দর এখনও ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিমানবন্দরে প্রবেশ করা অনেক সময়ই অসম্ভব।’

BBC বিমানবন্দরে হাজারো মানুষের অপেক্ষাসুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে বলেছে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ‘গত কয়েক ঘণ্টায় বিশেষভাবে অবনতি’ হয়েছে।

এই মুহূর্তে কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি মার্কিন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারা তাদের দেশের নাগরিকদের এবং যেসব আফগান পশ্চিমা বাহিনীর সাথে কাজ করেছে, তাদের সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে।

৩১শে অগাস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা রয়েছে। ৩১শে অগাস্টের পর ঠিক কী হতে যাচ্ছে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

নেটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন যে তাদের জোটের বেশ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে ৩১শে অগাস্টের পরও যেন কাবুল বিমানবন্দর থেকে সেসব দেশের নাগরিকদের উড্ডয়নের অনুমতি দেয়া হয়।

তারা আশঙ্কা করছে, ৩১শে অগাস্টের মধ্যে তাদের দেশের সব নাগরিক এবং ঝুঁকিতে থাকা আফগান নাগরিকদের সবাইকে কাবুল বিমানবন্দর থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার – যিনি ২০ বছর আগে আফগানিস্তানে সেনা পাঠিয়েছিলেন – এক বিবৃতিতে মন্তব্য করেছেন যে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার যে সিদ্ধান্ত জো বাইডেন নিয়েছেন, তা ‘নির্বুদ্ধিতা, দুঃখজনক, বিপজ্জনক ও অপ্রয়োজনীয়।’

351 ভিউ

Posted ১:৪৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২২ আগস্ট ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com