মঙ্গলবার ২৬শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ২৬শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দাতাদের ছাড়ের অপেক্ষায় ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা

বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ ২০২২
197 ভিউ
দাতাদের ছাড়ের অপেক্ষায় ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা

ব্যবহারের অদক্ষতার কারণে বাংলাদেশে পুঞ্জীভূত বিদেশি সহায়তা ক্রমেই বাড়ছে। আর তাই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দাতারাও অর্থছাড় করছে না। এই অর্থছাড় নিয়েও ততোটা উদ্যোগী বা গুরুত্বারোপ না করায় পাইপলাইনেই আটকে থাকছে দাতাদের প্রতিশ্রুতি।

ফলে সরকার প্রতি অর্থবছরে যে পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে থাকে তাতেও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। যখন কোনো দাতা দেশ বা সংস্থার সঙ্গে ঋণ বা অনুদান চুক্তি সই হয় তখন তা পাইপলাইন হিসেবে জমা হয়। তবে, খরচ না হলে অর্থ ছাড় করে না দাতা দেশ বা সংস্থাগুলো।

যদিও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে করোনা-পরবর্তী বাংলাদেশে বিদেশি ঋণসহায়তা অনেক বেড়েছে। এ সময় প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় দুটিই বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা যায়, বিদেশি ঋণে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। তারপরও পাইপলাইনে আটকে আছে অলস অর্থের পাহাড়।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সময়মতো বিদেশি অর্থছাড় না হওয়ায় প্রতি বছরই পাইপলাইনে জমছে অলস অর্থ।

ইআরডি’র তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়ন সহযোগীদের দেয়া প্রতিশ্রুতির ৫০ দশমিক ৩ বিলিয়ন (৫ হাজার ৩০ কোটি) ডলার এখনও অব্যবহৃত অবস্থায়, অর্থাৎ ছাড়ের অপেক্ষায় আছে, বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে কমপক্ষে ১৫টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, প্রতিশ্রুতির এ অর্থ পাবার ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে প্রকল্পের বিপরীতে উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ঋণচুক্তি সই হয়েছিল। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিদেশি ঋণের টাকা খরচ করতে পারছে না বলে বিদেশি প্রতিশ্রুতির অর্থ পুরোপুরি ছাড় করা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নের বিপরীতে বিদেশি অর্থছাড়ে নানা ধরনের জটিল শর্ত থাকে। ওই সব শর্ত পূরণ করা সরকারের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে সময়মতো অর্থছাড় না হওয়ায় পাইপলাইনে বিপুল পরিমাণ ঋণ আটকে আছে।

সরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের সাবেক ঊর্ধ্বতন পরিচালক বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, তিন বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগে সাত থেকে আট বছর। সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়াটাই সরকারের বড় দুর্বলতা। বিদেশি ঋণ যথাসময়ে ছাড় না হওয়ার পেছনে এটি একটি কারণ। অন্যান্য কারণের মধ্যে বিদেশি ঋণের অর্থ ছাড়ে কঠোর নিয়ম-কানুন, কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সক্ষমতার অভাবকে দায়ী করেন তিনি।

ইআরডি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭১০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৭৩৮ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ এসেছে।

পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশ বিদেশি উৎস থেকে ঋণ পেত ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি ডলার। করোনার কারণে বিদেশি ঋণের প্রবাহ অনেক বেড়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের আট মাসে জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ ঋণ এসেছে বলে ইআরডি’র কর্মকর্তারা জানান।

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি অর্থ অলস পড়ে আছে জাপানের। বাংলাদেশের অন্যতম এই বন্ধু দেশটির প্রতিশ্রুতির ৯৮৭ কোটি ডলার পাইপলাইনে রয়ে গেছে। বর্তমানে জাপানের অর্থায়নে দেশে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ ঢাকায় মেট্রোরেল, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, যমুনা সেতুতে বিকল্প রেললাইন নির্মাণ ইত্যাদি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৮২ কোটি ডলার ঋণ অব্যবহৃত পড়ে আছে রাশিয়ার। রাশিয়ার অর্থায়নে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। তৃতীয় অবস্থানে আছে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ)। তাদের প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ ৭৫৫ কোটি ডলার।এ ছাড়া ভারতের ৬৫৮ কোটি ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৬০৫ কোটি ডলার এখনও পাইপলাইনে।

ইআরডির সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, সরকারি টাকা খরচের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয় না। কিন্তু বিদেশি ঋণের টাকায় কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হয়। তাই কর্মকর্তারা সরকারি টাকা খরচেই বেশি মনোযোগ দেন। সে জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতির টাকা বছরের পর বছর অলস পড়ে থাকে।

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাংলাদেশ মোট ১০ হাজার ১৩৬ কোটি ডলার বা ৯ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তা পেয়েছে। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে মিলেছে ৭ হাজার ২৮৪ কোটি ডলার। আর বাকি ২ হাজার ৮৫২ কোটি ডলার পাওয়া গেছে অনুদান হিসেবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বিদেশি ঋণের প্রয়োজন হয়। এডিপিতে বরাদ্দের ৩৯ শতাংশ অর্থের জোগান আসে বিদেশি উৎস থেকে। বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিবহনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে বিদেশি ঋণ ব্যবহৃত হয়।

উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ঋণ সহায়তা দেয় ওয়াশিংটনভিত্তিক বহুজাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। এরপর ম্যানিলাভিত্তিক সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। একক দেশ হিসেবে জাপান সবচেয়ে বেশি ঋণ দেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম দিকে খাদ্য ও পণ্য বাবদ বিদেশিদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যেত। এ ছাড়া অনুদানের অংশ ছিল বেশি। এখন সহায়তার ধরন বদলেছে। অনুদানের পরিবর্তে ঋণ বেশি। প্রকল্পের বিপরীতে এই ঋণ আসে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, তাড়াহুড়ো কিংবা শর্ট কাট প্রক্রিয়ায় বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যয়ের সুযোগ নেই। নিয়মকে পাশ কাটিয়ে কেউ এ অর্থ খরচ করতে পারবেন না। অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে অনেকগুলো প্রক্রিয়া পার করতে হয়। অর্থাৎ সরকার ও উন্নয়নসহযোগী দু’পক্ষের অনেকগুলো শর্ত থাকে। এ সব শর্ত পূরণ করেই অর্থ পেতে হয়। তাই অনেক সময়ে এই অর্থ ব্যয়ে খুব একটা আগ্রহ থাকে না কর্মকর্তাদের। এ জন্য পাইপলাইনে আটকে পড়ে অর্থ।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, আমাদের বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যবহার করার দক্ষতায় যে ঘাটতি আছে তা বাড়াতে হবে। এছাড়া স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শর্তের কারণে বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে উৎসাহও কম দেখা যায়। আমরা যদি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়াতে পারি তাহলে উন্নয়ন সহযোগীরাও প্রতিশ্রুতি দিতে ও অর্থ ছাড় করতে উৎসাহ পাবে।

তিনি বলেন, বিদেশী সহায়তার অর্থ লো-কস্ট। আমাদের উচিত স্থানীয় অর্থ ব্যবহারের পাশাপাশি বৈদেশিক অর্থ ব্যবহারও বাড়ানো। তাহলে সরকারের ব্যয় অনেকটা কমে আসবে।

197 ভিউ

Posted ২:০০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ ২০২২

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com