হেলাল উদ্দিন,টেকনাফ :: ‘বাড়ি চলো’ আওয়াজে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শরণার্থী শিবির গুলোতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।
আজ সোমবার আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবসকে সামনে রেখে রোববার সকাল থেকে উখিয়ার ২৭টি এবং টেকনাফের দুটি শরনার্থী শিবিরের রোহিঙ্গারা একযোগে ৭ দফা দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেছে।
শরনার্থী শিবির গুলোতে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা খণ্ড খণ্ড জমায়েত হয়ে এ সমাবেশ করে। এসব শিবিরে সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভাষা ও ইংরেজিতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে এসব কর্মসূচিতে যোগ দেয়। সেখানে লেখা ছিল- ‘আর কত দিন ..? চল চলো বাড়ি যাই, চলো মিয়ানমারে যাই’, ‘মিয়ানমার আমাদের মাতৃভূমি। অনুগ্রহ করে জাতিসংঘ আমাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে সাহায্য করুন’, ‘বিশ্ব সম্প্রদায় দয়া করে মিয়ানমারে আমাদের অধিকার বাঁচাতে সাহায্য করুন।
গত কয়েকদিন ধরেই রোহিঙ্গারা ‘বাড়ি চলো’ স্লোগানে এই কর্মসূচির প্রচার চালিয়ে আসছিল। তারা ক্যাম্পে ক্যাম্পে দুটি প্রচারপত্র বিলি করছিল বলে জানিয়েছে এপিবিএন। একটি প্রচারপত্রের শেষে প্রচারকারী হিসেবে ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের’ সদস্য ডা. তৈয়ব ও মো. রেজার নাম রয়েছে।
প্রচারপত্রের শেষে ‘আমরা বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গা গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের ২৫ অগাস্ট একই সংগঠনের ব্যানারে সমাবেশ হয়। সেই সমাবেশের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ।
২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরই মধ্যে মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে হত্যাকাণ্ডের জন্য মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরসাকে দায়ী করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে নয়টার সময় টেকনাফের ২৬ ও ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্প ২৭ নম্বর থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ২৬ নম্বর ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) অফিস চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশে ২৭ নম্বর ক্যাম্পের মাস্টার ফায়সাল লিখিত বক্তব্যে বলেন, “রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নির্যাতিত মুসলিম। এখন জোরপূর্বক রাষ্ট্রহীন মানুষ। ২০১৭ সালের দেশত্যাগের পর পাঁচ বছর কেটে গেছে। আর কতদিন গৃহহীন থাকব? আমরা গৃহহীন থাকতে চাই না। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। স্বদেশ মিয়ানমার নিজেদের মাতৃভূমি আরাকানে ফিরে যেতে চাই এবং সেখানে যথাযথ অধিকার নিয়ে নাগরিক হিসেবে বসবাস করতে চাই।“
“শুধু তাই নই, রোহিঙ্গারা দীর্ঘকাল মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। ১৯৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমরা নির্যাতিত, ধর্ষণ, হত্যার শিকার। বিভিন্ন সময়ে গ্রাম ও বাড়িঘর পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে।
মানবিক ভিত্তিতে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মাস্টার ফায়সাল বলেন, বাংলাদেশ আমাদের দেশ নয়। আমরা মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।
রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, ১৯৭৮, ১৯৯২, ২০১২, ২০১৬-এর ঘটনাসহ একাধিকবার মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়। শুধুমাত্র ২০১৭ সালের গণহত্যার সময় প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মানুষ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা সবাই মিয়ানমারে ফিরতে চায়।
দেশে ফিরতে রোহিঙ্গাদের ৭ দফা : প্রত্যাবাসন বিষয়ে রোহিঙ্গারা ৭ টি দাবির কথা উল্লেখ করেন সমাবেশে, তা হলো,
(১) অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন শুরু
(২) ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল
(৩) অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের নিজ গ্রামে পুনর্বাসন
(৪) মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অধিকার, নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
(৫) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা
(৬) রাখাইন রাজ্যে আইডিপি ক্যাম্প বন্ধ করা এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের গ্রামে পুনর্বাসন কর।
(৭) মিয়ানমারে নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন বন্ধ করা।
টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিছিল ও সমাবেশে মাঝি বজলুর রহমান, হোছাইন আহমদ, কালাম, জাকরিয়া উপস্থিত ছিলেন।
Posted ১২:০৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২০ জুন ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta