কক্সবাংলা ডটকম(২০ জানুয়ারি) :: দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। এখন পর্যন্ত লকডাউনের চিন্তা ভাবনা না করলেও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার।টিকাদান কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা হয়েছে।পর্যাপ্ত টিকা থাকায় প্রতিদিনই লক্ষাধিক মানুষকে টিকার আওতায় আনা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে মোট ১৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭১ হাজার ২৫১ ডোজ টিকা দেওয়া শেষ হয়েছে। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত এই টিকা দেওয়া হয়।
এর মধ্যে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন নয় কোটি ১৩ লাখ ২২ হাজার ৫৩৮ জন। আর পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ ৭৫ হাজার ২৭২ জন নিয়েছেন দ্বিতীয় ডোজের টিকা। এছাড়া বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ৭৬ হাজার ৭৪১ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সবশেষ ১৯ জানুয়ারি সারাদেশে মোট ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৭৫ জন টিকা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রথম ডোজের টিকা নেন ৯ লাখ ৩০ হাজার ৭০০ জন। আর তিন লাখ ১১ হাজার ৩৪ জন নেন দ্বিতীয় ডোজের টিকা।
এসময়ের মধ্যে প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে পুরুষ চার লাখ ৬৭ হাজার ৪১১ জন ও নারী চার লাখ ৬৩ হাজার ২৮৯ জন। অপরদিকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৬৮ হাজার ২৬৩ জন ও নারী রয়েছেন এক লাখ ৪২ হাজার ৭৭১ জন।
দেশে এখন পর্যন্ত আট কোটি ৪১ লাখ ৬১ হাজার ২৩৪ জন টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে আট কোটি ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩১৯ জন, পাসপোর্টের মাধ্যমে এক কোটি ২৮ লাখ ১৫০ জন এবং জন্মসনদের মাধ্যমে ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৫ জন নিবন্ধন করেন। আর বাকি টিকাগুলো দেওয়া হয় নিবন্ধন ছাড়া।
দেশে গত বছরের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সারাদেশেই শুরু হয় টিকাদান কার্যক্রম। বর্তমানে দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, সিনোফার্ম ও মডার্নার টিকা দেওয়া হচ্ছে।
উদাসীনতায় বাড়ছে করোনা ঝুঁকি
দেশে ফের বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গত পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে গত মঙ্গলবার। দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর তালিকায় সবার ওপরে জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা।এদিকে সংক্রমণ রোধে জারি করা হয়েছে সরকারি বিধিনিষেধ। সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এসব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৮ হাজার ৪০৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা গত বছরের ১৩ আগস্টের পর থেকে সর্বোচ্চ শনাক্ত। রাজধানীতে করোনা সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর দেশে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকেই করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।
করোনার ওমিক্রন ধরন নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজীর আহমেদ বলেন, ‘ওমিক্রন অত্যন্ত ছোঁয়াচে, যা খুব দ্রুত ছড়ায়। ইতিমধ্যেই অনেক পরিবারের সবাই আক্রান্ত। আক্রান্তের যে রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে প্রকৃতভাবে তার চেয়ে ৮ থেকে ১০ গুণ বেশি হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। মানুষ যে পরিমাণে আক্রান্ত হচ্ছে এর ক্ষুদ্র পরিমাণও যদি হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং জীবন ঝুঁকিতে পড়ে, তাহলে সেই সংখ্যাটাও খুব কম হবে না।’
এদিকে গতকাল বুধবার সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না অনেকেই। মাস্ক ছাড়াই ঘুরছেন রাস্তায়। মাস্ক নিয়ে বের হলেও কেউ রাখছেন পকেটে, কেউ রাখছেন থুতনিতে। বাজারে, গণপরিবহনে কিংবা অলিগলির আড্ডায় সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই।
মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মাহফুজ চৌধুরী বলেন, ‘সকালে অফিসে আসছি। মাঝেমধ্যে একটু বাইরে আসি। তখন মাস্ক খুলে রাখি। সব সময় মাস্ক পরে থাকতে অস্বস্তি লাগে।’ ফুটপাতের দোকানি রিয়াজুল আলম বলেন, ‘মাস্ক পইড়া আর কি হইব? টিকা তো নিসিই।’
ওমিক্রন মোকাবিলায় আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। প্রায় সব বাসেই গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হচ্ছে। চালক-হেলপার থেকে শুরু করে বেশির ভাগ যাত্রীর মুখেই মাস্ক নেই। গাবতলী-মতিঝিল রুটের ৮ নম্বর বাসের হেলপার মো. রবিন বলেন, ‘সারা দিন মাস্ক মুখে রেখে কথা বলা কষ্ট। তাই মাস্ক খুলে রাখি।’
স্বাস্থ্যবিধি এবং মাস্কের যথাযথ ব্যবহার নেই হাসপাতালগুলোতেও। ঢাকা মেডিকেলে রোগী নিয়ে এসেছেন ফরিদ উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘রোগীর চিন্তায় অবস্থা খারাপ। মাস্ক নিয়ে কখন চিন্তা করব?’ স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না বাজার, মার্কেট এবং রেস্তোরাঁগুলোতে। চানখাঁরপুলের এক রেস্তোরাঁয় জাভেদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এত বাজে দিন আসছে যে টিকা কার্ড দেখায়া খাইতে হবে?’
সার্বিক বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রতিদিন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করছেন, সতর্ক করছেন। তারপরও অনেকে সচেতন হচ্ছেন না। এভাবে সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রস্তুতি ছাড়া লকডাউন দেওয়ার কারণে দেশের কয়েক কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। আমরা চাই না তার পুনরাবৃত্তি হোক। সরকারকে এসব নিয়ে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে পরিস্থিতি কিছুটা হলেওt বদলাবে।’
Posted ১:০১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারি ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta