কক্সবাংলা ডটকম(২২ জুলাই) :: শোকের চাদরে মোড়ানো দেশে ক্রিকেট কিংবা খেলাধুলা কতটুকুই বা উষ্ণতা ছড়াতে পারে! তবু জগতের নিয়মে জীবনের তাগিদে সবকিছু এগিয়ে যায়।
বুকে পাথর চেপে লোকে পথে বের হয় জীবিকার তাগিদে। ক্রিকেটানন্দে কয়েক ঘণ্টা বুঁদ থাকার আশায় হাজার বিশেক লোক ভিড় করে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। তাদের চাওয়া পূরণ করে ক্রিকেট দলও জিতে যায় রোমাঞ্চ ও উত্তেজনার ঢেউ পেরিয়ে।
‘শোককে শক্তিকে পরিণত করা’- অতি ব্যবহারে কথাটি অনেকটিই ক্লিশে। তবে কাজটি তো করা খুব কঠিন! বাংলাদেশ ক্রিকেট দল করে দেখাল সেটিই। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে ৮ রানে হারিয়ে তারা জিতে নিল সিরিজ।
বিমানবাহিনীর জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশের নানা আয়োজন ছিল ম্যাচের আগে। ক্রিকেটারদের হৃদয়ও ছিল মলিন, সেটির ছাপ ছিল তাদের চেহারায়। কিন্তু মাঠে নেমে তারা জ্বলে উঠলেন দারুণভাবে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় এটিই প্রথম। শ্রীলঙ্কায় সিরিজ জয়ের রেশ তরতাজা থাকতেই ধরা দিল আরেকটি দারুণ জয়। লিটন কুমার দাসের নেতৃত্বে তিনটি সিরিজ জয় হয়ে গেল কেবল পাঁচ সিরিজেই।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে জাকের আলির লড়িয়ে ফিফটিতে মঙ্গলবার ২০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ১৩৩ রান। সেই রান তাড়ায় ৪৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে পাকিস্তান। কিন্তু ফাহিম আশরাফের বীরোচিত ব্যাটিংয়ে অভাবনীয় এক জয়ের সম্ভাবনা জাগায় তারা। তবে শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারের ফয়সালায় সমর্থকদের হতাশ করেনি লিটনের দল।
উইকেট আগের ম্যাচের মতোই ছিল অনেকটা মন্থর। বল থমকে এসেছে কিছুটা, বাউন্স ছিল অসমান। তার পরও ১৩৪ রানের লক্ষ্য নাগালের বাইরে ছিল না। কিন্তু সেই লক্ষ্যই ভীষণ দুরূহ হয়ে ওঠে বাংলাদেশের দুর্দান্ত বোলিংয়ে।
প্রথম উইকেটটি ছিল উপহার। প্রথম ওভারেই রান আউট সাইম আইয়ুব। এরপর যেন বয়ে যায় উইকেট-প্রপাত। তাসকিন আহমেদের বিশ্রামে একাদশে ফেরা শরিফুল ইসলামের শিকার মোহাম্মাদ হারিস ও ফাখার জামান। তানজিম হাসানের দুর্দান্ত দুটি ডেলিভারিতে পরপর দুই বলে শূন্যতে শেষ হাসান নাওয়াজ ও মোহাম্মাদ নাওয়াজ।
পঞ্চম ওভারেই ১৫ রানে তখন ৫ উইকেট নেই পাকিস্তানের!
এই সংস্করণে এত কম রানে ৫ উইকেট হারানোর নজির তাদের আর নেই। বাংলাদেশেরও এত কম রানে ৫ উইকেট অর্জনের কীর্তি এটি প্রথম।
এরপর উইকেটের মিছিলে কিছুটা বিরতি। তবে স্বস্তি ফেরেনি পাকিস্তানের। অধিনায়ক সালমান আলি আগার (২৩ বলে ৯) রানের যন্ত্রণাময় উপস্থিতি শেষ করেন মেহেদি।
পাকিস্তানের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত রান ১৮!
একটু পর মেহেদি ফিরিয়ে দেন খুশদিল শাহকেও (১৩)।
পাকিস্তানের রান তখন ৭ উইকেটে ৪৭। তাদের সর্বনিম্ন দলীয় রান কত, বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন দলের স্কোর সবচেয়ে কম, নানা পরিসংখ্যানের খোঁজাখুঁজি তখন চলছে।
কিন্তু সেই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়েও জয়ের ছবি আঁকছিলেন ফাহিম আশরাফ। দারুণ পাল্টা আক্রমণে তিনি এগিয়ে নেন দলকে। সঙ্গী পান আব্বাস আফ্রিদিকে (১৩ বলে ১৯)। পরে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন অভিষিক্ত আহমেদ দানিয়ালও (১১ বলে ১৭*)।
কিন্তু ক্যারিয়ার-সেরা ইনিংস খেলেও শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেননি ফাহিম (৩২ বলে ৫১)। শেষ ওভারে পাকিস্তানের শেষ উইকেটের বিদায়ে জয়ের গর্জন ওঠে গ্যালারিতে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওভারে হারায় মোহাম্মদ নাঈম শেখকে (৭ বলে ৩)। তানজিদ হাসানের বদলে একাদশে জায়গা পাওয়া ব্যাটসম্যান উইকেট হারান কিপারের ওপর দিয়ে বল পাঠানোর চেষ্টায়।
ফাহিম আশরাফের টানা দুই বলে পারভেজ হোসেন ইমনের ছক্কা ও চারে ছিল পাল্টা আক্রমণের ইঙ্গিত। কিন্তু সেই হাওয়া পাল্টে যায় দ্রুতই। ৬ রানে জীবন পাওয়া লিটন কুমার দাস ৮ রানেই বিদায় নেন পুল খেলে। ওই ওভারেই তাওহিদ হৃদয়ের (০) রান আউট ছিল যেন আত্মহত্যা।
পরের ওভারে পারভেজও (১৪ বলে ১৩) যখন ফিরলেন আলতো ক্যাচ দিয়ে, ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ভেঙে পড়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশের ইনিংস। নড়বড়ে দেয়ালকে পতন থেকে রক্ষা করেন জাকের আলি ও শেখ মেহেদি হাসান।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিং যেন প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন মেহেদি। সবশেষ পাঁচ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে তার মোট রান ছিল ১৭। অবশেষে এ দিন বুঝি তার মনে হলো, ‘আমি তো অলরাউন্ডার!’ দুটি করে চার-ছক্কায় ২৫ বলে ৩৩ রান করেন তিনি। তার ৬০ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস এটি।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে রান আসে ৫৩।
এরপর শামীম হোসেন (১) ও তানজিম হাসানের (৭) দ্রুত বিদায়ে আবার পথচ্যুত হয় ইনিংস। সেখান থেকে দলকে ১৩০ পার করানোর কৃতিত্ব বলতে গেলে জাকেরের একার। বেশ কিছু ডেলিভারিতে তিনি রান নিতে পারেননি, কয়েকটি ডেলিভারিতে রান নেননি স্ট্রাইক ধরে রাখতে। সব পুষিয়ে দেন তিনি পাঁচটি ছক্কায়। ৩২ রানে জীবন পাওয়াটাও কাজে লাগান তিনি।
শেষ ওভারে আব্বাস আফ্রিদিকে দুটি ছক্কায় স্পর্শ করেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার তৃতীয় ফিফটি।
আগের ম্যাচে ভালো বোলিং করা সালমান মির্জা এই ম্যাচেও দারুণ বোলিংয়ে নেন দুটি উইকেট, অভিষিক্ত পেসার আহমেদ দানিয়েলের প্রাপ্তিও দুটি।
তখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের সম্ভাবনা জিইয়ে ছিল ভালোভাবেই। একটু পরই তা পরিণত হয় ধ্বংস্তুপে। এরপর লড়াই জমে ওঠে বটে, কিন্তু ম্যাচের ভাগ্যে বদল আসেনি।
এই মাঠেই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ নামবে হোয়াইটওয়াশ সাফল্যের আশায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৩ (নাঈম ৩, পারভেজ ১৩, লিটন ৮, হৃদয় ০, জাকের ৫৫, মেহেদি ৩৩, শামীম ১, তানজিম ৭, রিশাদ ৮, শরিফুল ১, মুস্তাফিজ ০*; সালমান মির্জা ৪-১-১৭-২, ফাহিম ৩-০-২০-১, দানিয়াল ৪-০-২৩-২, মোহাম্মাদ নাওয়াজ ৩-০-১৯-১, সাইম ১-০-৩-০, খুশদিল ১-০-১২-০, আফ্রিদি ৪-০-৩৭-২)।
পাকিস্তান: ১৯.২ ওভারে ১২৫ (ফাখার ৮, সাইম ১, হারিস ০, সালমান আলি আগা ৯, হাসান নাওয়াজ ০, মোহাম্মাদ নাওয়াজ ০, খুশদিল ১৩, আফ্রিদি ১৯, ; মেহেদি ৪-০-২৫-২, শরিফুল ৪-০-১৭-৩, মুস্তাফিজ , তানজিম ৪-০-২৩-২, রিশাদ )।
ফল: বাংলাদেশ ৮ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: জাকের আলি।
Posted ১০:৪০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta