কক্সবাংলা ডটকম(২০ জানুয়ারি) :: সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ওপেন সিক্রেট। আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে এক হাজারের বেশি চিঠি এসেছে তৃণমূল পর্যায় থেকে।
এই অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে।
প্রথমেই উঠে মনোনয়ন নিয়ে নানা অভিযোগ। বলা হয় যে, যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি, জনপ্রিয় ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। অনেক স্থানেই অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড, বিতর্কিত ব্যক্তি, খুনের আসামী, ধর্ষণের আসামী, যুদ্ধাপরাধীর আত্মীয়, এরকম বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তিদেরকে মনোনয়ন দেয়ার অভিযোগ আসে। আর এইসব অভিযোগের ভিত্তিতে তৃণমূলে ব্যাপক বিদ্রোহ হয়। অনেক স্থানেই জনপ্রিয় নেতারা চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের অবস্থান ভাল থাকলেও আস্তে আস্তে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাপট বাড়তে থাকে এবং পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এসে দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগের চেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীরাই বেশি বিজয়ী হয়েছেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন যে, তৃণমূল থেকে যে প্রার্থীদের নাম পাঠানো হয়েছে সেটি অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ হয়নি এবং পক্ষপাতপূর্ণ হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এমপিরা তাদের নিজস্ব ব্যক্তিদেরকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য যেমন চেষ্টা করেছেন, তেমনি ব্যাপকভাবে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে।
টাকার বিনিময়ে অযোগ্য ব্যক্তির নাম ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে বিভিন্ন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন। এ সংক্রান্ত অভিযোগ দেয়া হয়েছে ধানমন্ডি ৩ নাম্বারে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে। আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে এরকম এক হাজারের বেশি অভিযোগ জমা হয়েছে। এই অভিযোগের মধ্যে কিছু কিছু একেবারেই ভিত্তিহীন, বানোয়াট, আক্রোশ এবং বিদ্বেষপ্রসূত। কিন্তু কিছু কিছু অভিযোগ একেবারেই ফেলে দেয়ার মত নয় বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে, অভিযোগগুলোকে বিভাগ হিসেবে ভাগ করা হচ্ছে এবং প্রত্যেকটি অভিযোগের একটি সংক্ষিপ্তসার তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো প্রত্যেকটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকের হাতে দেয়া হবে এবং তারা এ বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত করবেন। তবে শুধু যে তৃণমূল মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে এমন নয়। আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধেও মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই ঢাকায় এসে কেন্দ্রীয় অনেক নেতাকে টাকা দিয়েছেন, তারা মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। আর এ সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে কোন মনোনয়নের ক্ষেত্রে কার কি ভূমিকা ছিলো সেটিও বিচার-বিবেচনা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, বিপুল সংখ্যক ইউনিয়ন পরিষদে কিছু কিছু মনোনয়নে ভুলত্রুটি হতেই পারে। আমরা সবসময় তৃনমূলকে বলেছিলাম তারা যেন জনপ্রিয়, যোগ্য এবং আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত ব্যক্তির নাম পাঠায়। কিন্তু এরকম ক্ষেত্রে কিছু কিছু ব্যত্যয় ঘটেছে। তবে এই ব্যত্যয় যারাই ঘটিয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করা হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না হয়, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ মনযোগী হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রগুলো বলছে যে, করোনার প্রকোপ কমে গেলেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় আলোচনার পাশাপাশি মনোনয়ন বাণিজ্যের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে এবং এর মধ্যেই সাংগঠনিক সম্পাদকরা আসলেই মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে কিনা, মনোনয়ন বাণিজ্য হলে কতটুকু হয়েছে, কার কি ভূমিকা ছিলো ইত্যাদি বিষয়গুলো তদন্ত করবে। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র বলছে, মনোনয়ন বাণিজ্যের চেয়েও এমপিদের বিতর্কিত ভূমিকার জন্যেই বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে।
Posted ২:২৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২১ জানুয়ারি ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta