কক্সবাংলা রিপোট(২৩ জুলাই) :: দেশের উপকূলীয় কক্সবাজার জেলার সাগরে ৬৫দিন মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত ১২টায়। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সাগরে মাছ শিকারের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন কক্সবাজার উপকূলের লক্ষাধিক জেলে। মহামারী করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে ও ৬৫ দিনের সমুদ্রে মৎস্য অবরোধের কারণে বেকার বসে থেকে ধার-দেনা করে চলতে হয়েছে কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলীয় জেলেদের।আর প্রস্তুতির শেষ দিনে বৃহস্পতিবার জেলেরা নতুন করে বিনিয়োগ করে সমুদ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, জেলার বিভিন্ন স্থানে লাখো জেলে শ্রমিক থাকলেও তাঁদের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৩৯৩ জন এবং ট্রলারের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।জেলার মৎস্য বন্দর খ্যাত কক্সবাজার শহরের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার ছাড়া এসব জেলেদের আর কোনো পেশার অভিজ্ঞতা নেই।
কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি ওসমান গণি জানান,বৃহস্পতিবার মধ্যরাত ও শুক্রবার ভোর থেকে জেলার প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ফিশারিঘাট,কস্তুরাঘাট, কলাতলী ও দরিয়ানগর,সদরের খুরুস্কুল, চৌফলদন্ডী ,টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া,উখিয়া ও পেকুয়ার তিন হাজারের বেশি ট্রলার গভীর সাগরে মাছ ধরতে নেমে পড়বে। সোমাবার অমাবশ্যার প্রভাবে উপকূলের সাগরের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে সাগর বেশি ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ সময়ে। গত ৬৫দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কক্সবাজারের অন্তত ১০ হাজার মৎস্য ব্যবসায়ী বেকার হয়ে পড়েন। জেলার হাটবাজারগুলোতেও মাছের সংকট দেখা দেয়। গত ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর মাছের বংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় আশা করছি এবার বিপুল মাছ পাওয়া যাবে।
জেলেরা জানান, মাঝারী কিংবা বড় সাইজের ট্রলার নিয়ে সাগরে নামতে খরচ হয়ে থাকে দেড় থেকে দু লাখ টাকা। এবার ৬৫ দিন বেকার থাকায় পুঁজি শেষ করে ধার-দেনায় জর্জরিত তারা। পাশাপাশি আড়তদার কিংবা দাদনদাররাও খুব একটা ঝুঁকি নিতে রাজি নন।
বরফকল মালিকরাও জানিয়েছেন বছরের পুরোটাই তাদের টেকনিশিয়ান সহ শ্রমিকদের বেকার বসিয়ে টাকা গুণতে হয়।তবে সাগরে আবার মাছ ধরা শুরু হওয়ায় সংকট অনেকটা কেটে যাবে।
কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান,ভারী বষণ সত্বেও জীবিকার তাগিদে শুক্রবার থেকে ফিসারীঘাট থেকে শত শত ট্রলার গভীর সাগরে মাছ শিকারে নেমে পড়বে। ট্রলারগুলো মাছ ধরে কয়েকদিন পর ঘাটে ফিরতে শুরু করলেই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করবে।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস.এম. খালেকুজ্জামান বিপ্লব জানান,মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, জেলার বিভিন্ন স্থানে লাখো জেলে শ্রমিক থাকলেও তাঁদের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৩৯৩ জন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে নিষেধজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে। চলমান ভরা মৌসুমে প্রায় এক লাখ জেলে সাগরে ইলিশ শিকারে নামতে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, বর্ষা মৌসুমে সাগরে পানি বৃদ্ধি পেলে তখন বেশি ইলিশ ধরা পড়ে জেলেদের জালে।এবার দুই মাস বন্ধ থাকায় মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে।আশা করছি মৌসুমের শুরুতেই প্রচুর ইলিশ মিলবে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি করার লক্ষে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরো করলেও তা কেবল মাত্র চট্টগ্রামের ২৫৫টি ফিশিং বোডের জন্য বলবৎ ছিলো। গত বছর থেকে সাগরে মাছ আহরণের জন্য ব্যবহৃত যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।এর প্রতিবাদে জেলেরা আন্দোলন করলেও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে। এতে চরম বিপাকে পড়েন এ পেশার সাথে জড়িত জেলে পরিবার, ট্রলার মালিক-শ্রমিক, আড়তদার, দাদনদার, বরফকলের সাথে সম্পৃক্ত সহ জাল প্রস্তুতকারী, তেল সরবরাহকারী, খাবার সরবরাহকারী লাখ লাখ পরিবার।
Posted ৩:১৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ জুলাই ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta