কক্সবাংলা ডটকম(১২ নভেম্বর) :: স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ৩৭তম স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে সেতুর মাওয়া প্রান্তে পিয়ার-৯ ও পিয়ার-১০ এর ওপর ৩৭তম স্প্যান স্থাপন করা হয়। এতে সেতুর সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারের বেশি দৃশ্যমান হলো। এখন বাকি আছে মাত্র চারটি স্প্যান।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের এ খবর নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে স্প্যান ২-সি পিয়ারে বসানো হয়। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১১টায় স্প্যানটি লৌহজংয়ের মাওয়ার কুমারভোগে অবস্থিত কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টিল ট্রাস জেটি থেকে তিয়ান-ই ক্রেনে করে পিয়ারের উদ্দেশে রওনা দেয়। ৩০ মিনিট পরেই সেটা কাঙ্ক্ষিত পিয়ারের কাছে পৌঁছে যায়।
সফলভাবে ২-সি স্প্যান বসানোর পর সেতুর মোট পাঁচ হাজার ৫৫০ মিটার দৃশ্যমান হলো। আর বাকি আছে মাত্র চারটি স্প্যান। এই চারটি স্প্যানের মধ্যে দুইটির রঙ করা শেষ হয়েছে। বাকি দুইটির রঙ করার কাজ শেষের পথে। ৩৬তম স্প্যান বসানোর ছয় দিনের মাথায় বসলো ৩৭তম স্প্যান। গত মাসে (অক্টোবরে) চারটি স্প্যান বসানো হয়েছে।
“>
অন্যদিকে, ১৬ নভেম্বর পিয়ার ১ ও ২ নম্বরে ৩৮তম স্প্যান ‘১-এ’, আগামী ২৩ নভেম্বর পিয়ার ১০ ও ১১ নম্বরে ৩৯তম স্প্যান ‘২-ডি’, ২ ডিসেম্বর পিয়ার ১১ ও ১২ নম্বরে ৪০তম স্প্যান ‘২-ই’ এবং ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ ৪১ নম্বর স্প্যান ‘২-এফ’ বসবে ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ারের ওপর।
পদ্মা সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসানো হবে ৪১টি স্প্যান। এই স্প্যানের ছোট ছোট অংশগুলো প্রথমে তৈরি করা হয়েছে চীনে। পরে জাহাজে করে দীর্ঘ সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে আনা হয় বাংলাদেশের কন্সট্রাকশন এলাকায়। সেখানে ছোট অংশগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি ঝালাই দিয়ে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রত্যেকটি স্প্যান তৈরি করা হয়। তারপরে প্রতিটি স্প্যান ধূসর রঙে রাঙিয়ে পিয়ারে তোলা হয়। তবে, তার আগে কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টিল ট্রাস জেটি থেকে তিয়ান-ই ক্রেনে করে পিয়ারের উদ্দেশে রওনা দেয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও কারিগরি জটিলতা না থাকলে একদিনেই একটি স্প্যান পিয়ারের ওপর স্থাপন করা হয়। তবে আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলে, আলোক স্বল্পতা দেখা দিলে, নদীতে তীব্র স্রোত বা নাব্য সংকট থাকলে কখনও কখনও স্প্যান বসাতে দুই দিন লেগে যায়।
মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আব্দুল মোমেন লিমিটেড।
এদিকে, স্প্যান বসানোর পাশাপাশি সেতুর অন্যান্য কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। সেতুর মাসিক অগ্রগতির রিপোর্ট অনুসারে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ২৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে বসানো হয়েছে ১১৬৬টি এবং ২৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১৬৪৬টির বেশি বসানো হয়ে গেছে। সেতুর উভয় প্রান্তে ভায়াডাক্টের ৪৮৪টি সুপার-টি গার্ডারের মধ্যে স্থাপন হয়েছে ২৫৮টি। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৯০ দশমিক ৫০ ভাগ। সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এবং শেষ হওয়ার সংশোধিত শিডিউল ২০২১ সালের জুন মাসে। যদিও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন কাজ শেষ হতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। মূল সেতুর চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। নদীশাসন কাজের চুক্তিমূল্য আট হাজার ৭০৭ দশমিক ৮১ কোটি টাকা। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া খাতে বরাদ্দ এক হাজার ৪৯৯ দশমিক ৫১ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ, পুর্নবাসন ও পরিবেশ খাতে মোট বরাদ্দ চার হাজার ৩৪২ দশমিক ২৬ কোটি টাকা। অন্যান্য খরচ যেমন: পরামর্শক, সেনা নিরাপত্তা, ভ্যাট, আয়কর, যানবাহন, বেতন, ভাতাদি অন্যান্য খাতে বরাদ্দ তিন হাজার ৫১০ দশমিক ৪২ কোটি টাকা।
সেতুতে মোট ৪২ পিলারে বসানো হবে ৪১টি স্প্যান। সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। এ ছাড়া, দুই হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের বসানো স্প্যানগুলোতে এসব স্ল্যাব বসানোর কাজ চলমান আছে। মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে চারটি স্প্যানের মধ্যে শুধু দুইটির পেইন্টিংয়ের কাজ বাকি আছে।
মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর উপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।
Posted ৫:০৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta