কক্সবাংলা ডটকম(৪ আগস্ট ) :: রহস্যঘেরা কাহিনী, নাটকীয় সংলাপ আর ক্লাইমেক্স যেন শেষই হচ্ছে না চিত্র নায়িকা পরিমনিকে ঘিরে। সিনেমার জগতে ততটা হিট না হলেও এই মুর্হুতে আলোচনা সমালোচনায় সুপারহিট। সেইসাথে প্রশ্নের মুখে তার বেপরোয়া ও বিলাসী জীবনযাপন।
চিত্রনায়িকা পরী মনি। যার অভিনীত ২৪টি সিনেমার মধ্যে ২২টিই ফ্লপ। তবুও তিনি ঢাকাই চলচ্চিত্রে আলোচনার শীর্ষে।
বড়-বড় মানুষজনের সাথে ঘনিষ্ঠতা, কোটির টাকার গাড়ি হাকানো, আর বনানীতে বিলাসবহুল জীবনযাপন; তাকে এনেছে আলোচনা-সমালোচনায়। বিশেষ করে গত ৮ জুন ঢাকার বোটক্লাবে ব্যবসায়ী নারিসরুদ্দিনের বিরুদ্ধে পরীমনির ধর্ষণচেষ্টা মামলার পর ক্লাইমেক্স যেন আরো তুঙ্গে ওঠে। নাসিরুদ্দিন ছাড়া পাবার মাসখানে পেরুতেই, এবার পরিমনির বাসায় র্যাবের অভিযান।
র্যাব বলছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এই অভিযান। বুধবার বিকালে বনানীর লেক ভিউ ১৯/এ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে বিপজ্জনক আইস,এনএসডিসহ বিপুল পরিমাণ মাদকসহ চিত্রনায়িকা পরীমনিকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার রাত ৮টার দিকে এ চিত্রনায়িকাকে তার বাসা থেকে বের করে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে র্যাব সদরদপ্তরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই অভিযানের মধ্য দিয়ে আইনি গ্যাড়াকলে পড়ে গেলেন আলোচিত পরীমনি।
অভিযানে চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসায় অভিযানে গিয়ে তাজ্জব বনে গেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ফ্লাটে ঢুকেই তারা দেখেন থরে থরে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন ব্রান্ডের মদের বোতল। দেখে মনে হচ্ছিল, অভিনেত্রীর বাসাটা যেন ছোটখাটো একটা মদরে বার।
বুধবার বিকালে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসায় অভিযান শুরু হয়। দীর্ঘ অভিযান শেষে পরীমনির বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ মাদক গাড়িতে করে নিয়ে যায় র্যাব।
তবে এ রিপোর্ট লেখার সময় রাত ৮টা পর্যন্ত পরীমনিকে গাড়িতে তুলতে পারে র্যাব। হাজার হাজার জনতার ভিড়ের কারণে নায়িকাকে গাড়িতে তুলতে হিমশিম খায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এদিন বিকালে র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা বনানীতে আলোচিত এই নায়িকার বাসার সামনে অবস্থান নেন। এরপর র্যাবের কয়েকজন সদস্য পরীমনির বাসায় যান। র্যাব পরিচয় দিলেও পরীমনি দরজা খুলেননি। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার বাসায় ঢুকতে সক্ষম হন।
সূত্রে জানা গেছে, নায়িকা পরীমনি ও তার পরিচিত কয়েক জনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি ও ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এ অভিযান।আরও জানা গেছে পিয়াসা-মৌ-জিসান-মিশু সিন্ডিকেটের সদস্য নায়িকা পরিমণি। শারীরিক সৌন্দর্য ও গ্লামারের আড়ালে মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে, নারী পর্নোগ্রাফি ও অস্ত্র ব্যবসা, ব্ল্যাকমেইলিং, কোটিপতির দুলালদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে কৌশলে টাকা বাগিয়ে নেয়া ছিল তার অন্যতম কাজ। তার সম্পদের হিসাব দেখে রীতিমতো হতভম্ব অনেকেই। তার নিজের কোটি টাকার ফ্ল্যাট ও গাড়ি যা কোন দেশি নায়িকার কাছে অনেকটা স্বপ্নের মতো। কিন্তু ৮/১০টি ছবি করে এতো সম্পদের পাহাড় অনেকে হতভম্ব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পিয়াসার পাপের খতিয়ান বেশ দীর্ঘ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছিল। বিভিন্ন মহল থেকে আসা অভিযোগের সূত্র ধরে গোপন তদন্ত চলছিল। বিশেষ করে পরিমণির প্রেমের ফাঁদে পড়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ব্ল্যাকমেইল করে দিনের পর দিন তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছিলেন।
এ পরিমণি সিন্ডিকেটের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য রয়েছে, যা আজ-কালের মধ্যে অনেকটা খোলাসা হতে পারে।
জানা যায়,গত জুন মাসে রাজধানীর একটি ক্লাবে পরীমণিকে হেনস্তা করার অভিযোগ এনে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে গত ১৩ জুন উত্তরা বোট ক্লাবের সভাপতি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনেন চিত্রনায়িকা পরিমনি। প্রতিকার পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন পরিমনি। জানান, কিছু একটা খাওয়ানো পর ধর্ষণচেষ্টা চালান তিনি, করা হয় হত্যাচেষ্টাও।
এরপর সাভার থানায় ধর্ষণ চেষ্টা ও হত্যার অভিযোগে নাসির উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমণি। পরে নাসির উদ্দিনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়ায় স্বস্তিও প্রকাশ করেন অভিনেত্রী পরিমণি। নাসির উদ্দিনের করা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন তিনি। যদিও প্রধান অভিযুক্ত নাসির গ্রেফতারের কয়েক দিন পরই জামিনে মুক্তি পেয়ে যান।
পরীমণির পর আটক প্রযোজক রাজ
পরীমণিকে আটকের পর এবার তার সহযোগী নজরুল ইসলাম রাজের বাসায় অভিযান চালিয়েছে র্যাব। অভিযান শেষে তাকে আটক করে র্যাব সদর দফতরে নেওয়া হয়েছে।
রাজ পরীমণির প্রথম ছবি ‘ভালোবাসা সীমাহীন’-এর প্রযোজক ও রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার।
বনানীর সাত নম্বর সড়কে তার বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, মিশু নামে একজনকে গ্রেফতারের পর রাজ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে রাজের বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, অভিযানে রাজের বাসা থেকে মদ, মাদক গ্রহণের বিভিন্ন সরঞ্জাম ও বিকৃতি যৌনাচারে লিপ্ত থাকার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।