কক্সবাংলা ডটকম :: বড় দিনের একদিন আগে চাকরি হারালেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর (পিএসজি) কোচ টমাস টুখেল। নেইমার-এমবাপ্পেদের জার্মান এই কোচকে বরখাস্ত করেছে পিএসজি।
আগের রাতেই লিগ ওয়ানে বড় জয়ে পেয়েছে পিএসজি। নেইমারবিহীন পিএসজি ঘরের মাঠে স্ত্রাসবুরকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দেয়। এর পরদিনই চাকরি হারানোর খবর শুনলেন টুখেল।
জার্মান এই কোচের সঙ্গে পিএসজির চুক্তি বাতিলের খবর প্রকাশ করেছে জার্মান পত্রিকা বিল্ড ও ফরাসি পত্রিকা লেকিপে। বিসিবিও একই খবর প্রকাশ করেছে। যদিও পিএসজি এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি এ নিয়ে।
লিগ ওয়ানে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে পিএসজির সময়টা ভালো যাচ্ছে না। বিশেষ করে শেষ সাত ম্যাচে বাজে সময়ই গেছে তাদের। সাত ম্যাচের মাত্র ৪টিতে জয় পেয়েছে ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা। বাকি তিন ম্যাচের দুটিতে হার ও একটিতে ড্র। সব মিলিয়ে ১৭ ম্যাচে ১১ জয়ে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তিন নম্বরে আছে পিএসজি।
টুখেলকে বরখাস্ত করার কারণের মধ্যে এটি একটি, তবে এটাই অন্যতম নয়। অন্যতম কারণটা টুখেলের জন্য হতাশারই। দলের দুই তারকা খেলোয়াড় নেইমার ও এমবাপ্পেকে নিয়ে মজা করায় বিপদ দাঁড়িয়ে গেছে তার সামনে।
স্পোর্টস ওয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টুখেল মজা করে বলেছিলেন, নেইমার-এমবাপ্পেদের মতো তারকা খেলোয়াড়কে সামলানো বেশ কঠিন। তাদেরকে খুশি রাখার কাজটি সহজ নয়। যে কারণে নিজেকে কোচের চেয়ে বেশি রাজনীতিবিদ মনে হয়। এটাতে ক্লাব কর্তৃপক্ষ চটেছে। এ কারণে তাকে না রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
যদিও টুখেলের দাবি তার কথার ভুল অনুবাদ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি বলিনি যে খেলার চেয়ে রাজনীতি বেশি মনে হয় বা আমি অনুশীলনের মজা হারিয়েছি। ওরা সম্ভবত ভুল অনুবাদ করেছে। আবার ভিডিও সাক্ষাৎকারটা দেখুন। আমি বলেছি পিএসজি অনন্য এবং আমার জন্য বেশ বড় চ্যালেঞ্জ। এটা সব সময়ই তাই ছিল। আমি এ চ্যালেঞ্জ পছন্দ করি এবং কোনো কিছুই বদলায়নি।’ কিন্তু ভুল ভাঙানোর আগেই চাকরি হারাতে হলো তাকে।
পিএসজির নতুন কোচ পচেত্তিনো!
টমাস টুখেলের বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পর কে হচ্ছেন তার উত্তরসূরি? উত্তরটা সম্ভবত পিএসজিরই সাবেক আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় মাউরিসিও পচেত্তিনো। ‘বিবিসি’ এবং ‘আরএমসি স্পোর্ট’ এমনটাই দাবি করেছে।
দুই সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহেই টটেনহামের সাবেক কোচ পচেত্তিনোর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করে দিয়েছিল পিএসজি। দুই পক্ষের মধ্যে নাকি এখন চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। খুব শিগগিরই চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) স্ত্রাসবুরকে ৪-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই ৪৮ বছর বয়সী জার্মান কোচ টুখেলকে বরখাস্ত করা সিদ্ধান্ত নেয় পিএসজি কর্তৃপক্ষ। যদিও ক্লাবের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে ক্লাবের খেলোয়াড়দের নাকি পচেত্তিনোর ব্যাপারে নিশ্চিত করা হয়েছে।
২০১৮ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর পিএসজিকে ফরাসি লিগ ওয়ানের ৩টি শিরোপা জেতান টুখেল। এছাড়া তার অধীনে ফ্রেঞ্চ কাপ এবং ফ্রেঞ্চ লিগ কাপও জিতেছে ফরাসি জায়ান্টরা। পিএসজি নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালেও উঠেছিল তার কোচিংয়েই। যদি ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ১-০ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের।
এই মৌসুম শেষেই সাবেক বরুশিয়া ডর্টমুন্ড কোচ টুখেলের সঙ্গে পিএসজির চুক্তির মেয়াদ শেষ হতো। ২০১৮ সালের মে’তে স্প্যানিশ কোচ উনাই এমেরির বিদায়ের পর দুই বছরের চুক্তিতে দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি। পরে ২০১৯ সালের মে’তে চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। কিন্তু সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিদায়ঘণ্টা বাজলো তার।
চলতি মৌসুমে দলের অধারাবাহিক পারফরম্যান্স, ফ্রেঞ্চ লিগে তৃতীয় স্থানে অবস্থান এবং ক্লাবের কাতারি মালিকপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণেই চাকরি হারালেন টুখেল। জার্মান সংবাদমাধ্যম ‘বিল্ড’ অন্তত এমনটাই দাবি করেছে। ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ক্লাবের দুই মহাতারকা নেইমার ও এমবাপ্পেকে নিয়ে মজা করার কারণেই বিপাকে পড়েছেন জার্মান কোচ। যদিও টুখেল নিজে বিষয়টি মানতে রাজি নন। তার দাবি, তার মন্তব্যের ভুল অনুবাদ করে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
লিগ ওয়ানের এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ১৭ ম্যাচ খেলে ১১ জয়, ২ ড্র এবং ৪ হারে পয়েন্ট তালিকার তিনে নেমে গেছে পিএসজি। যদিও শীর্ষে থাকা লিঁওর সঙ্গে তাদের পয়েন্টের পার্থক্য মাত্র ১। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিলের পয়েন্ট আবার পিএসজির সমান। তবে গোল পার্থক্যের কারণে পিছিয়ে পিএসজি। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগে তাদের অবস্থান বেশ নড়বড়ে হয়ে গেছে। এসব কারণ ছাড়াও ক্লাবের পরিচালকদের সঙ্গেও টুখেলের সম্পর্ক ভালো নয়। সবমিলিয়েই তাকে বিদায় নিতে হলো।
অন্যদিকে পচেত্তিনোর অধীনে ২০১৯ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে খেলেছিল ইংলিশ জায়ান্ট টটেনহাম। ফাইনালে তারা লিভারপুলের কাছে হেরে যায়। গত কয়েক মাস ধরেই পিএসজির সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। এই ক্লাবের হয়েই ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত খেলেছেন তিনি।
২০১৯ সালের নভেম্বরে টটেনহাম থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর থেকেই বেকার বসে আছেন পচেত্তিনো। সাউদাম্পটনের দায়িত্ব ছেড়ে ২০১৪ সালে স্পার্সদের দায়িত্ব নেন তিনি। টটেনহামে নিজের প্রথম মৌসুমেই দলকে লিগ কাপের ফাইনালে তোলেন তিনি। এরপর তার অধীনে দলটি দু’বার প্রিমিয়ার লিগের তৃতীয় এবং ২০১৭ সালে রানার্সআপ হয়।
Posted ১১:১৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta