নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় টইটং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতীক পেতে মরিয়া হয়ে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন সরকারী চাল আত্মসাতের অভিযোগ চেয়ারম্যান পদ হতে বহিস্কৃত জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠায় তাকে টইটং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক পদ থেকেও বহিস্কার করা হয়েছে। টইটং ইউনিয়ন থেকে এবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীগের একাধিক নেতাকর্মী ভোট গ্রহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তারাও নৌকা প্রতীক পেতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। জাহেদ চৌধুরী নৌকা পেতে মরিয়া হয়ে উঠায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের তৃণমুলের নেতাকর্মী। ইতিমধ্যে শূন্য হওয়া পেকুয়ার টইটং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তপসীল ঘোষনা করেছেন নির্বাচন কমিশন।
আগামী ১১ এপ্রিল অনুষ্টিত হবে নির্বাচন। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে লড়তে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন অনেক রাজনৈতিক ও সমাজকর্মীরা। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহন না করার ঘোষনা করায় এককভাবে প্রভাব বিস্তার করে পূনরায় চেয়ারম্যান হওয়ার মেরুকরন কষেছেন বিতর্কিত ও বহিস্কৃত চেয়ারম্যান জাহেদ চৌধুরী। ইতিমধ্যে তিনি জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে ধর্নাও দিচ্ছেন এমন অভিযোগ তৃনমুল নেতাকর্মীর।
গত বছরে জুলাই মাসে করোনা ভাইরাসের কারনে কর্মহীন মানুষের সরকারী দেওয়া ত্রান (চাল) চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বিতরন না করে নিজেই লুটপাট করেছেন। জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাহ জাহান আলী সরেজমিন তদন্তে চাল চুরির অভিযোগ প্রমানিত হয়।
সাবেক জেলা প্রশাসক কামাল হোসেনের নির্দেশে পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে টইটং ইউপির চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরকারী ত্রান চুরি করে বিক্রির অভিযোগে পেকুয়া থানায় মামলা দায়ের করে।
পরবর্তীতে চাল চুরি ও মামলার কারনে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে জেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারন সম্পাদক মুজিবুর রহমান মেয়র অভিযুক্ত জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে টইটং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ হতে বহিষ্কার করেন। বহিস্কার আদেশ এখনো পর্যন্ত বলবৎ আছে।
অন্যদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় ও টইটং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ হতে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার ফলে চেয়ারম্যান পদটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচনের নির্দেশনা দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়।
দীর্ঘ আটমাস পরে সেই কাঙ্খিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ এপ্রিল। এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে আনন্দভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে ওই ইউপিতে। আবার অজানা আতংকও বিরাজ করছে জনগনের মাঝে। দল ও সরকার হতে বহিস্কৃত আলোচিত সমালোচিত জাহেদ চৌধুরী নৌকা প্রতীক পেতে এক পায়ে মরিয়া।
ধর্না দিচ্ছে জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে। তদবির ও লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও। টাকার জোরে ভাগিয়ে আনতে পারে নৌকা এমন কথাও মানুষের মুখে মুখে। তাকে দল নৌকা প্রতীক দিলে আওয়ামীলীগের চরম মান ক্ষুন্ন হবে বলে জানিয়েছেন পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী জুবাইদুল্লাহ লিটন।
উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রয়াত সাবেক সভাপতি শাহাব উদ্দিন ফরায়েজী হত্যার ঘটনায় কপাল খোলে যায় জাহেদ চৌধুরীর। ওই হত্যাকে পুঁজি করে তিনি চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। ওই সময়ে শক্ত প্রতিদ্বন্ধী সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ বিএকে ভোটের আগেরদিন রাতে অপহরন করে। শহীদুল্লাহ নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে মুকুটটা নিজের কব্জায় নিয়ে আসে।
স্থানীয়রা জানায়, চেয়ারম্যান থাকাকালে দলের প্রভাব কাটিয়ে নিরীহ জনগনের জমি দখল, পাহাড় দখল, চাদাবাজী সহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে যান এবং টইটং এলাকায় রাজ রাজত্ব কায়েম করেন জাহেদ চৌধুরী। বালু বিক্রি, সামাজিক বনায়নের গাছ পাচার, বালুভর্তি গাড়ি থেকে চাঁদা আদায়, নিরহ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, পাহাড়ের মাটি বিক্রি, অস্ত্রদিয়ে জেলে পাঠানোসহ পাহাড় সমান অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এমপি সাহেবের বিশ্বস্থ ও আস্থাভাজন হওয়ার সুবাধে এসবের কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। নীরবে সবকিছু সহ্য করতে হয়েছে টইটংয়ের জনগনকে। পাহাড়ী জনপদ হওয়ার সুযোগে বাহিনীর জন্ম দিয়ে প্রায় ১০০ঃ একর সরকারী বনভূমি জবর দখল করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তার গোল ঘরে বন্দী করে অনেককে শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগও অহরহ। দা বাহিনী গঠন করে ত্রাস সৃষ্টি করে পুরো টইটং ইউনিয়নের মানুষকে জিম্মি করে রাখে। দা-বাহিনীর সদস্যরা ছিল ভয়ংকর। তাদের হাতে খুন হয়েকে অনেকে। তবে আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে এ বাহিনীর পরিচালনা করতেন তিনি নিজেই। এক কথায় টইটংয়ে রাম রাজত্ব চলে তার।
বর্তমানে নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশী চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল্লাহ বিএ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুবাইদুল্লাহ লিটন, মেহেদী হাসান ফরায়জী, মাস্টার জামাল হোসেন বলেন, সেই পূর্বের ন্যায় টইটং জনপদে আবারও আতংক ও ত্রাস সৃষ্টির আলামত পাচ্ছি। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
গত জোট সরকার আমলে মিথ্যা মামলায় কারান্তরীন হয়েছিলেন জুবাইদুল্লাহ লিটন। একটি মামলায় তার সাজাও হয়েছিল। লিটন বলেন, তিনি দীর্ঘ সময় জাহেদ চৌধুরীর রোষানলে শিকার হয়েছেন। জাহেদ চৌধুরী দলকে ডুবিয়েছেন এবং দলের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারন জনগনকে হয়রানি করে অর্থ আদায় করে দলের ইজ্জতের চরম ক্ষতি করেছেন। দল তাকে আবার মনোনয়ন দিলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।
পাহাড় দখল, জমি দখল, চাল চুরি,বিচার আর ভিজিডি ব্যবসা সহ অনেক অনিয়ম করেছেন বিধায় আজ দল তাকে বহিষ্কার করেছেন। বহিস্কৃত নেতা মনোনয়ন পাবে না এটা সকলের নিশ্চিত।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য টইটং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।
Posted ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৭ মার্চ ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta