নাজিম উদ্দিন, পেকুয়া :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় চাঞ্চল্যকর জয়নাল আবেদীন হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নে আইনশৃৃৃৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে।
রবিবার (২ মে) থেকে ওই ইউনিয়নে থেমে থেমে ঘটনা সংঘটিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হত্যাকান্ডকে ঘিরে ওই ইউনিয়নে আতংক ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আসামীদের বাড়িঘর ভাংচুর ও মালামালও লুট করা হচ্ছে। উদ্বেগ ও আতংক বিরাজ করায় ওই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
প্রতিপক্ষের বাড়ি ঘরে হামলা ও তান্ডব চলমান থাকায় যে কোন মুুহুর্তে বড় ধরনের নাশকতারও শংকা করছেন স্থানীয়রা। বাড়ি ঘরে হানা দিয়ে একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপ ব্যাপক লুটপাটে জড়িয়ে পড়েছে। গত ৪ দিনের ব্যবধানে মগনামায় অগ্নিসংযোগ বাড়ি ভাংচুর ও ব্যাপক লুটতরাজ হয়েছে।
ভীতি ও আতংক ছড়াতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির ইশারায় ওই সন্ত্রাসী গ্রুপ এখন মারমুখী হয়েছে। ধরপাকড় ও হয়রানি এড়াতে মামলার আসামীরাসহ স্বজনরা এলাকাছাড়া হয়েছে। এ ছাড়াও হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক গ্রেপ্তার ভয়ে শত শত মানুষ গ্রাম ছাড়া হয়েছে। মূলত মগনামায় এখন গ্রামে গ্রামে পুরুষ সদস্য নেই বললেই চলে। পুলিশ হত্যাকান্ডের ঘটনার পর থেকে ব্যাপক তৎপর হয়েছে।
পুলিশ সদস্যরা মগনামা ইউনিয়নে টহল জোরদার করেছে। আসামীদের খোঁজতে পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশী জোরদার করে। তবে স্থানীয়দের অভিমত পুলিশের ব্যাপক বাড়ি তল্লাশীর কারনে মানুষের মাঝে এক ধরনের ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। মামলায় আসামী হয়েছেন ৩২ জন।
এ ছাড়াও অজ্ঞাত আরও ১০ জনসহ ৪২ জনকে আসামী করা হয়েছে। অজ্ঞাত থেকে যে কেউ আসামী হওয়ার ভয় পেয়ে সাধারন মানুষও বাড়ি ছাড়া হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশ ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান দিচ্ছে। হত্যাকান্ডের ঘটনার পর থেকে মগনামায় কয়েকটি বাড়ি থেকে অন্তত ৮/১০ টি গরু ছাগল লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, মামলার পর থেকে কিছু দুষ্কৃতিকারী বাড়ি থেকে আসামীদের গরু ছাগল নিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও হারিয়ে ফেলেছে।
মামলার আসামি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মকছুদ আহমদের ছোট ভাই মোজাম্মেল জানায়, গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে একদল অস্ত্রধারী আমার বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় তারা তিনটি গবাদিপশু (গরু) লুট করে নিয়ে। একইভাবে আসামি রেজাউল করিমের বাড়ি থেকে চারটি গরু ও কয়েটি ছাগলও নিয়ে যায়।
মকছুদের চিংড়িঘেরের বাসা ও কলোনি ভাংচুর ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। মামলার ১নং আসামি মগনামা ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী বাবুলের বাড়ি ব্যাপক ভাংচুর ও গুলিবর্ষন করে। একইভাবে আ’লীগকর্মী আমির হোসেন ভুলুর বাড়িতে তান্ডব চালানো হয়েছে।
মগনামা ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি মো.খাইরুল এমান জানায়, হত্যাকান্ডকে পুঁজি করে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়িতে গিয়ে তান্ডব,লুটপাট চালানো হচ্ছে। আমি মগনামাবাসির জানমালের নিরাপত্তার জন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবী জানায়। এই অস্ত্রের উৎস কোথায় এবং এদের গডফাদার কে সেটি বের করতে হবে।
সুত্র জানায়, নিহত জয়নাল আবেদীন ছাত্রদল ও পরবর্তীতে যুবদলের ইউনিয়ন ও উপজেলার শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ছিলেন। তিনি আবার চেয়ারম্যান ওয়াসিমের বিশ্বস্থ লোক ছিলেন।
২ মে রবিবার দুবৃর্ত্তরা মুখোশ পরিহিত অবস্থায় রাত সাড়ে ৮ টার দিকে জয়নাল আবেদীনকে গুলি ছোড়ে ও কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয়রা জানান, আবু ছৈয়দ গং ও জয়নাল আবেদীন গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিল। তবে তারা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। জয়নাল হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৩২ জনকে নাম উল্লেখ করে আসামী করে।
এদের মধ্যে ২২ জন ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের মাঠের নেতা-কর্মী। ওই হত্যাকান্ডে আ’লীগের দলীয় কিছু নেতা-কর্মীকে আসামী করা নিয়ে পেকুয়াসহ কক্সবাজার জেলায় ব্যাপক প্রতিবাদ ও নিন্দা দেখা দিয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের অহেতুক হত্যা মামলায় জড়ানোর প্রতিবাদে কক্সবাজার জেলা আ’লীগ সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
৬ মে বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। এ সময় লিখিত বক্তব্যে জেলা আ’লীগ সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান বক্তব্য দেন। জেলা আ’লীগ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে হত্যা মামলায় জড়িয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। জেলা আ’লীগ ওই হত্যাকান্ডের বিষয়ে একটি তদন্ত টীম গঠন করেন। শুক্রবার ৭ মে জেলা আ’লীগের ওই টীমটি মগনামায় পরিদর্শনে যাবেন।
Posted ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ মে ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta