নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(২৪ ফেব্রুয়ারী) :: পেকুয়ায় কাল্পনিক ঘটনায় মামলার আসামী হলেন শিক্ষক ও বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রসহ ১১ জন। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে জজ আদালত ও মহামান্য হাইকোর্টে মামলা বিচারাধীন।
চুড়ান্ত রায়ে আদালত শিক্ষক পক্ষকে জমির দখল হস্তান্তরে আদেশ দেয়। এ দিকে বিরোধীয় জমির আধিপত্যকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পেকুয়া থানায় একটি মামলা রুজু করে।
তবে স্থানীয় সুত্র নিশ্চিত করে মামলায় উল্লেখিত মতে কোন ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়নি এলাকায়। এমনকি মারধর ও লুটপাটের ঘটনাও সম্পূর্ন কাল্পনিক। এ কাল্পনিক ঘটনায় আসামী হয়েছেন পেকুয়া আনোয়ারুল উলুম আলিম মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক(ইংরেজী) রুহুল কাদের। তিনি মামলার প্রধান আসামী। গত ২০ ফেব্রুয়ারী পেকুয়া থানায় একটি মামলা রেকর্ড হয়।
যার নং ০৭/১৮। পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামার কাছিম আলীর ছেলে জাকের হোসাইন বাদী হয়ে মামলায় ১১ জনকে আসামী করে। ৫ নং ৬ নং ও ৭ নং আসামী ছাত্র। রিয়াজুল করিম ও মোহাম্মদ মোক্তাদি এ দুইজন বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র।
অপরদিকে ৭ নং আসামী হাসনাত শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্র বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারাও কাল্পনিক ঘটনায় এ মামলায় আসামী। অথচ এ তিনজন পড়ালেখায় ব্যস্ত। ১ জন কিশোর তাকেও আসামী করা হয়েছে।
সুত্র জানায়, ০৮.৮৪ শতক জমি নিয়ে নুরুল কবির গং ও সাইফুদ্দিন গংদের বিরোধ চলছিল। বিগত ১৫,২০ বছর যাবৎ এ নিয়ে আদালতে মামলা মোকদ্দমা চলমান।
স্থানীয় সুত্র জানায়, শিলখালীর পেঠানমাতবরপাড়ার নুরুল কবির গং মেহেরনামা মৌজার ওই সম্পত্তি ওয়ারিশসুত্রে প্রাপ্ত। এ সম্পর্কিত বিষয়ে কক্সবাজার ২য় সাবজজ আদালতে মামলা ছিল। ২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল আদালত চুড়ান্ত রায় দেয়।
দেওয়ানী ডিক্রী মুলে ওই জমি দখল বুঝিয়ে দিতে নুরুল কবির গংদের অনুকুলে আদেশ দেয়। সে সময় থেকে নুরুল কবির গং সন সন ওই জমিতে ফসল উৎপাদন করছিলেন। চলতি বুরো মৌসুমে জমিতে ধানের চারা রোপন করে নুরুল কবির গং। গত কয়েকদিন আগে নুরুল কবির গং জমিতে সার প্রয়োগ করতে যায়।
এ সময় মেহেরনামার কাছিম আলীর ছেলে মামলার বাদী জাকের হোসাইন বাধা দিচ্ছিলেন। তবে স্থানীয়দের বাধায় জাকের হোসেন নিরুৎসাহিত হন। এর ২ দিন পর পেকুয়া থানায় এ মামলা রেকর্ড করে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, জাকের হোসেন ও তার পিতা কাছিম আলীকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। তার বোন জোবাইদা বেগমকে ও মারধর করা হয়েছে। বাড়িঘর লুটপাট, নগদ টাকা ও মালামাল লুট করা হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করে গত ১২ ফেব্রুয়ারী বিকেলে আসামীরা এ সব করতে সক্ষম হয়। স্থানীয়রা জানায়, ওই দিন মেহেরনামায় এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ছরওয়ার আলম জানায়, জমির বিরোধ থাকতে পারে তবে আমাদের এলাকায় মারামারি লুটপাট ও ভাংচুরের বিষয়টি সম্পূর্ন অসত্য। জাকের হোসেন একজন মামলা বাজ। তার কোন স্বত্ত নেই। আমমোক্তারনামা নিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষক রুহুল কাদের জানায়, আমি শ্রেনীকক্ষে ছিলাম। আর ঘটনাত হয়নিও। এ ধরনের মামলায় একজন নিরপরাধ মানুষের প্রতি চরম অবিচার। আমি মনে করি এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। মানবাধিকারের চরম লংঘন।
পেকুয়া আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি এস,এম মাহাবুব ছিদ্দীকি জানায়, রুহুল কাদের আমাদের প্রতিষ্টানের শিক্ষক। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয় তিনি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। একজন ন্যায়পরায়ন ও অত্যন্ত মেধাবী সৎ শিক্ষক। কাল্পনিক ঘটনায় ১ নং আসামী করা হয়েছে। পুলিশের উচিত ছিল এ সম্পর্কিত বিষয়ে মামলার আগে তদন্ত করা। এটি একজন ভাল মানুষের প্রতি আইনের বরখেলাপ হয়েছে।
মেহেরনামা এলাকার জামাল হোসেন, তার স্ত্রী নুর খাতুন ও অপর মহিলা জন্নাত আরা জানায়, আমরা বাদীর চাচা ও চাচী। ৮০ বছর বয়স হয়েছে। হলফ করে বলছি এ ধরনের কোন ঘটনা এখানে হয়নি। জায়গার বিরোধ আছে জিন্নাত আলী গংদের সাথে শিক্ষক রুহুল কাদের গংদের। কেন জাকের মামলা করবে। তার বোনের বাড়িতে লুটপাট করার মত কি আছে ? উল্টো প্রশ্ন ছুড়েন তারা।
পেকুয়া সদর ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য মোহাম্মদ রিদুওয়ান জানায়, ওই দিন কোন ঘটনা আমার মেহেরনামায় সংঘটিত হয়নি। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি ঘটনার প্রমান দিতে পারলে এর দায় সাথে আমিও নেব। এটি ডাহা মিথ্যা ও কাল্পনিক ঘটনা। আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে এ ধরনের কাল্পনিক ঘটনা ও মামলায় মর্মাহত হয়েছি।
পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
Posted ১০:৫০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta