নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় এলও অফিসের সেই দালাল নাছিরের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে ওই দালালের বিরুদ্ধে জাল জালিয়তির গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপনে সরকার জমি অধিগ্রহণ করছে। ভূমির মালিকদের অনুকুলে জমির ম‚ল্য হস্তান্তর করা হচ্ছে।
এ দিকে পেকুয়ায় এলও অফিসের দালাল নাছির ফক্সি দলিল দিয়ে অধিগ্রহণ টাকা আটকিয়ে দেয়ার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মসজিদের একজন খতিব ওই দালালের বিরুদ্ধে গুরুতর ওই অভিযোগ উত্তাপন করেছেন।
সুত্র জানায়, বারবাকিয়া মৌজার বিএস ৮০০ খতিয়ানের ২৬১১ দাগের আন্দরে ০.০৬৭০ শতক জমি, বিএস ৩৬৬ খতিয়ান ও ৬৫৯৩ দাগ থেকে ১.৭৫ শতক এবং বিএস ৮৩৮,৪৭২৬ দাগের আন্দরে ০.০৬২০ শতক ও বিএস ৩৪৬ খতিয়ানের ২৬১৫,২৬০৮ দাগ থেকে ০.০২৬০ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ওই জমির উপর দিয়ে গ্যাস সঞ্চালন লাইন বহমান। ওই সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও এর ক্ষতিপ‚রণ অর্থ প্রাপ্তির জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভ‚মি অধিগ্রহণ শাখা থেকে মালিকদের অনুকুলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
সুত্র জানায়, বারবাকিয়া মৌজার ওই সম্পত্তির মালিক মোহাম্মদ হাসান শরীফ প্রকাশ মন্নানসহ ব্যক্তিদের বরাবর নোটিশ প্রেরণ করে। ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভ‚মি অধিগ্রহণ শাখা ওই নোটিশ ইস্যু করে। যার জারি নং ০১/২০১৯। অফিসিয়াল এওয়ার্ড নং ৭২।
ভ‚মি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক স্বাক্ষরিত নোটিশ মৃত ছালেহ আহমদের পুত্র হাসান শরীফ তার মা আনোয়ারা বেগমকে পৌছানো হয়েছে। এ দিকে সরকার গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপনে ভ‚মি অধিগ্রহণের ম‚ল্য ছাড় করেছেন। সুত্র জানায়, হাসান শরীফ গংদের ৬.৭৬ শতক জমির অধিগ্রহণ ম‚ল্য এখনো পাননি।
সরকার গ্যাসের জাতীয় জ¦ালানী চাহিদা মেটাতে বহি:বিশ^ থেকে কাঁচা গ্যাস আমদানী করছে। ওই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপনকাজ বাস্তবায়ন করছে। ২০১৭ সাল থেকে এর সমীক্ষা চুড়ান্ত হয়েছে।
২০১৯ সালের দিকে ভ‚মির মালিকদের অনুকুলে ক্ষতিপ‚রন অর্থ ছাড়করন করা হয়েছে। হাসান শরীফ ৬.৭৭ শতক জমির প্রকৃত মালিক। তাকে সরকার অধিগ্রহণ অর্থ প্রাপ্তির জন্য নোটিশও প্রেরণ করে। অভিযোগ উঠেছে, হাসান শরীফের অধিগ্রহণ অর্থ আটকানো হয়েছে।
নাছির উদ্দিন নামক দালাল অধিগ্রহণের টাকা কুক্ষিগত করতে প্রকৃত মালিক হাসান শরীফকে অর্থের ছাড় না দিতে এলএ অফিসে জটিলতা সৃষ্টি করে। তাকে পেকুয়ায় দালাল নাছির হিসেবে জানেন এবং চিনেন। এলএ অফিসের দালাল নাছির উদ্দিন হাসান শরীফের টাকা আটকিয়ে দিতে অধিগ্রহণ শাখায় বেশকিছু দলিল ও কাগজপত্র উপস্থাপন করেছে।
নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, প্রতিবেশী হাসান শরীফের অধিগ্রহণ টাকা আটকাতে ৪ টি দলিল জমা দিয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দালাল নাছিরের উপস্থাপিত দলিলসম‚হ ফক্সি। নি:স্বত্তবান ব্যক্তি থেকে এলএ অফিসের দালাল নাছির জমি রেজিস্ট্রি নেন। এমনকি বিভিন্ন নি:স্বত্তবান ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়ার অব এটর্নি নিয়ে ওই ব্যক্তি এলএ অফিসে এ সব জমা দেন।
যার প্রেক্ষিতে এলাকায় জায়গা জমির জটিলতা তৈরী হয়েছে। সম্পত্তিতে ফক্সি দলিলের ছড়াছড়িতে এলাকায় সংঘাত ও মারপিটও বেড়ে গেছে। পেকুয়া ও বারবাকিয়া মৌজায় নাছির উদ্দিনের অব্যাহত জাল জালিয়তিতে ভ‚মির মালিক গং অতিষ্ট হয়েছে। একজনের টাকা আরেকজনকে পাইয়ে দেয়ার অঙ্গীকার দিয়ে এলএ অফিসের কুখ্যাত দালাল নাছির উদ্দিন বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
জাল দলিল ও ফক্সি দস্তাবেজ উপস্থাপন করে নাছির উদ্দিন এখন হঠাৎ কোটিপতি। তার লাগামহীন দুর্ণীতি হয়রানিতে প্রকৃত ভ‚মির মালিকরা বিপর্যস্ত হচ্ছে। একজন আরেকজনের পিছুনে লাগিয়ে দেয়া তার কাজ। নকল খতিয়ান ও দলিল উপস্থাপন করাও তার কাজ পেকুয়ায়। নাছির উদ্দিন এখন মস্তবড় দালাল।
তিনি নিজকে এলএ অফিসের বড় দালাল পরিচয় দিতে অনেকটা গর্ববোধ করেন। টইটংয়ের নাপিতখালীর একজন বৃদ্ধ ব্যক্তির কাছ থেকে অধিগ্রহণ চেক কৌশলে নিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে ওই চেকের সব টাকা দালাল নাছির আত্মসাৎ করে। হাসান শরীফের কাছ থেকেও মোটা অংকের ঘুষ দাবী করে। তিনি সম্মত হননি। তাই ওই ব্যক্তির অধিগ্রহণ টাকা ছাড় দিতে অন্তরায় হচ্ছে।
এলএ অফিসের অসাধু কিছু কর্মকর্তাকে দালাল নাছির নিয়ন্ত্রন করে। এরাই নাছিরের জাল জালিয়তিতে নেপথ্যে থেকে সহায়তা দিচ্ছে। সরকার সারা দেশে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিচ্ছে। কিন্তু নাছিরসহ কিছু দালাল এখনো অধরা থেকে গেছে। ভ‚্ক্তভোগীরা প্রশ্ন করছেন আসলে এ নাছিরের এত ক্ষমতা কেন। তার খুঁটির জোর কোথায়।
হাসান শরীফ জানান, আমাকে অহেতুক হয়রানি করছে। সে কাগজপত্র কোথাও উপস্থাপন করতে পারেননি। পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এর কার্যালয়ে সালিশ হয়েছিল। সেখানে দলিল দস্তাবেজ উপস্থাপন হয়েছে। নাছির উদ্দিনের স্বত্তের পক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদেও এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। এলএ অফিসে সার্ভেয়ার সাইফুল ইসলাম চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদন দেয়ার দায়িত্ব দেন। গ্রাম আদালত আমাদের পক্ষে যৌক্তিকতা দেখিয়ে সালিশি রোয়েদাদ প্রচার করে। উপজেলা পরিষদ কার্যালয় থেকেও আমার পক্ষে রায় প্রচার করে। ৪ টি রায়ের সিদ্ধান্ত আমার পক্ষে রয়েছে।
এরপরও নাছির উদ্দিন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে টাকা ছাড় না দিতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। জমিও আমার দখলে রয়েছে। এ জমি আমরা যুগ যুগ ধরে ভোগ করছি। জমিতে আমি চাষা দিয়েছি। আমি জেলা প্রশাসক কক্সবাজার মহোদয় ও সরকারের অধিগ্রহণ কর্মকর্তাদের আহবান করছি আমাকে হয়রানি থেকে মুক্ত করুন। এ দালালের অত্যাচার থেকে আমিসহ পেকুয়াবাসীকে বাঁচান। আমি একজন মসজিদের ইমাম। আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।
Posted ৮:০৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৬ অক্টোবর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta