নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(৭ ডিসেম্বর) :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় এবার মুক্তিযুদ্ধের জমি দখলে নিল বিএনপির সেই নেতা নুরুল আবছার বদু। দীর্ঘ ৪০ বছরের ভোগ দখলীয় ওই জমি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও এ মুক্তিযুদ্ধা খরিদ সুত্রে মালিক। ওয়াসিলা প্রাপ্ত হয়ে ওই জমি চাষীদের লাগিয়ত করছিলেন।
সম্প্রতি ৩০ শতক জমি দখলে নিল জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি পেকুয়া উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি ও রাজাখালী ইউনিয়নের বদিউদ্দিনপাড়া গ্রামের মৃত কাছিম আলীর ছেলে উপকুলের এক সময়ের মুষ্ট ওয়ান্টেড ও সাগরের জলদস্যু নুরুল আবছার প্রকাশ বদু ডাকাত। রাজাখালী মৌজার বিএস ৭৭১ খতিয়ান ও বিএস ৮৩৫২ দাগের ওই ৩০ শতক জমি দখল নিতে ব্যাপক ভীতি ছড়ায়।
দাগী ও স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী জড়ো করে রাজাখালীর ইউপির সাবেক সদস্য ও বিএনপি উপজেলার নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের এ নেতা এ জমি সম্প্রতি দখলে নেয়। জমির মালিক রাজাখালী ইউনিয়নের ছড়িপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযুদ্ধা মাষ্টার মোহাম্মদ হোসাইন পেকুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ পৌছায়।
এ সময় ওই মুক্তিযুদ্ধা নিজের জানমাল বিপন্ন হওয়ার সংশয় প্রকাশ করে তার লিখিত অভিযোগটি পেকুয়া থানায় সাধারন ডায়েরী হিসেবে গণ্য করতে আর্জিতে জানায়। সুত্র জানায়, জমির মালিক মোহাম্মদ হোসাইন একজন মুক্তিযুদ্ধা। দেশ বিভক্তির সময় তিনি সংগ্রামের উত্তাল দিনগুলিতে দেশ ও মাতৃকার জন্য পাকিস্থানী বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। সে সময় থেকে স্বাধীনতার পক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী রাজনীতিতে জড়িত। তিনি রাজাখালী ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক কমিটিতে আহবায়ক পদে ছিলেন।
পেকুয়া উপজেলা আ’লীগেও দায়িত্বশীল পদে ছিলেন। মিছিল মিটিংয়ে তার সরব উপস্থিতি এ রাজনীতিকে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরী করে। তিনি এ ইউনিয়নের সুন্দরীপাড়া জামাল মেহের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
এক সময় রাজাখালীতে জনপ্রতিনিধি ছিলেন। ইউপির মেম্বার ছিলেন বিপুল ভোটে নির্বাচিত। বর্তমানে বয়োজৈষ্ট্য এ রাজনীতিবিদের ৩০ শতক জমি নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উপকুলের এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী নুরুল আবছার বদুর নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষকের জমিতে আধিপত্য তৈরী করে। নুরুল আবছার বদু প্রচন্ড ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। রাজাখালীতে তার পেশী শক্তির বলয়ে সাধারন মানুষের জীবন প্রায় অতিষ্ট। গত ৩ মাস আগে বদু আরো আলোচিত হন।
৭ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যকে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। চট্রগ্রামের পটিয়া থেকে তারা মাছ ধরতে রাজাখালী পেচু মিয়ার বাড়িতে আসছিলেন। এ সময় মাছ চুরির অপবাদে এদের মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের দেবী দুর্গাকে নিয়ে অযাচিত মন্তব্য ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। এদের মাথা ন্যাড়া করে। পেকুয়া থানায় মামলা হয়েছে।
এ ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় দেখা দিয়েছিল। ওই ব্যক্তি প্রচন্ড হিংস্র। রাজাখালীতে ভোলার টেক ও কুতুবদিয়া চ্যানেলের মোহনায় তার একক আধিপত্য বিরাজ করছিল। বর্তমানে ক্ষমতা ও কোটি কোটি টাকায় তার আধিপত্য আরও দ্বিগুন হারে বেড়ে গেছে। গত ইউপি নির্বাচনে নুরুল আবছার বদু চেয়ারম্যান পদে ভোট করে। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর জন্য তার নাম ছিল শীর্ষে।
অবশেষে প্রতীক বরাদ্দে তিনি আনোয়ার হোসেন সিকদারের সাথে পেরে উঠেননি। মনোনয়ন দৌড়ে তিনি ধানের শীষ প্রতীক পাননি।
তার বিরুদ্ধে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, বাঁশখালী ও পেকুয়া থানায় প্রচুর মামলা ছিল। তার মামলার খতিয়ান প্রায় ২ ডজনের বেশী হবে। তবে বহু মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে।
বর্তমানে পেকুয়া থানায় ফৌজধারী দন্ডবিধির জটিল ধারায় জিআর ১৬/১৮, জিআর ১৩/১৫, জিআর ০৮/০৯ ও পার্বত্য জেলা বান্দরবন থাকায় ১৭/১০ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলাসহ আরও একাধিক মামলা রয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাষ্টার মোহাম্মদ হোসাইন জানায়, আমি মুক্তিযুদ্ধা। দেশ গঠনে শিক্ষকতার মত ব্রত পেশায় লিপ্ত রয়েছে। আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। দেশের প্রচলিত আইন ও বিচার বিভাগের প্রতি অসাধরন শ্রদ্ধাবোধ আছে। তবে ওই শীর্ষ সন্ত্রাসী আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। তার কোন দালিলিক কিংবা ওয়ারিশ সম্পর্ক নেই। কোন ধরনের দলিল দস্তাবেজ নেই তার। এরপরও পেশী শক্তির জোরে আমার ৪০ বছরের দখলীয় জমি দখলে নিয়েছে। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।
Posted ৪:৩০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta