নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(২৪ মে) :: পেকুয়ায় ইসলামিক রিসার্স সেন্টারের ফিল্ড সুপারভাইজার নুরুল ইসলাম সরকারসহ তিন জনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি মামলার শুনানী ২৮ মে। কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল কোর্ট এর ৩ নং বেঞ্চে ওই দিন শুনানীর দিনক্ষন ধার্য্য করা হয়েছে।
বাদী জন্নাতুল ফেরদৌস(২৮) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নং-০৩ কক্সবাজার বিচারিক আদালতে একটি নালিশি অভিযোগ দায়ের করে। আদালত সেটি আমলে নেয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর (সংশোধিত ২০০৩) এর ১০/৩০ ধারা মতে এ অভিযোগ রেকর্ড হয়। চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল এ সম্পর্কিত একটি অভিযোগ দায়ের করে।
মামলার বাদী জন্নাতুল ফেরদৌস ১ জন গৃহবধূ। তিনি ইসলামিক রিসার্স সেন্টার পেকুয়ার অধীন প্রাক প্রাথমিক গণশিক্ষা কেন্দ্রের একজন শিক্ষিকা। উপজেলার টইটং ইউনিয়নের জানআলী মোড়ায় রিসার্স সেন্টারের পরিচালনায় গণশিক্ষা কেন্দ্র ছিল। ওই কেন্দ্রে জন্নাতুল ফেরদৌস শিক্ষকতা করেন।
আর্জি সুত্রে জানায়, চলতি বছরের ২২ এপ্রিল ওই শিক্ষিকা প্রাক প্রাথমিক গণশিক্ষা কেন্দ্রের বই ও শিক্ষা উপকরন সংগ্রহ করতে ইসলামিক রিসার্স সেন্টার এর পরিচালকের কার্যালয়ে যায়।
এ সময় তার সাথে আরও ২/৩ জন যায়। তাকে ফিল্ড সুপারভাইজার নুরুল ইসলাম সরকার একা একটি কক্ষে নিয়ে যায়। এ সময় অপ্রাসংগিক কথা বার্তা বলতে থাকে। বই ও শিক্ষা উপকরন হস্তান্তর না করে ওই নারীর সাথে সময় ক্ষেপন করছিলেন।
এক পর্যায়ে নির্লজ্জভাবে অশ্লীল কুরুচীপূর্ণ যৌন উত্তেজক কথা বার্তা বলছিলেন। এমনকি ওই শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানি করছিলেন। এ সময় ওই নারী দ্রুত সটকে পড়তে চান। তাকে কুপ্রস্তাবসহ ব্যাপক কিল ঘুষি মারে। এ সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা এসে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।
এক পর্যায়ে ফিল্ড সুপারভাইজারের কার্যালয়ে তুমুল হট্রগোল দেখা দেয়। এ সময় মামলার দুই আসামী আবদুল কায়ুম ও আবদুল লতিফ পরিচালক নুরুল ইসলাম সরকারের পক্ষে নেয়। এমনকি তারা উল্টো ওই শিক্ষিকাকে এ সব না বলতে গালমন্দসহ হাকাবকা করে।
শিক্ষিকা জন্নাতুল ফেরদৌস এ সম্পর্কিত বিষয়টি ইসলামিক ফাউন্ডেশন কক্সবাজার পরিচালক সহ উর্ধতন মহলকে অবহিত করে। তিনি যৌন হয়রানির ন্যায় সংগত আইনী সহায়তা পেতে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালে নালিশি অভিযোগ দায়ের করে।
সুত্র জানায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পেকুয়ার ফিল্ড সুপারভাইজার নুরুল ইসলাম সরকার একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি। প্রাক প্রাথমিক গণশিক্ষা কার্যক্রমে ওই ব্যক্তি ব্যাপক দুর্নীতিতে লিপ্ত। তিনি একজন বর্বর জামায়াত সমর্থিত লোক। গণশিক্ষা কার্যক্রমে পেকুয়ায় ওই সংস্থার অধীনে শিক্ষক নিয়োগ দেয়।
অভিযোগ উঠে, শিক্ষক নিয়োগে তিনি মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। নিয়োগ পরীক্ষায় যে সব মেধাবী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ন হয় এদের মুল্যায়ন করা হয়নি। যারা টাকা দেয় তারা শিক্ষক পদে নিয়োগ পায়। পরীক্ষা ছিল আইওয়াশ। তবে যারা তাকে টাকা দেয় তারাই ওই পদে নিয়োগ পায়। তার অনুগত কিছু জামায়াত শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডারকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। তারা জামায়াত শিবিরের অন্ধ সমর্থক।
এমনকি কিছু শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছে তারা জামায়াত শিবিরের সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও রাজনৈতিক অনুসারী। মগনামায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে নাশকতা মামলার আসামীকে। যে সব শিবির ক্যাডার সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করছিলেন। রাজপথে সহিংসতা ও ভাংচুর চালায়। এ সব বর্বর জামায়াত শিবিরের ক্যাডার ও দাগী ব্যক্তিদের তিনি পদ বন্টন করেন।
রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী কর্মকান্ড সহ নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থক ও অনুসারীদের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়োগ দেয়। তার অনুগত ক্যাডাররা পেকুয়ায় ইসলামিক রিসার্স সেন্টারের হর্তাকর্তা। আ’লীগ সমর্থিত কোন শিক্ষক ওই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করেননি। তার এহেন কর্মকান্ডে খোদ ক্ষমতাসীন দল আ’লীগে টনক নড়ে।
এমনকি উলামালীগ ও পীর মশায়েখ কমিটি পেকুয়ায় তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। তাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওই পদ থেকে অপসারনসহ চাকুরী অব্যাহতি দিতে ক্ষমতাসীন দলের জেলা পর্যায়ের সভাপতি-সম্পাদক ও উপজেলার ক্ষমতাসীন দলের সকল স্তর থেকে লিখিত সুপারিশ উর্ধতন মহলে পৌছে।
উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ভারপ্রাপ্ত শাহনেওয়াজ চৌধুরী জানায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন জাতির জনক প্রতিষ্টা করছিলেন। পেকুয়ায় সকল কেন্দ্রে শিবির ক্যাডাররা ওই কার্যক্রমে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায়। নুরুল ইসলাম সরকার একজন বর্বর জামায়াত শিবিরের ক্যাডার। সে চায় এখানে এ ফাউন্ডেশনে জামায়াত পন্থীদের নিয়ে বলয় তৈরী করবে। আমরা এ সব মেনে নেব না। তার বিরুদ্ধে লিখিত সুপারিশ দিয়েছি। এ ধরনের মানুষকে এ রকম গুরুত্বপূর্ন পদ থেকে অপসারন করতে হবে। সে নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াত শিবিরের অনুগত ক্যাডার।
Posted ১০:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta