নাজিম উদ্দিন, পেকুয়া :: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় চিংড়ি প্রস্তাবের নামে ইজারার আবেদন করে সুকৌশলে ৪০ একর বা ১শ কানি সরকারী খাস জমি দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে চট্টগ্রামের ৪ প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পুরো পেকুয়া জুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকাও করছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহিরাগত ৪ ব্যক্তির নামে জনপ্রতি ১০ একর করে সর্বমোট ৪০ একর সরকারী খাস জমি ইজারা নেওয়ার জন্য চলতি বছরের মার্চ মাসের শুরুর দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন করেন চট্টগ্রামের ৪ প্রভাবশালী ব্যক্তি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ওই চার ব্যক্তির ইজারা প্রস্তাবের আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরনের জন্য পেকুয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিকট প্রেরণ করেন।
এরপর পেকুয়ার সহকারী কমিশনার ( ভূমি) সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পেকুয়া সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কাছে পাঠান।
জানা যায়, পেকুয়া ইউনিয়ন তহশিলদার রফিকুল ইসলাম গত এক সপ্তাহ পূর্বে চট্টগ্রামের ৪ ব্যক্তির নামে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের করিমদাদ মিয়ার জেটিঘাট এর উত্তর পশ্চিম পার্শ্বে ৪০ একর সরকারী লবন খাস জমিকে চিংড়ি জমি দেখিয়ে ইজারা প্রদানের জন্য পেকুয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিকট সুপারিশ করে প্রস্তাব প্রেরণ করেছেন।
পেকুয়া ইউনিয়ন তহশিলদারের প্রেরিত চিংড়ি প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার খরনা ইউনিয়নের চৌধুরী বাড়ির মৃত, নোমান চৌধুরীর পুত্র গোলাম সরওয়ার চৌধুরীর নামে উজানটিয়ার মৌজায় দিয়ারা ৪০/এ দাগের ১০ একর খাসজমি ২০১৮ ইংরেজী থেকে দখল দেখিয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করেন। যাহার প্রস্তাব নং ০১/ ২০২০-২১ইং।
একইভাবে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া পৌরসভার গোঁয়াজার পাড়া গ্রামের মৃত, আলী আহমদের পুত্র জসিম উদ্দিনের নামে একই মৌজায় দিয়ারা ৪০/বি দাগের ১০ একর চিংড়ি জমির ইজারা প্রস্তাবের প্রতিবেদন এসিল্যান্ডের কাছে প্রেরণ করা হয়। যাহার প্রস্তাব নং ০২/২০২০-২১ইং।
এছাড়াও চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার চরনদ্বীপ ইউনিয়নের বাটর পাড়া গ্রামের মৃত, আমানত আলীর পুত্র নজরুল ইসলামের নামে একই মৌজায় দিয়ারা ৪০/সি দাগের ১০ একর সরকারী খাস জমি চিংড়ি চাষের জন্য ইজারা প্রদানের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করেন তহশিলদার। যাহার প্রস্তাব নং ০৩/২০২০-২১ইং।
সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম বাজালিয়া গ্রামের মৃত, জহুরুল আলম চৌধুরীর পুত্র রায়হান মাহমুদ চৌধুরীর নামে একই মৌজার দিয়ারা ৪০/ডি দাগের ১০ একর সরকারী খাস জমি ইজারা প্রদানের জন্যও প্রস্তাব প্রেরন করেন পেকুয়া সদর ইউনিয়নের তহশিলদার। যাহার প্রস্তাব নং ০৪/২০২০-২১ ইং।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে ৪ ব্যক্তির নামে পেকুয়া সদর ইউনিয়ন তহশিলদার প্রস্তাব প্রেরণ করেছেন ওই ব্যক্তিগণ দেশের প্রভাবশালী একটি শিল্প গ্রুপের সাথে সংশ্লিষ্ট। ইতিপূর্বে ওই গ্রুপ মগনামার দক্ষিণাংশে প্রায় ৭ শত কানি জমি ক্রয় করে সাগর থেকে বালু উত্তোলন করে ভরাট করেছেন। মগনামায় ক্রয়কৃত জমির লোকেশন থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিনে উজানটিয়া মৌজায় বেড়িবাঁধের বাইরে বন বিভাগের সৃজিত প্যারাবনের পাশে সরকারী ৪০ একর খাস জমির প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তাদের।
মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যূৎ কেন্দ্রের পাশে হওয়ায় ওই জমি কৌশলে ৪ ব্যক্তির নামে ইজারার আবেদন করিয়ে জবর দখল করার জন্যও জোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে ওই গ্রুপের নিয়োজিত স্থানীয় প্রভাবশালী দালাল সিন্ডিকেট।
উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, উজানটিয়া ইউনিয়নে শত শত পরিবার ভূমিহীন রয়েছে।
উজানটিয়ার সরকারী খাস জমি চট্টগ্রামের লোকদের কেন ইজারা দেওয়া হবে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ওই ৪ ব্যক্তির নামে সরকারী খাস জমি ইজারা প্রদান বন্ধ করার জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে পেকুয়ার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) মৌখিক অভিযোগ করেছি।
এ প্রসঙ্গে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের তহশিলদার রফিকুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের যেকোন এলাকার নাগরিক সরকারী খাস জমি চিংড়ি চাষের জন্য ইজারা গ্রহনের জন্য আবেদন করতে পারে। সে হিসেবে চট্টগ্রামের ৪ ব্যক্তি উজানটিয়া মৌজায় ৪০ একর খাস জমি ইজারা পাওয়ার জন্য আবেদন করলে তাদের ইজারা প্রদানের সুপারিশ করে এসিল্যান্ডের কাছে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে সহকারী কমিশনার (ভুমি) মীকি মার্মার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া যায়নি।
Posted ৯:১৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta